রাজধানীতে হরতাল

সকাল সোয়া ৬টায় শনি আখড়ার বিশ্বরোড এলাকায় মহাসড়কে কয়েকটি গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হরতাল সমর্থকেরা।

এ সময় সেখানে কয়েকটি যানবাহন আটকে ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ এলে হরতাল সমর্থকেরা চলে যায়। কাঁচপুর এলাকায় দু’টি কাভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে হরতাল সমর্থকেরা। সকাল ৭টার দিকে বিশ্বরোডে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে হরতাল সমর্থকেরা। সকালে জামায়াত-শিবির আজিমপুর এলাকায় একটি মিছিল বের করে। পুলিশ সেখানে হামলা চালিয়ে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সকালে বাংলামোটর এলাকায় পরপর ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

সকাল সোয়া ৭টার দিকে মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা। এ সময় তারা একটি বাস ভাঙচুর করে। মিছিলটি শেওড়াপাড়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ হরতালকারীদের ছত্রভঙ্গ করে সেখান থেকে চার-পাঁচজনকে আটক করে।

৭টা ২০ মিনিটের দিকে মিরপুর ১০ নাম্বার গোল চত্বরে একটি বাস ভাঙচুর করে হরতালকারীরা। এ সময় তারা মিছিল করতে গেলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর মিরপুর সাড়ে এগারোতে একটি বাস থেকে নেমে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে হরতালকারীরা ওই বাসটি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ হরতালকারীদের ধাওয়া করে। ওই এলাকা থেকে আটজনকে আটক করে পুলিশ। হরতালের দিন সকাল সাড়ে ৬টা ও সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর মিরহাজিরবাগ এলাকায় পৃথক মিছিল থেকে একটি বিআরটিসি বাস ও সিটি করপোরেশনের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।

৭টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন লাগানো হয়। ৮টার দিকে সায়েদাবাদ এলাকায় আইডিয়াল স্কুলের সামনে একটি হিউম্যান হলারে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এর আগে একই এলাকায় একটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়।

সকাল পৌনে ৭টার দিকে মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেটের সামনে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করেন হরতাল সমর্থকেরা। সকাল ১০টার দিকে চিটাগাং রোডের কাছে শানারপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে ইসলামী ছাত্রশিবির।

জামায়াতের হরতালে অবরুদ্ধ বিএনপি অফিস

জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালকালে গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল অবরুদ্ধ। গতকালের হরতাল বিএনপি বা ১৮ দলের জোটগত কর্মসূচি না হলেও বিএনপি কার্যালয় সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখে র‌্যাব ও পুলিশ। যান ও জনশূন্য খাঁ খাঁ নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশ-র‌্যাব আর সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কার্যালয়ে যে কয়েকজন নেতাকর্মী আগে থেকেই ছিলেন তারা ছাড়া আর কাউকে সেখানে ঢুকতে ও বের হতে দেয়া হয়নি। কার্যালয়ের সামনে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতিও কম ছিল না।

জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির ও সাবেক আমিরসহ বিরোধী দলের সব আটক নেতাকর্মীর মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল ও জনদুর্ভোগ লাঘবের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর প থেকে গতকাল প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ২৭ জানুয়ারি এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পুলিশ এই কর্মসূচিতে কোনো অনুমতি দেয়নি। এরই প্রতিবাদে গতকাল হরতাল আহ্বান করে জামায়াতে ইসলামী।

এ দিকে সন্ধ্যার দিকে ইসলামী ছাত্রশিবির মুক্তাঙ্গন এলাকায় একটি মিছিল বের করে। বগুড়ায় শিবির নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এই মিছিলটি বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। সেখানে এনায়েত এবং শফিক নামের দুই শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে পুলিশের সাথে শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষ চলে। এ সময় শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।