স্মরণ- প্রফেসর মুহম্মদ আবদুল গফুর by ড. আ: ব: ম: সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী
আরবি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, প্রতœতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ের
পণ্ডিত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যভাষা এবং পরে আরবি ও ফারসি
বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রফেসর মুহম্মদ আবদুল গফুর। চট্টগ্রামের
পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদ গ্রামে ১৯৩১ সালের ১ জুলাই তার জন্ম। চট্টগ্রামের
জিরি কওমি মাদরাসায় দুই বছর অধ্যয়ন শেষে বন্দরনগরীর দারুল উলুম আলিয়া
মাদরাসা থেকে ১৯৩৯ সালে দাখিল, ১৯৪১ সালে আলিম ও ১৯৪৩ সালে ফাজিল পাস করেন।
১৯৪৫ সালে কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে ‘মমতাজুল মুহাদ্দিসিন’ উপাধি অর্জন
করেন। চট্টগ্রাম সরকারি ইন্টারমিডিয়েট (বর্তমান হাজী মুহসীন) কলেজ থেকে
১৯৪৭ সালে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে উচ্চমাধ্যমিক, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে আরবিতে বিএ
অনার্স, ১৯৫১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে এমএ এবং ১৯৬০
সালে পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে The Ghoris History,
Culture and Administration 535-612/1148-1215 (ঘোরি বংশের ইতিহাস,
সংস্কৃতি ও শাসন) শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি লাভ করেন। তিনি
মাদরাসার মতো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও বরাবর কৃতিত্বের
পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৫২ সালে ড. আবদুল গফুর পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের
অধীনে প্রতœতত্ত্ব বিভাগে যোগ দিয়ে ১৯৬৫ সালে সুপারিনটেন্ডেন্ট ও ১৯৭৩
সালে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক পদে উন্নীত হন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত করাচি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে, ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
প্রাচ্যভাষা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রফেসর পদে
উন্নীত হয়ে নবগঠিত আরবি ও ফারসি বিভাগের প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেন। ১৯৫৮ সালে জার্মানির Pre-History and Proto-History Congress,
১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সালে তেহরানে ইরানের শিল্পকলা ও প্রতœতত্ত্ব কংগ্রেস এবং ১৯৭৪
সালে প্যারিসের প্রাচ্যবিদদের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন।
প্রফেসর আবদুল গফুর আরবি, উর্দু, ফারসি ও ইংরেজি ভাষায় ছিলেন সুপণ্ডিত। তার লেখা ও প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থ হলোÑ ১. The Calligraphers of Thatta (১৯৬৮ ও ১৯৭৮) ২. Muslim Architecture and Art Treasure inPakistan(১৯৬৫) এবং ৩. Common Cultural Heritage of Iran andPakistan(১৯৬৯)। দেশী-বিদেশী জার্নালে তার ১৪টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার পর তিনি ১৯৯৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন।
No comments