নারী নির্যাতনের শেষ কোথায়? by আবদুর রহমান
বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় যেভাবে নারী
ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নারীর গায়ে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা দেখে আমার মনে হলো এ
বিষয় আমার কর্তব্যবোধ থেকে কিছু করা দরকার, লিখতে বসে কিছু পেপার অবলোকন
করলাম মাদারীপুরে সাত বছরের মেয়েকে বাঁশবাগানে নিয়ে প্রথমে গণধর্ষণ পরে
তাকে হত্যা করা হয়েছে।
দিনাজপুরের ১০ বছরের মেয়ে
দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী পরীক্ষা শেষে মিরপুরে বেড়াতে এসে স্থানীয় বখাটে
ছেলেরা প্রথমে ধর্ষণ করে পরে হত্যা করে। গাজীপুরে এমপির এপিএস তার বাসার
গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করে। মানুষের কাছে ধর্ষিত মুখ কী করে দেখাবে ভেবে লজ্জায়
গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রী হোস্টেলে গভীর রাতে ছাত্রলীগের
নেতারা মাতাল অবস্থায় প্রবেশ করেন।
ইডেন ছাত্রীর ওপর এসিড নিক্ষেপকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন শিরোনামে মনির নামের এক নরপিশাচ যেভাবে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে তার গায়ে এসিড নিক্ষেপের ফলে যেভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে তা দেখে কোনো বিবেকবান মানুষ বসে থকাতে পারে না। এ অবস্থা দেখে তার ভাই যেভাবে হাউমাউ করে কাঁদলেন তা দেখে কোনো সিমারও এ ঘটনার বিচার না চেয়ে চুপ থাকতে পারে না। চৌদ্দগ্রামে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বোনকে গণধর্ষণ। থানায় মামলা নেয়নি। গ্রাম সালিসির মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা। চট্টগ্রামে গণধর্ষণের শিকার কিশোরী তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। চট্টগ্রামে খুলশী থানায় ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় ১৫ বছরের এক কিশোরী এপেক্স ফিশারিজ নামে একটি কারখানায় চাকরি করত। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে তাকে নিয়ে গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতকারীরা। খুলনায় পূর্ব বানিয়াখামার শহিদুল নামের এক লোক তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। অসুস্থ ও অচেতন হয়ে পড়লে প্রথমে জেনারেল হাসপাতাল ও পরে খুলনা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফিরলে ঘটনা বলে দেয়। বিষয়টি পরিবারের ইজ্জতের জন্য প্রথমে বলতে চায়নি। পরে এলাকাবাসী শহিদুলকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে থানায় দেয়। সদর থানার ওসি বলেন, আটক শহিদুলকে থানায় রাখা হয়েছে ও মামলা হয়েছে।
জনগণ ধরে থানায় দিয়েছে বলে থানায় জামাই আদরে আছে। সন্ত্রাসীরা মেয়েদের ভুলানোর জন্য মিষ্টি কথা বলে ভালোবাসার ছলনায় আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে প্রেমের অফার দেয়। তাতে রাজি না হলে মরে যাবে বলে হুমকি দেয়। লোভনীয় খাবার অফার করে, কখনো জামা কাপড়, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান উপহার পাঠায় এতে অনেক সময় অল্পবয়সী মেয়েরা ঠিক থাকতে পারে না। এসব অফারেও রাজি না হলে মেয়েটিকে মেরে ফেলাসহ গায়ে এসিড নিক্ষেপ করার হুমকি দেয়। পরিবারের লোকেরা ভয়ে মুখ খোলে না। আবার অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক মানুষকে জানাতে চায় না ইজ্জতের ভয়ে। আবার অনেক সময় আশপাশের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার কোনো বিচার না পাওয়ায় এমনকি থানায় মামলাও নেয় না। আর ধর্ষিতা গরিব হলে ধর্ষকের কোনো চিন্তা নেই। থানায় বা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে নেয়। আবার অনেক সময় ধর্ষক যদি প্রভাবশালী হয় তবে তো কথাই নেই। ধনীদের ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হলে তো কোনো কথাই নেই। ধর্ষিতা হয়েও কোনো কথা বলতে পারে না। কথা বললে ধর্ষিতাসহ তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়। তাদের অনেক সময় থানায় কেসও নেয়া হয় না। কেস নিলেও কেস তুলে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। অনেক সময় পুলিশের সহযোগিতায় কেস তুলে নেয়। পুলিশ ধর্ষিতাকে বা তার পরিবারকে এক প্রকার ইঙ্গিতে হুমকি দেয় যদি কেস তুলে না নাও তবে ওরা প্রভাবশালী ওরা তোমাদের শেষ করে দেবে। তোমরা ওদের সাথে পারবে না। তার চেয়ে কেস তুলে নাও। অবশেষে কেস তুলে নেয়। আবার অনেক সময় কেস নিলেও কিছু দিন পর কেসের রিপোর্ট হয় উল্টা, ধর্ষিতা বিচার পায় না, বিচার হয় দীর্ঘ সূত্রতা। এমনকি মেয়েরা পুলিশের কাছে বিচার চাইতে এসে ধর্ষিত হয়ে ফিরে যায়। কোর্টে বিচার চলাকালীন জনসম্মুখে আইনজীবীরা এমন এমন প্রশ্ন করেন যা নারীদের লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন তারা আর কোর্টের বারান্দায় আসে না। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে ঘরে বসে নির্জনে তার পরিবারসহ গুমরে গুমরে কাঁদেন।
নারী জাতি মায়ের জাতি তাদের ওপর এ অমানুষিক নির্যাতন আল্লাহ সইবে না। অতীতে যখনই নারীদের সম্ভ্রমের ওপর কেউ ঝাঁপিয়ে পড়েছে তখনই আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছিল। আজ আমরা ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করছি না। আমাদের কি মা নেই, বোন নেই ও মেয়ে নেই? আজ আপনার মেয়ের ওপর এ ধরনের অত্যাচার হচ্ছে না কাল যে হবে না তার নিশ্চয়তা কী? আজ যেভাবে মেয়েদেরকে ধর্ষণের প্রতিযোগিতা চলছে। এসিড নিক্ষেপের কারণে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঝলসে যাচ্ছে, উত্ত্যক্ত সহ্য করতে না পারার কারণে যেসব মেয়ে আত্মহত্যা করছে, ৭-১২ বছর বয়সের ছোট শিশুদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। সে যদি আমার মেয়ে বা বোন হতো তাহলে আমি কী করতাম। তবে আমি হলফ করে বলতে পারি যে প্রতিদিন পেপার খুললে মেয়েদের গণধর্ষণ, নির্যাতন, এসিড সন্ত্রাসের উৎসবের ঘটনা দেখতে পাই এ জঘন্যতম অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে আপনার আমার মেয়ে ও বোনের ওপরও এর প্রভাব পড়বেই। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে ভাইকে ছুরিকাঘাতসহ হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না এ স্বাধীন দেশে। এ কোন অসভ্য বর্বরতার চিত্র আমরা দেখছি। এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ যারা করে তাদের কুলাঙ্গার বাবা-মাও ছেলের যাতে কোনো বিচার না হয় তার জন্য অনেক টাকা খরচা করেও বাঁচানোর চেষ্টা করে। আপনি মনে রাখবেন এ কলঙ্ক যেমন আপনার তথা সব বাঙালি জাতির। পুলিশের কাছে মেয়ে উত্ত্যক্ত হওয়ার ঘটনা নালিশ করলে পুলিশ বলে লিখিত দেন। লিখিত দিলে আরো বেশি উত্ত্যক্ত বেড়ে যায় এবং পরিবারের অন্যান্যের ওপরও হুমকি আসে। আমি পুলিশের সবাইকে দোষারোপ করব না, অনেক ভালো পুলিশ অফিসার আমি দেখেছি। সমাজের অপরাধকারীর অপরাধ নির্ণয় এবং প্রতিকার পুলিশের হাতে, নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার দায়িত্বও পুলিশের হাতে কিন্তু পুলিশ নীরব ভূমিকায়।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে সংগঠন চৌদ্দগ্রাম থানায় সংঘটিত ভাইকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে দুই বোনকে গণধর্ষণ শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেও পুলিশ নীরব ভূমিকায় ছিল মর্মে জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট করলে এক দ্বৈত বেঞ্চে ওই থানার ওসিকে সশরীরে কোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে তার ভূমিকা কী ছিল তার ব্যাখ্যা চেয়ে আদেশ জারি করেছেন। অনেক সময় পুলিশের কাছে বিচার চাইতে গিয়েও ধর্ষিত হতে হচ্ছে এ রকম অনেক প্রমাণ রয়েছে। আমি পুলিশের উদ্দেশে বলছি আপনারও মেয়ে আছে আপনার ভাই ও বোনের মেয়ে আছে আপনার আত্মীয়স্বজনের মেয়ে আছে তাদের দিকে একবার তাকান তারপর অন্তরচু দিয়ে ধর্ষিতা, নির্যাতিতা, এসিড নিক্ষেপে শরীর ঝলসে গেছে সে মেয়েটির দিকে একবার তাকান। আপনার কি মায়া লাগে না? আপনি কি সিমার? তা যদি না হয় তবে কেন আপনি নীরব? আপনি তো জনগণের বন্ধু। বন্ধুর মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য এগিয়ে আসুন, এ ধরনের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। তাতে করে এক দিকে সমাজ কলঙ্কমুক্ত হবে অন্য দিকে পুলিশের বিলুপ্ত গৌরব ফিরে পাবেন।
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যারা এ ধরনের পশুর মতো আচরণ করে সেই মানুষরূপী নরপশুদের জনসম্মুখে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। আপামর জনগণের স্বার্থে এ বিষয় আইনের জটিলতা থাকলে প্রয়োজন হলে আইন সংশোধন করে এই জঘন্য অপরাধ বন্ধ করুন। যারা ক্ষমতাবান, বা তাদের ছেলে, ভাতিজা, তারা ধর্ষণের যে সেঞ্চুুরি করেন, নারীদের পণ্য মনে করেন, তাদের উদ্দেশে বলছি এ ধরনের কর্মাকাণ্ডের জন্য কী আপনার ইজ্জত বাড়ছে না কমছে তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন। বর্তমানে নারীরা সমাজ উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসছেন এবং তাদের যেগ্যাতা দিয়ে অনেক অবদান রাখছেন। ঠিক সেই সময় নারীদের ওপর নরপিশাচের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে একশ্রেণীর মানুষরূপী জানোয়ার। এই জানোয়ারের উদ্দেশে বলছি আপনি সারা জীবন বেঁচে থাকবেন চরিত্রহীন হয়ে আপনার দিকে মানুষ তাকাবে ঘৃণাভরে এবং মৃত্যুর পরে কাল হাসরের মাঠে আপনাকে শূকরের চেহারা নিয়ে জনসম্মুখে হাজির করা হবে। আমি আহ্বান জানাব আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের মায়ের জাতি নারী জাতিকে হেফাজত করি। নারী মানে ফুল, ফুলগাছের বোঁটাই বেশি শোভাবর্ধন করে। তাদের গায়ে যেন কখনো কাঁটার আঁচড় না পড়ে আর যেন কোনো নারী ধর্ষিত না হয়, নির্যাতিত না হয়, আর যেন কোনো নারীর এসিডদগ্ধ হয়ে তার শরীর ঝলসে না যায়। সবার কাছে এ আহ্বান রাখছি।
লেখক : সহকারী রেজিস্ট্রার, সমাজবিজ্ঞান স্কুল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
ইডেন ছাত্রীর ওপর এসিড নিক্ষেপকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন শিরোনামে মনির নামের এক নরপিশাচ যেভাবে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে তার গায়ে এসিড নিক্ষেপের ফলে যেভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে তা দেখে কোনো বিবেকবান মানুষ বসে থকাতে পারে না। এ অবস্থা দেখে তার ভাই যেভাবে হাউমাউ করে কাঁদলেন তা দেখে কোনো সিমারও এ ঘটনার বিচার না চেয়ে চুপ থাকতে পারে না। চৌদ্দগ্রামে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বোনকে গণধর্ষণ। থানায় মামলা নেয়নি। গ্রাম সালিসির মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা। চট্টগ্রামে গণধর্ষণের শিকার কিশোরী তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। চট্টগ্রামে খুলশী থানায় ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় ১৫ বছরের এক কিশোরী এপেক্স ফিশারিজ নামে একটি কারখানায় চাকরি করত। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে তাকে নিয়ে গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতকারীরা। খুলনায় পূর্ব বানিয়াখামার শহিদুল নামের এক লোক তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। অসুস্থ ও অচেতন হয়ে পড়লে প্রথমে জেনারেল হাসপাতাল ও পরে খুলনা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফিরলে ঘটনা বলে দেয়। বিষয়টি পরিবারের ইজ্জতের জন্য প্রথমে বলতে চায়নি। পরে এলাকাবাসী শহিদুলকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে থানায় দেয়। সদর থানার ওসি বলেন, আটক শহিদুলকে থানায় রাখা হয়েছে ও মামলা হয়েছে।
জনগণ ধরে থানায় দিয়েছে বলে থানায় জামাই আদরে আছে। সন্ত্রাসীরা মেয়েদের ভুলানোর জন্য মিষ্টি কথা বলে ভালোবাসার ছলনায় আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে প্রেমের অফার দেয়। তাতে রাজি না হলে মরে যাবে বলে হুমকি দেয়। লোভনীয় খাবার অফার করে, কখনো জামা কাপড়, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান উপহার পাঠায় এতে অনেক সময় অল্পবয়সী মেয়েরা ঠিক থাকতে পারে না। এসব অফারেও রাজি না হলে মেয়েটিকে মেরে ফেলাসহ গায়ে এসিড নিক্ষেপ করার হুমকি দেয়। পরিবারের লোকেরা ভয়ে মুখ খোলে না। আবার অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক মানুষকে জানাতে চায় না ইজ্জতের ভয়ে। আবার অনেক সময় আশপাশের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার কোনো বিচার না পাওয়ায় এমনকি থানায় মামলাও নেয় না। আর ধর্ষিতা গরিব হলে ধর্ষকের কোনো চিন্তা নেই। থানায় বা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে নেয়। আবার অনেক সময় ধর্ষক যদি প্রভাবশালী হয় তবে তো কথাই নেই। ধনীদের ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হলে তো কোনো কথাই নেই। ধর্ষিতা হয়েও কোনো কথা বলতে পারে না। কথা বললে ধর্ষিতাসহ তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়। তাদের অনেক সময় থানায় কেসও নেয়া হয় না। কেস নিলেও কেস তুলে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। অনেক সময় পুলিশের সহযোগিতায় কেস তুলে নেয়। পুলিশ ধর্ষিতাকে বা তার পরিবারকে এক প্রকার ইঙ্গিতে হুমকি দেয় যদি কেস তুলে না নাও তবে ওরা প্রভাবশালী ওরা তোমাদের শেষ করে দেবে। তোমরা ওদের সাথে পারবে না। তার চেয়ে কেস তুলে নাও। অবশেষে কেস তুলে নেয়। আবার অনেক সময় কেস নিলেও কিছু দিন পর কেসের রিপোর্ট হয় উল্টা, ধর্ষিতা বিচার পায় না, বিচার হয় দীর্ঘ সূত্রতা। এমনকি মেয়েরা পুলিশের কাছে বিচার চাইতে এসে ধর্ষিত হয়ে ফিরে যায়। কোর্টে বিচার চলাকালীন জনসম্মুখে আইনজীবীরা এমন এমন প্রশ্ন করেন যা নারীদের লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন তারা আর কোর্টের বারান্দায় আসে না। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে ঘরে বসে নির্জনে তার পরিবারসহ গুমরে গুমরে কাঁদেন।
নারী জাতি মায়ের জাতি তাদের ওপর এ অমানুষিক নির্যাতন আল্লাহ সইবে না। অতীতে যখনই নারীদের সম্ভ্রমের ওপর কেউ ঝাঁপিয়ে পড়েছে তখনই আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছিল। আজ আমরা ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করছি না। আমাদের কি মা নেই, বোন নেই ও মেয়ে নেই? আজ আপনার মেয়ের ওপর এ ধরনের অত্যাচার হচ্ছে না কাল যে হবে না তার নিশ্চয়তা কী? আজ যেভাবে মেয়েদেরকে ধর্ষণের প্রতিযোগিতা চলছে। এসিড নিক্ষেপের কারণে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঝলসে যাচ্ছে, উত্ত্যক্ত সহ্য করতে না পারার কারণে যেসব মেয়ে আত্মহত্যা করছে, ৭-১২ বছর বয়সের ছোট শিশুদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। সে যদি আমার মেয়ে বা বোন হতো তাহলে আমি কী করতাম। তবে আমি হলফ করে বলতে পারি যে প্রতিদিন পেপার খুললে মেয়েদের গণধর্ষণ, নির্যাতন, এসিড সন্ত্রাসের উৎসবের ঘটনা দেখতে পাই এ জঘন্যতম অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে আপনার আমার মেয়ে ও বোনের ওপরও এর প্রভাব পড়বেই। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে ভাইকে ছুরিকাঘাতসহ হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না এ স্বাধীন দেশে। এ কোন অসভ্য বর্বরতার চিত্র আমরা দেখছি। এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ যারা করে তাদের কুলাঙ্গার বাবা-মাও ছেলের যাতে কোনো বিচার না হয় তার জন্য অনেক টাকা খরচা করেও বাঁচানোর চেষ্টা করে। আপনি মনে রাখবেন এ কলঙ্ক যেমন আপনার তথা সব বাঙালি জাতির। পুলিশের কাছে মেয়ে উত্ত্যক্ত হওয়ার ঘটনা নালিশ করলে পুলিশ বলে লিখিত দেন। লিখিত দিলে আরো বেশি উত্ত্যক্ত বেড়ে যায় এবং পরিবারের অন্যান্যের ওপরও হুমকি আসে। আমি পুলিশের সবাইকে দোষারোপ করব না, অনেক ভালো পুলিশ অফিসার আমি দেখেছি। সমাজের অপরাধকারীর অপরাধ নির্ণয় এবং প্রতিকার পুলিশের হাতে, নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার দায়িত্বও পুলিশের হাতে কিন্তু পুলিশ নীরব ভূমিকায়।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে সংগঠন চৌদ্দগ্রাম থানায় সংঘটিত ভাইকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে দুই বোনকে গণধর্ষণ শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেও পুলিশ নীরব ভূমিকায় ছিল মর্মে জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট করলে এক দ্বৈত বেঞ্চে ওই থানার ওসিকে সশরীরে কোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে তার ভূমিকা কী ছিল তার ব্যাখ্যা চেয়ে আদেশ জারি করেছেন। অনেক সময় পুলিশের কাছে বিচার চাইতে গিয়েও ধর্ষিত হতে হচ্ছে এ রকম অনেক প্রমাণ রয়েছে। আমি পুলিশের উদ্দেশে বলছি আপনারও মেয়ে আছে আপনার ভাই ও বোনের মেয়ে আছে আপনার আত্মীয়স্বজনের মেয়ে আছে তাদের দিকে একবার তাকান তারপর অন্তরচু দিয়ে ধর্ষিতা, নির্যাতিতা, এসিড নিক্ষেপে শরীর ঝলসে গেছে সে মেয়েটির দিকে একবার তাকান। আপনার কি মায়া লাগে না? আপনি কি সিমার? তা যদি না হয় তবে কেন আপনি নীরব? আপনি তো জনগণের বন্ধু। বন্ধুর মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য এগিয়ে আসুন, এ ধরনের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। তাতে করে এক দিকে সমাজ কলঙ্কমুক্ত হবে অন্য দিকে পুলিশের বিলুপ্ত গৌরব ফিরে পাবেন।
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যারা এ ধরনের পশুর মতো আচরণ করে সেই মানুষরূপী নরপশুদের জনসম্মুখে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি। আপামর জনগণের স্বার্থে এ বিষয় আইনের জটিলতা থাকলে প্রয়োজন হলে আইন সংশোধন করে এই জঘন্য অপরাধ বন্ধ করুন। যারা ক্ষমতাবান, বা তাদের ছেলে, ভাতিজা, তারা ধর্ষণের যে সেঞ্চুুরি করেন, নারীদের পণ্য মনে করেন, তাদের উদ্দেশে বলছি এ ধরনের কর্মাকাণ্ডের জন্য কী আপনার ইজ্জত বাড়ছে না কমছে তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন। বর্তমানে নারীরা সমাজ উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসছেন এবং তাদের যেগ্যাতা দিয়ে অনেক অবদান রাখছেন। ঠিক সেই সময় নারীদের ওপর নরপিশাচের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে একশ্রেণীর মানুষরূপী জানোয়ার। এই জানোয়ারের উদ্দেশে বলছি আপনি সারা জীবন বেঁচে থাকবেন চরিত্রহীন হয়ে আপনার দিকে মানুষ তাকাবে ঘৃণাভরে এবং মৃত্যুর পরে কাল হাসরের মাঠে আপনাকে শূকরের চেহারা নিয়ে জনসম্মুখে হাজির করা হবে। আমি আহ্বান জানাব আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের মায়ের জাতি নারী জাতিকে হেফাজত করি। নারী মানে ফুল, ফুলগাছের বোঁটাই বেশি শোভাবর্ধন করে। তাদের গায়ে যেন কখনো কাঁটার আঁচড় না পড়ে আর যেন কোনো নারী ধর্ষিত না হয়, নির্যাতিত না হয়, আর যেন কোনো নারীর এসিডদগ্ধ হয়ে তার শরীর ঝলসে না যায়। সবার কাছে এ আহ্বান রাখছি।
লেখক : সহকারী রেজিস্ট্রার, সমাজবিজ্ঞান স্কুল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments