কেমন আছেন ভাষা সৈনিকরা-আবদুল মতিন রাতে ঘুমাতে পারেন না by আজিজুল পারভেজ
পাকিস্তানি
শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন যে ছাত্রনেতা, তিনি আজ সন্ত্রস্ত, ভীত।
দেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা, হানাহানি তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। রাতেও তিনি
ঘুমাতে পারেন না নির্বিঘ্নে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেন তিনি। দরজা-জানালা
পরীক্ষা করে দেখেন, ঠিকমতো লাগানো আছে কি না।
স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের
প্রকাশ্য ও নৃশংস হামলার দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় দেখে তাঁর মধ্যে শঙ্কা ভর
করেছে। তার পরও দেশ-জাতি নিয়ে হতাশ নন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন। তিনি বলেন,
'বাঙালি ঘুরে দাঁড়াবেই এবং এগিয়ে যাবে।'
বাংলা ভাষার নবজন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবদুল মতিনের নাম। 'ভাষা মতিন' নামে খ্যাত এই সংগ্রামীর বয়স এখন ৮৭ বছর। দীর্ঘদেহী মানুষটি বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুব্জ। কিন্তু অবসর বলতে কিছু নেই। ছুটে চলেছেন নিরন্তর। দেশ নিয়ে ভাবেন। দেশের মঙ্গল চিন্তা প্রকাশ করেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে। তাঁর উপস্থিতিতে আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান মঞ্চ। তিনি উদ্দীপ্ত করেন তরুণ প্রজন্মকে।
গতকাল বৃহস্পতিবারও আবদুল মতিনকে দেখা গেছে জাতীয় প্রেসক্লাবে। এক তরুণ লেখকের নতুন বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধান অতিথি হিসেবে। দোতলার অনুষ্ঠানমঞ্চে পৌঁছান অন্যদের কাঁধে ভর করে। সঙ্গে স্ত্রী গুলবদন নেসা মনিকা। ১৯৬৬ সাল থেকে এই দম্পতির একসঙ্গে পথচলা। গুলবদন নেসা সাধারণত নিজের নামটা বলতে চান না। বলেন, 'আমি ভাষা মতিনের স্ত্রী- এটাই তো বড় পরিচয়।' তাঁদের দুই মেয়ে, দুজনেরই বিয়ে হয়েছে।
মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে রাখার আন্দোলনে আবদুল মতিন সেই যে ১৯৪৮ সালে রাজপথে নেমেছিলেন, আর ঘরে ফেরা হয়নি। রাজধানীতে নিজের বাসাবাড়ি বলতে কিছু নেই। রাজনীতির বাইরে পেশা কিংবা ব্যবসা কিছুই করেননি। বৈষয়িক ব্যাপারে বরাবরই ছিলেন উদাসীন। মেয়ে মালিহা শোভন পেশায় শিক্ষিকা। মোহাম্মদপুরে তাঁর ভাড়া বাসায় এখন থাকেন আবদুল মতিন দম্পতি। স্ত্রী গুলবদন নেসা একসময় এনজিওতে চাকরি করতেন। ১৯৯৭ সালে আবদুল মতিন হৃদরোগে আক্রান্ত হলে স্ত্রী আর চাকরি বজায় রাখতে পারেননি। কিডনিতে কিছু সমস্যা ছাড়া বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থই আছেন আবদুল মতিন।
বাসায় বসে সংবাদপত্র পাঠ, স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলা আর নানা অনুষ্ঠানে যোগদানের মধ্য দিয়ে সময় কাটে আবদুল মতিনের। কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে থাকতে হয় না- এমন দিন নেই। গতকাল যেমন প্রেসক্লাবে গিয়েছিলেন, আজ শুক্রবারও যাবেন দুটি অনুষ্ঠানে। এসব তথ্য জানা গেছে গুলবদন নেসার সঙ্গে কথা বলে। আবদুল মতিন সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভাষা মতিন এক অনন্য পুরুষ। ভাষা আন্দোলনে তিনি সফল হলেও রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি। সারা জীবন বাম রাজনীতি করে গেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায় বামরা যেতে পারেনি। তাদের মতো করে রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন করতে পারেনি।' তবে তিনি হতাশ নন, এ দেশে একটি মানবিক সমাজ গড়ে উঠবে, ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ থাকবে না- এটা এখনো বিশ্বাস করেন।
যে ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, সেই ভাষা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে কি না- জানতে চাইলে আবদুল মতিন বলেন, 'না নেই, দেশের মানুষ এখনো শিক্ষার আলো পায়নি।' কেন এমন হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের জাতি এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি, তবে হচ্ছে।'
আবদুল মতিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে এসে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন ভাষা আন্দোলনে। ১৯৪৯ সালে গ্রেপ্তার করে তাঁকে কারারুদ্ধ রাখা হয় দুই মাস। এরপর বহিষ্কার করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৫০ সালে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম প্রধান ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্ব প্রদানকারী সাহসী বীর আবদুল মতিন আহ্বায়ক হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পাকিস্তান সরকার সেই ধর্মঘট বানচাল করার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করলে আবদুল মতিনসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে অবস্থান নেন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভাঙার মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালি জাতির আত্মবিকাশ ও সাহসিকতার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচনা করেন এই তেজস্বী পুরুষ।
বাংলা ভাষার নবজন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবদুল মতিনের নাম। 'ভাষা মতিন' নামে খ্যাত এই সংগ্রামীর বয়স এখন ৮৭ বছর। দীর্ঘদেহী মানুষটি বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুব্জ। কিন্তু অবসর বলতে কিছু নেই। ছুটে চলেছেন নিরন্তর। দেশ নিয়ে ভাবেন। দেশের মঙ্গল চিন্তা প্রকাশ করেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে। তাঁর উপস্থিতিতে আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান মঞ্চ। তিনি উদ্দীপ্ত করেন তরুণ প্রজন্মকে।
গতকাল বৃহস্পতিবারও আবদুল মতিনকে দেখা গেছে জাতীয় প্রেসক্লাবে। এক তরুণ লেখকের নতুন বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধান অতিথি হিসেবে। দোতলার অনুষ্ঠানমঞ্চে পৌঁছান অন্যদের কাঁধে ভর করে। সঙ্গে স্ত্রী গুলবদন নেসা মনিকা। ১৯৬৬ সাল থেকে এই দম্পতির একসঙ্গে পথচলা। গুলবদন নেসা সাধারণত নিজের নামটা বলতে চান না। বলেন, 'আমি ভাষা মতিনের স্ত্রী- এটাই তো বড় পরিচয়।' তাঁদের দুই মেয়ে, দুজনেরই বিয়ে হয়েছে।
মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে রাখার আন্দোলনে আবদুল মতিন সেই যে ১৯৪৮ সালে রাজপথে নেমেছিলেন, আর ঘরে ফেরা হয়নি। রাজধানীতে নিজের বাসাবাড়ি বলতে কিছু নেই। রাজনীতির বাইরে পেশা কিংবা ব্যবসা কিছুই করেননি। বৈষয়িক ব্যাপারে বরাবরই ছিলেন উদাসীন। মেয়ে মালিহা শোভন পেশায় শিক্ষিকা। মোহাম্মদপুরে তাঁর ভাড়া বাসায় এখন থাকেন আবদুল মতিন দম্পতি। স্ত্রী গুলবদন নেসা একসময় এনজিওতে চাকরি করতেন। ১৯৯৭ সালে আবদুল মতিন হৃদরোগে আক্রান্ত হলে স্ত্রী আর চাকরি বজায় রাখতে পারেননি। কিডনিতে কিছু সমস্যা ছাড়া বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থই আছেন আবদুল মতিন।
বাসায় বসে সংবাদপত্র পাঠ, স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলা আর নানা অনুষ্ঠানে যোগদানের মধ্য দিয়ে সময় কাটে আবদুল মতিনের। কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে থাকতে হয় না- এমন দিন নেই। গতকাল যেমন প্রেসক্লাবে গিয়েছিলেন, আজ শুক্রবারও যাবেন দুটি অনুষ্ঠানে। এসব তথ্য জানা গেছে গুলবদন নেসার সঙ্গে কথা বলে। আবদুল মতিন সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভাষা মতিন এক অনন্য পুরুষ। ভাষা আন্দোলনে তিনি সফল হলেও রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি। সারা জীবন বাম রাজনীতি করে গেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায় বামরা যেতে পারেনি। তাদের মতো করে রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন করতে পারেনি।' তবে তিনি হতাশ নন, এ দেশে একটি মানবিক সমাজ গড়ে উঠবে, ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ থাকবে না- এটা এখনো বিশ্বাস করেন।
যে ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, সেই ভাষা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে কি না- জানতে চাইলে আবদুল মতিন বলেন, 'না নেই, দেশের মানুষ এখনো শিক্ষার আলো পায়নি।' কেন এমন হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের জাতি এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি, তবে হচ্ছে।'
আবদুল মতিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে এসে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন ভাষা আন্দোলনে। ১৯৪৯ সালে গ্রেপ্তার করে তাঁকে কারারুদ্ধ রাখা হয় দুই মাস। এরপর বহিষ্কার করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৫০ সালে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম প্রধান ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্ব প্রদানকারী সাহসী বীর আবদুল মতিন আহ্বায়ক হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পাকিস্তান সরকার সেই ধর্মঘট বানচাল করার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করলে আবদুল মতিনসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে অবস্থান নেন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভাঙার মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালি জাতির আত্মবিকাশ ও সাহসিকতার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচনা করেন এই তেজস্বী পুরুষ।
No comments