চারুশিল্প- মাটির টান by জাহিদ মুস্তাফা
নদীমাতৃক
বাংলার নদীকেন্দ্রিক পেশাজীবী ধীবরদের মাছধরার জালের হূদয়গ্রাহী নানা রূপ
নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে দৃষ্টিনন্দন ছবি আঁকেন ফরিদা জামান।
‘নিরন্তর মাটির
টানে’ শিরোনামে ঢাকার বেঙ্গল শিল্পালয়ে তাঁর সপ্তম একক চিত্র প্রদর্শনী হলো
১৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে ক্যানভাস ও কাগজে অ্যাক্রিলিক
রঙে আঁকা ৬৫টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়।
তাঁর প্রথম দুটি একক আয়োজিত হয়েছিল ঢাকায়—বর্তমান চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে। সে সময়ের কাজে দেখেছি—মাছধরার জাল ও জলাশয়ের সমন্বিত বিচিত্র আঙ্গিকের আলো-আঁধারির নান্দনিক রূপ।
শৈশব থেকে যৌবনে প্রকৃতির পাঠশালা হয়ে ঢাকা, বরোদা ও শান্তিনিকেতনে শিল্পশিক্ষা তাঁর মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে শৈশবে ঘুরেছেন নানা জেলায়, নানা স্থানে। তাঁর ছোটবেলার বড় একটি অংশ কেটেছে চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনায় পাহাড়-নদীর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। প্রকৃতির সেই গীতল সৌন্দর্যে অভিভূত শিল্পীর অবচেতনায় যে নন্দনবোধ জন্ম নিয়েছে, তাকে তিনি লালন করেছেন নিজের শিল্পচৈতন্যে।
নদীতীরবর্তী মানুষ, মাছ ও জাল এবং গ্রামীণ জীবনধারার নানা অনুষঙ্গ ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর চিত্রপটে। একই সঙ্গে ধীবরদের জীবনসংগ্রামও বিধৃত হয়েছে। যেমন ধীবরকন্যা সুফিয়া তাঁর শিল্পভুবনের এমন একটি চরিত্র— যে একদিকে ধীবর সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে, অন্যদিকে সে গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া নারীসমাজের প্রতিনিধি। জীবনসংগ্রামে সে অবিচল। হাসি-খুশি এই মেয়েটি নিজের পরিবেশের মধ্যেই খুঁজে নেয় আনন্দ, সুখ ও প্রশান্তি। সুফিয়া কোনো বিশেষ একটি সময়ের চরিত্র নয়, সে অনন্তকালের, বাংলার প্রকৃতির সন্তান। সে কখনো শাপলা তোলে, পাখির সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে, মৎস্যশিকারি বিড়ালকে পোষ মানায়। আবার বাউলের সঙ্গেও ভাব জমায়।
ফরিদা জামান তাঁর চিত্রপটে রং-তুলিতে এসব বৈশিষ্ট্যকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। পোষা বিড়ালটির সঙ্গে সুফিয়ার সাহচর্য যেন আবহমান বাঙালির গার্হস্থ্য জীবনের প্রতিচ্ছবি। তবে বিড়ালতপস্বী নামে ভণ্ড একটি চরিত্রও প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। পৃথিবীবিখ্যাত অ্যানিমেটেড ছবি টম অ্যান্ড জেরির টমকে আমরা এখানে পেয়ে যাই তার দীর্ঘ গ্রীবায়। বড় ক্যানভাসে বিড়ালের প্রতীকে ছবি এঁকে সেই প্রতারকদের লোভাতুর মনোভাবকেই তুলে ধরেছেন শিল্পী। জল নামের সিরিজে কোনো অবয়ব নেই। একধরনের প্রকাশবাদী বিমূর্ততার দিকে এর গন্তব্য। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজ্ঞানীদের শংকা যেন নদীপ্রেমী শিল্পীর মনকেও উন্মনা করেছে। সংযোজন ও বিয়োজনের নিরন্তর প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ করি তাঁর কাজে। চিত্রকর্মগুলোর প্রকাশভঙ্গি প্রকৃতি অভিমুখী ও সহজ-সরল আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ। বাস্তবতার জটিলতা এড়িয়ে সরলস্নিগ্ধ প্রাকৃতিক জীবনের প্রতি মানুষকে যেন উদ্বুদ্ধ করে তাঁর চিত্রকর্ম।
তাঁর প্রথম দুটি একক আয়োজিত হয়েছিল ঢাকায়—বর্তমান চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে। সে সময়ের কাজে দেখেছি—মাছধরার জাল ও জলাশয়ের সমন্বিত বিচিত্র আঙ্গিকের আলো-আঁধারির নান্দনিক রূপ।
শৈশব থেকে যৌবনে প্রকৃতির পাঠশালা হয়ে ঢাকা, বরোদা ও শান্তিনিকেতনে শিল্পশিক্ষা তাঁর মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে শৈশবে ঘুরেছেন নানা জেলায়, নানা স্থানে। তাঁর ছোটবেলার বড় একটি অংশ কেটেছে চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনায় পাহাড়-নদীর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। প্রকৃতির সেই গীতল সৌন্দর্যে অভিভূত শিল্পীর অবচেতনায় যে নন্দনবোধ জন্ম নিয়েছে, তাকে তিনি লালন করেছেন নিজের শিল্পচৈতন্যে।
নদীতীরবর্তী মানুষ, মাছ ও জাল এবং গ্রামীণ জীবনধারার নানা অনুষঙ্গ ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর চিত্রপটে। একই সঙ্গে ধীবরদের জীবনসংগ্রামও বিধৃত হয়েছে। যেমন ধীবরকন্যা সুফিয়া তাঁর শিল্পভুবনের এমন একটি চরিত্র— যে একদিকে ধীবর সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে, অন্যদিকে সে গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া নারীসমাজের প্রতিনিধি। জীবনসংগ্রামে সে অবিচল। হাসি-খুশি এই মেয়েটি নিজের পরিবেশের মধ্যেই খুঁজে নেয় আনন্দ, সুখ ও প্রশান্তি। সুফিয়া কোনো বিশেষ একটি সময়ের চরিত্র নয়, সে অনন্তকালের, বাংলার প্রকৃতির সন্তান। সে কখনো শাপলা তোলে, পাখির সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে, মৎস্যশিকারি বিড়ালকে পোষ মানায়। আবার বাউলের সঙ্গেও ভাব জমায়।
ফরিদা জামান তাঁর চিত্রপটে রং-তুলিতে এসব বৈশিষ্ট্যকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। পোষা বিড়ালটির সঙ্গে সুফিয়ার সাহচর্য যেন আবহমান বাঙালির গার্হস্থ্য জীবনের প্রতিচ্ছবি। তবে বিড়ালতপস্বী নামে ভণ্ড একটি চরিত্রও প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। পৃথিবীবিখ্যাত অ্যানিমেটেড ছবি টম অ্যান্ড জেরির টমকে আমরা এখানে পেয়ে যাই তার দীর্ঘ গ্রীবায়। বড় ক্যানভাসে বিড়ালের প্রতীকে ছবি এঁকে সেই প্রতারকদের লোভাতুর মনোভাবকেই তুলে ধরেছেন শিল্পী। জল নামের সিরিজে কোনো অবয়ব নেই। একধরনের প্রকাশবাদী বিমূর্ততার দিকে এর গন্তব্য। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজ্ঞানীদের শংকা যেন নদীপ্রেমী শিল্পীর মনকেও উন্মনা করেছে। সংযোজন ও বিয়োজনের নিরন্তর প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ করি তাঁর কাজে। চিত্রকর্মগুলোর প্রকাশভঙ্গি প্রকৃতি অভিমুখী ও সহজ-সরল আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ। বাস্তবতার জটিলতা এড়িয়ে সরলস্নিগ্ধ প্রাকৃতিক জীবনের প্রতি মানুষকে যেন উদ্বুদ্ধ করে তাঁর চিত্রকর্ম।
No comments