ধর্ষণ রোধে দরকার নৈতিকতার জাগরণ by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
বেশ কিছুদিন ধরে সংবাদপত্রে ধর্ষণের সংবাদগুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পাচ্ছে। ধর্ষণের ভয়াবহতা বিশ্লেষণে সর্বত্র এটা এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার একটাই চাওয়া_ ধর্ষককে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করতে হবে। এ কথা সবাই স্বীকার করে, ধর্ষণের ফলে একজন নারীর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়।
তার সামাজিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার নারীটি আর বাঁচতে চায় না। লোকলজ্জা আর ক্ষোভে সমাজে মুখ দেখাতে চায় না। নিজেই নিজেকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এটাই কি কোনো সমাধান? একজনের প্রস্থানেই কি সমাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে? সমাজের অসুররা সভ্য হয়ে যাবে?
দিন দিন মানুষ যত সভ্য হচ্ছে, শিক্ষিতের হার যত বাড়ছে, বাজারমুখী চিন্তা প্রসারতা লাভ করছে, ততই সামাজিক জীবনের দুষ্টু ক্ষতগুলো চেপে বসছে। বাড়ছে অন্যায়ের ব্যাপকতা। বাড়ছে বিকৃত রুচি। ফলে আজ পাঁচ কিংবা সাত বছরের শিশুও ধর্ষণকারীর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অথচ রাষ্ট্রে আইন আছে, আদালত আছে। আইন প্রণয়নের জন্য সংসদ আছে। কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। নতুন উপায়ে, নতুন পদ্ধতিতে নারী নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু এর মূল কারণ কী, তা কেউ খতিয়ে দেখছে না। কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তাই বলি, সমাজ বিধ্বংসী এই অপকর্মের উৎপত্তি কোথায়, তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। তবেই সম্ভব এ সমস্যার মূলোৎপাটন করা।
চলমান সমাজে নারী নির্যাতন, নারীর অবমূল্যায়ন, নারীর প্রতি অবিচার ও ধর্ষণের মতো কুৎসিত কাজে উদ্বুদ্ধ করে যেসব বিষয় ও উপায়-উপকরণগুলো, তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। ধর্ষণ প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারে মনোযোগী হতে হবে। যেমন_ অশ্লীলতা এসবের অন্যতম একটি। সমাজে অশ্লীলতা ছড়ায় এমন চরিত্র বিধ্বংসী উপকরণগুলোর ব্যাপক ছড়াছড়ি মানুষের নীতি-নৈতিকতার মূলে কুঠারাঘাত করছে। অশ্লীলতা মানুষকে আদর্শগত দিক থেকে ধ্বংসের ব্যাপারে সহায়তা করছে। মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে মন্দ কাজে। সুতরাং অশ্লীলতা রোধই হতে পারে ধর্ষণ রোধের অন্যতম হাতিয়ার। অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজকে কতটা ক্ষতি করছে, তা হাল আমলের ধর্ষণের চিত্র দেখলে টের পাওয়া যায়। এই হলো বাস্তবতা। মোটকথা, মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারাতে বসেছে। দেশপ্রেম, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত যৌন কামনার প্রভাবে মানুষের মধ্যে ধর্ষণ, ব্যভিচার, পরকীয়া ইত্যাদির প্রবণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণ অপরাধের শাস্তি রয়েছে। কিন্তু শাস্তি প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে জটিলতা। এ ছাড়া মামলার বাদী-বিবাদীর প্রতি প্রশাসনের অবহেলা, রাজনৈতিক চাপ ইত্যাদির কারণে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি হয় না। অপরাধীর সাজা না হলে এ জাতীয় অপরাধ যে বাড়বে, তা চির সত্য ও অবধারিত বিষয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যেসব দেশে ধর্ষণ বাড়ছে, দেখা যাচ্ছে ধর্ষকের সাজা না হওয়া তার অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকলেও মোটাদাগে বলা যায়, আসল সমস্যা বিকৃত লালসার কতিপয় পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে। এই দৃষ্টিভঙ্গির কোনো শ্রেণীভাগ আছে বলে মনে হয় না। এমনকি শিক্ষার আলোও তাদের এই মানসিকতা বদলায়নি। না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থানে শিক্ষকের হাতে ছাত্রী, চিকিৎসকের হাতে রোগী কিংবা সহকর্মী মহিলা চিকিৎসক ধর্ষিত হয় কীভাবে? ধর্ষণ ও ব্যভিচার সর্বযুগে, সর্বধর্ম মতে নিন্দনীয় ও নিকৃষ্ট কাজ। ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার চূড়ান্ত শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। পবিত্র ধর্ম ইসলাম এ ব্যাপারে বেশ কঠিন শাস্তির বিধান প্রদান করেছে। কোরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহতায়ালা ব্যভিচার সম্পর্কিত পাপের ভয়াবহতা ও এর কঠিন পরিণতি সম্পর্কে মানব জাতিকে সাবধান করেছেন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'তোমরা ব্যভিচারের ধারেকাছেও যেও না, কারণ এটা একটা অশ্লীল এবং জঘন্য পন্থা।'
দেশে এত ধর্ষণ হচ্ছে কেন? ধর্ষণ রোধের উপায়ই-বা কী? এর উত্তরে অনেকেই বলেন, ভালো মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয় না; পোশাকের কারণে মেয়েরা ধর্ষিত হয়। আবার কেউ বলেন, স্বল্প কাপড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে ধর্ষণ হবে না তো কী হবে? অনেকেই বলেন, পর্দাপ্রথায় ফিরে এলে ধর্ষণ আর হবে না। আবার কেউ বলেন, কঠোর শাস্তি দিলে ধর্ষণ কমবে। আমি এসব তাত্তি্বক আলোচনায় না গিয়ে সোজা বলতে চাই, ধর্ষণ বন্ধে আগে পুরুষের মানসিকতা বদলাতে হবে। ধর্ষণ কমাতে হলে আগে পুরুষের মাঝে মানবিক গুণাবলিগুলো জাগ্রত করতে হবে।
এ ছাড়া ধর্ষণ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ, নেশা, সংস্কৃতির নামে অশ্লীল নাচ-গান, যৌন সুড়সুড়িমূলক বই-ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইট, অশ্লীল নাটক-সিনেমা ইত্যাদি প্রবলভাবে মানুষকে ব্যভিচারে প্ররোচিত করে। সর্বাগ্রে এসব বর্জন করতে হবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সময়মতো বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বাজে সঙ্গ বর্জন করতে হবে। পাশাপাশি নারীকেও শালীন হতে হবে। উত্তেজক পোশাক বর্জন করতে হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রবল কামোত্তেজনা মানুষকে পশুতুল্য করে ফেলে। কামোত্তেজনা সৃষ্টিকারী উপকরণগুলোর কাছাকাছি চলে গেলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আর কোনো পথ থাকে না। তাই ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে কেবল আইনের কঠোর প্রয়োগে কোনো কাজ হবে না। এ জন্য প্রয়োজন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যার যার পারিবারিক বলয়ে কল্যাণমূলক নীতি-নেতিকতা তথা ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুশীলন করা, পোশাকের শালীনতা বজায় রাখা, অশ্লীল সংস্কৃতি চর্চার পরিবর্তে শিক্ষণীয় বিনোদনমূলক শালীন সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা করা। তবেই সম্ভব এ মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া।
muftianaet@gmail.com
দিন দিন মানুষ যত সভ্য হচ্ছে, শিক্ষিতের হার যত বাড়ছে, বাজারমুখী চিন্তা প্রসারতা লাভ করছে, ততই সামাজিক জীবনের দুষ্টু ক্ষতগুলো চেপে বসছে। বাড়ছে অন্যায়ের ব্যাপকতা। বাড়ছে বিকৃত রুচি। ফলে আজ পাঁচ কিংবা সাত বছরের শিশুও ধর্ষণকারীর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অথচ রাষ্ট্রে আইন আছে, আদালত আছে। আইন প্রণয়নের জন্য সংসদ আছে। কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। নতুন উপায়ে, নতুন পদ্ধতিতে নারী নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু এর মূল কারণ কী, তা কেউ খতিয়ে দেখছে না। কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তাই বলি, সমাজ বিধ্বংসী এই অপকর্মের উৎপত্তি কোথায়, তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। তবেই সম্ভব এ সমস্যার মূলোৎপাটন করা।
চলমান সমাজে নারী নির্যাতন, নারীর অবমূল্যায়ন, নারীর প্রতি অবিচার ও ধর্ষণের মতো কুৎসিত কাজে উদ্বুদ্ধ করে যেসব বিষয় ও উপায়-উপকরণগুলো, তা আগে খুঁজে বের করতে হবে। ধর্ষণ প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারে মনোযোগী হতে হবে। যেমন_ অশ্লীলতা এসবের অন্যতম একটি। সমাজে অশ্লীলতা ছড়ায় এমন চরিত্র বিধ্বংসী উপকরণগুলোর ব্যাপক ছড়াছড়ি মানুষের নীতি-নৈতিকতার মূলে কুঠারাঘাত করছে। অশ্লীলতা মানুষকে আদর্শগত দিক থেকে ধ্বংসের ব্যাপারে সহায়তা করছে। মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে মন্দ কাজে। সুতরাং অশ্লীলতা রোধই হতে পারে ধর্ষণ রোধের অন্যতম হাতিয়ার। অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজকে কতটা ক্ষতি করছে, তা হাল আমলের ধর্ষণের চিত্র দেখলে টের পাওয়া যায়। এই হলো বাস্তবতা। মোটকথা, মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারাতে বসেছে। দেশপ্রেম, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত যৌন কামনার প্রভাবে মানুষের মধ্যে ধর্ষণ, ব্যভিচার, পরকীয়া ইত্যাদির প্রবণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণ অপরাধের শাস্তি রয়েছে। কিন্তু শাস্তি প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে জটিলতা। এ ছাড়া মামলার বাদী-বিবাদীর প্রতি প্রশাসনের অবহেলা, রাজনৈতিক চাপ ইত্যাদির কারণে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি হয় না। অপরাধীর সাজা না হলে এ জাতীয় অপরাধ যে বাড়বে, তা চির সত্য ও অবধারিত বিষয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যেসব দেশে ধর্ষণ বাড়ছে, দেখা যাচ্ছে ধর্ষকের সাজা না হওয়া তার অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকলেও মোটাদাগে বলা যায়, আসল সমস্যা বিকৃত লালসার কতিপয় পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে। এই দৃষ্টিভঙ্গির কোনো শ্রেণীভাগ আছে বলে মনে হয় না। এমনকি শিক্ষার আলোও তাদের এই মানসিকতা বদলায়নি। না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থানে শিক্ষকের হাতে ছাত্রী, চিকিৎসকের হাতে রোগী কিংবা সহকর্মী মহিলা চিকিৎসক ধর্ষিত হয় কীভাবে? ধর্ষণ ও ব্যভিচার সর্বযুগে, সর্বধর্ম মতে নিন্দনীয় ও নিকৃষ্ট কাজ। ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার চূড়ান্ত শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। পবিত্র ধর্ম ইসলাম এ ব্যাপারে বেশ কঠিন শাস্তির বিধান প্রদান করেছে। কোরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহতায়ালা ব্যভিচার সম্পর্কিত পাপের ভয়াবহতা ও এর কঠিন পরিণতি সম্পর্কে মানব জাতিকে সাবধান করেছেন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'তোমরা ব্যভিচারের ধারেকাছেও যেও না, কারণ এটা একটা অশ্লীল এবং জঘন্য পন্থা।'
দেশে এত ধর্ষণ হচ্ছে কেন? ধর্ষণ রোধের উপায়ই-বা কী? এর উত্তরে অনেকেই বলেন, ভালো মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয় না; পোশাকের কারণে মেয়েরা ধর্ষিত হয়। আবার কেউ বলেন, স্বল্প কাপড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে ধর্ষণ হবে না তো কী হবে? অনেকেই বলেন, পর্দাপ্রথায় ফিরে এলে ধর্ষণ আর হবে না। আবার কেউ বলেন, কঠোর শাস্তি দিলে ধর্ষণ কমবে। আমি এসব তাত্তি্বক আলোচনায় না গিয়ে সোজা বলতে চাই, ধর্ষণ বন্ধে আগে পুরুষের মানসিকতা বদলাতে হবে। ধর্ষণ কমাতে হলে আগে পুরুষের মাঝে মানবিক গুণাবলিগুলো জাগ্রত করতে হবে।
এ ছাড়া ধর্ষণ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ, নেশা, সংস্কৃতির নামে অশ্লীল নাচ-গান, যৌন সুড়সুড়িমূলক বই-ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইট, অশ্লীল নাটক-সিনেমা ইত্যাদি প্রবলভাবে মানুষকে ব্যভিচারে প্ররোচিত করে। সর্বাগ্রে এসব বর্জন করতে হবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সময়মতো বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বাজে সঙ্গ বর্জন করতে হবে। পাশাপাশি নারীকেও শালীন হতে হবে। উত্তেজক পোশাক বর্জন করতে হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রবল কামোত্তেজনা মানুষকে পশুতুল্য করে ফেলে। কামোত্তেজনা সৃষ্টিকারী উপকরণগুলোর কাছাকাছি চলে গেলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আর কোনো পথ থাকে না। তাই ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে কেবল আইনের কঠোর প্রয়োগে কোনো কাজ হবে না। এ জন্য প্রয়োজন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যার যার পারিবারিক বলয়ে কল্যাণমূলক নীতি-নেতিকতা তথা ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুশীলন করা, পোশাকের শালীনতা বজায় রাখা, অশ্লীল সংস্কৃতি চর্চার পরিবর্তে শিক্ষণীয় বিনোদনমূলক শালীন সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা করা। তবেই সম্ভব এ মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া।
muftianaet@gmail.com
No comments