ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে তিন যাত্রীকে হত্যা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে তিন যাত্রীকে হত্যা করেছে ডাকাতরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে জেলার পাঘাচং ও ভাদুঘর এলাকার মাঝামাঝি এলাকায় আখাউড়া থেকে ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ট্রেনে ডাকাতির পর পাঁচ যাত্রীকে ফেলে দেওয়া হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই দুজন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় মামলা হয়েছে। ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তিন পুলিশকে প্রত্যাহার করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্টকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মেরাসানী গ্রামের মন মিয়ার ছেলে সুধ মিয়া (৪৫) এবং একই এলাকার মোসলেম মিয়ার স্ত্রী সাহানা বেগম (৩৫)। অজ্ঞাতপরিচয় অন্য পুরুষ যাত্রীর বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। পুলিশ বলেছে, এ ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তাঁদের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
আহত আখাউড়া সড়ক বাজারের বাসিন্দা ও নাসিরনগর উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম এবং বিজয়নগর উপজেলার কালাছড়া গ্রামের রুবেল মিয়া চিকিৎসা নিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, সদর থানার ওসি মো. আব্দুর রব, আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্বজনদের কাছে নিহতদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল।
যেভাবে ঘটনা : আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময় ভোর ৫টায় ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ট্রেন আখাউড়া থেকে ছেড়ে যায়। নির্ধারিত যাত্রাবিরতি দিয়ে ট্রেনটি ৫টা ১৬ মিনিটে পাঘাচং স্টেশন অতিক্রম করার পর ইঞ্জিনের পেছনের বগিতে হানা দেয় ডাকাতদল।
আহত যাত্রী খোরশেদ আলম জানান, তিনি একটি আসনে বসা ছিলেন। ট্রেনটি পাঘাচং স্টেশন ছাড়ার পরপরই চার-পাঁচজন মিলে তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে সব কিছু দিয়ে দিতে বলে। তিনি একটি মোবাইল ফোনসেট ও পকেটে থাকা প্রায় তিন হাজার টাকা ডাকাতদের হাতে তুলে দেন। এরই মধ্যে একজন বলে, 'হের কাছে টেহা কম কেরে, হেরে মাইরা লাগা।' তখন কয়েকজন মিলে তাঁকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন। রেললাইনের পাশে কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর জ্ঞান ফিরে পান তিনি এবং স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় চিকিৎসা নেন তিনি। তাঁর মাথায় তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। আখাউড়া থেকেই ডাকাতদল ট্রেনে ওঠে বলে তিনি ধারণা করেন। অন্য আহত যাত্রী মো. রুবেল জানান, তিনি প্রবাসে যেতে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে ঢাকা যাওয়ার জন্য আখাউড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। পাঘাচং স্টেশন থেকেও কয়েকজন এ ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনটি ওই স্টেশন ছাড়ার পর ১০-১৫ জনের ডাকাতদল যাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে। তাঁর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যায় তারা। এক পর্যায়ে ডাকাতরা দুই যাত্রীর গলায় মাফলার পেঁচিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। এরপর তাঁকেও ফেলা দেওয়া হয়।
পুলিশের বক্তব্য : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি মো. আব্দুর রব জানান, খবর পেয়ে কুরুলিয়া ব্রিজের কাছ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশও আসে। ঘটনাস্থল রেলওয়ের আওতাধীন হওয়ায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা রেলওয়ে পুলিশই নেবে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, বগিটিতে পাঁচজন যাত্রী ছিল। পাঘাচং স্টেশন থেকে ১০-১৫ জন উঠে এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় খুনসহ ডাকাতির মামলা দায়ের হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল মজিদ বলেন, এ ঘটনার পর রেলওয়ের পুলিশ বিভাগ খুবই তৎপর জড়িতদের ধরতে।
রেলওয়ের চট্টগ্রামের পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. গিয়াস উদ্দিন বিকেলে জানান, তদন্ত করে এ ঘটনায় অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে তিনজন : সাতটি বগি নিয়ে তিতাস কমিউটার ট্রেনটি আখাউড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অথচ ট্রেনটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র তিনজন পুলিশ সদস্য। ডাকাতি হওয়া বগিটিতে মোট পাঁচজন যাত্রী ছিলেন। আখাউড়া থেকে ছাড়ার সময় বা ডাকাতিকালে ওই বগিতে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। রেলওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেনে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত লোকবল তাঁদের নেই। এ ছাড়া যে ট্রেনে ডাকাতি হয়েছে, সেটির এক বগি থেকে অন্য বগিতে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই।
স্বজনদের আহাজারি ও থানায় মামলা : প্রবাসে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক সুধ মিয়া। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনরা। সেখানে তাঁদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সুধ মিয়ার ভাই মো. খায়ের মিয়া জানান, তাঁর ভাই কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে আসেন। আবার বিদেশে যেতে কাগজপত্র নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন।
নিহত সাহানা বেগমের স্বামী মোসলেম মিয়া বাদী হয়ে বিকেলে আখাউড়া রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ১২। পুলিশ জানায়, মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করা হলেও জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা টেরই পাননি : ভোর সাড়ে ৫টায় এ ঘটনা ঘটলেও ট্রেনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য, পরিচালক (গার্ড), চালক সকাল ১০টা নাগাদ ঘটনা জানতেনই না। পরিচালক কামাল হোসেন ও চালক আবুল কালাম জানান, ঢাকায় পৌঁছার পর টিভি দেখে ও লোকমুখে শুনে তাঁরা বিষয়টি বুঝতে পারেন। এর আগে তাঁরা কিছুই টের পাননি। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল মজিদ জানান, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তিন পুলিশ সদস্যও বিষয়টি বুঝতে পারেননি।
তিন পুলিশ প্রত্যাহার : এ ঘটনায় ট্রেনের দায়িত্বে থাকা পুলিশের তিন সদস্য মকবুল হোসেন, আবু তাহের ও আতিউর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁরা তিনজনই ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
তদন্ত কমিটি : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে যাত্রী হত্যার ঘটনা তদন্তে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট ফারুক আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিহির কান্তি গুহ ও অতিরিক্ত যান্ত্রিক প্রকৌশলী পার্থ সরকার। পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কারণ অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সুপারিশসহ পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তাফাজ্জল হোসেনের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
এ ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় মামলা হয়েছে। ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তিন পুলিশকে প্রত্যাহার করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্টকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মেরাসানী গ্রামের মন মিয়ার ছেলে সুধ মিয়া (৪৫) এবং একই এলাকার মোসলেম মিয়ার স্ত্রী সাহানা বেগম (৩৫)। অজ্ঞাতপরিচয় অন্য পুরুষ যাত্রীর বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। পুলিশ বলেছে, এ ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তাঁদের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
আহত আখাউড়া সড়ক বাজারের বাসিন্দা ও নাসিরনগর উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম এবং বিজয়নগর উপজেলার কালাছড়া গ্রামের রুবেল মিয়া চিকিৎসা নিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, সদর থানার ওসি মো. আব্দুর রব, আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্বজনদের কাছে নিহতদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল।
যেভাবে ঘটনা : আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময় ভোর ৫টায় ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ট্রেন আখাউড়া থেকে ছেড়ে যায়। নির্ধারিত যাত্রাবিরতি দিয়ে ট্রেনটি ৫টা ১৬ মিনিটে পাঘাচং স্টেশন অতিক্রম করার পর ইঞ্জিনের পেছনের বগিতে হানা দেয় ডাকাতদল।
আহত যাত্রী খোরশেদ আলম জানান, তিনি একটি আসনে বসা ছিলেন। ট্রেনটি পাঘাচং স্টেশন ছাড়ার পরপরই চার-পাঁচজন মিলে তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে সব কিছু দিয়ে দিতে বলে। তিনি একটি মোবাইল ফোনসেট ও পকেটে থাকা প্রায় তিন হাজার টাকা ডাকাতদের হাতে তুলে দেন। এরই মধ্যে একজন বলে, 'হের কাছে টেহা কম কেরে, হেরে মাইরা লাগা।' তখন কয়েকজন মিলে তাঁকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন। রেললাইনের পাশে কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর জ্ঞান ফিরে পান তিনি এবং স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় চিকিৎসা নেন তিনি। তাঁর মাথায় তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। আখাউড়া থেকেই ডাকাতদল ট্রেনে ওঠে বলে তিনি ধারণা করেন। অন্য আহত যাত্রী মো. রুবেল জানান, তিনি প্রবাসে যেতে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে ঢাকা যাওয়ার জন্য আখাউড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। পাঘাচং স্টেশন থেকেও কয়েকজন এ ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনটি ওই স্টেশন ছাড়ার পর ১০-১৫ জনের ডাকাতদল যাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে। তাঁর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যায় তারা। এক পর্যায়ে ডাকাতরা দুই যাত্রীর গলায় মাফলার পেঁচিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। এরপর তাঁকেও ফেলা দেওয়া হয়।
পুলিশের বক্তব্য : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি মো. আব্দুর রব জানান, খবর পেয়ে কুরুলিয়া ব্রিজের কাছ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশও আসে। ঘটনাস্থল রেলওয়ের আওতাধীন হওয়ায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা রেলওয়ে পুলিশই নেবে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, বগিটিতে পাঁচজন যাত্রী ছিল। পাঘাচং স্টেশন থেকে ১০-১৫ জন উঠে এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় খুনসহ ডাকাতির মামলা দায়ের হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল মজিদ বলেন, এ ঘটনার পর রেলওয়ের পুলিশ বিভাগ খুবই তৎপর জড়িতদের ধরতে।
রেলওয়ের চট্টগ্রামের পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. গিয়াস উদ্দিন বিকেলে জানান, তদন্ত করে এ ঘটনায় অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে তিনজন : সাতটি বগি নিয়ে তিতাস কমিউটার ট্রেনটি আখাউড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অথচ ট্রেনটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র তিনজন পুলিশ সদস্য। ডাকাতি হওয়া বগিটিতে মোট পাঁচজন যাত্রী ছিলেন। আখাউড়া থেকে ছাড়ার সময় বা ডাকাতিকালে ওই বগিতে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। রেলওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেনে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত লোকবল তাঁদের নেই। এ ছাড়া যে ট্রেনে ডাকাতি হয়েছে, সেটির এক বগি থেকে অন্য বগিতে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই।
স্বজনদের আহাজারি ও থানায় মামলা : প্রবাসে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক সুধ মিয়া। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনরা। সেখানে তাঁদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সুধ মিয়ার ভাই মো. খায়ের মিয়া জানান, তাঁর ভাই কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে আসেন। আবার বিদেশে যেতে কাগজপত্র নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন।
নিহত সাহানা বেগমের স্বামী মোসলেম মিয়া বাদী হয়ে বিকেলে আখাউড়া রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ১২। পুলিশ জানায়, মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করা হলেও জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা টেরই পাননি : ভোর সাড়ে ৫টায় এ ঘটনা ঘটলেও ট্রেনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য, পরিচালক (গার্ড), চালক সকাল ১০টা নাগাদ ঘটনা জানতেনই না। পরিচালক কামাল হোসেন ও চালক আবুল কালাম জানান, ঢাকায় পৌঁছার পর টিভি দেখে ও লোকমুখে শুনে তাঁরা বিষয়টি বুঝতে পারেন। এর আগে তাঁরা কিছুই টের পাননি। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল মজিদ জানান, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তিন পুলিশ সদস্যও বিষয়টি বুঝতে পারেননি।
তিন পুলিশ প্রত্যাহার : এ ঘটনায় ট্রেনের দায়িত্বে থাকা পুলিশের তিন সদস্য মকবুল হোসেন, আবু তাহের ও আতিউর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁরা তিনজনই ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
তদন্ত কমিটি : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে যাত্রী হত্যার ঘটনা তদন্তে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট ফারুক আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিহির কান্তি গুহ ও অতিরিক্ত যান্ত্রিক প্রকৌশলী পার্থ সরকার। পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কারণ অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সুপারিশসহ পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তাফাজ্জল হোসেনের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
No comments