স্মৃতি অম্লান by এম শামসুর রহমান
গণিত অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর এএফএম আবদুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল বৃহস্পতিবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশের দশকের প্রথমার্ধের কৃতী ছাত্র আবদুর রহমান। তার শিক্ষকতা শুরু খুলনার দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিবেদিতপ্রাণ ও মেধাবী শিক্ষক হিসেবে তিনি সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেন।
ছাত্রাবস্থায় আবদুর রহমান স্যারের কথা আমি শুনেছি। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় (পাকিস্তান) থেকে অধ্যাপনার পাট চুকিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে যোগদান করলে আমি হলাম তার নবীন সহকর্মী। ১৯৭৫ সালের জুলাই থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হলো আমার নতুন কর্মক্ষেত্র। তবে ছিন্ন কর্মক্ষেত্র আমাদের নিবিড় যোগসূত্র ছিন্ন করেনি কখনও। প্রফেসর আবদুর রহমান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারমান (১৯৭৯-৮২)। বাংলাদেশ গণিত সমিতির প্রেসিডেন্ট (১৯৮৮, ১৯৮৯)। গণিত সমিতির জার্নালের (এঅঘওঞ) সম্পাদকও ছিলেন তিনি কিছুকাল। একসময় বাংলাদেশ গণিত সমিতির মুখপত্র 'গণিত পরিক্রমা'র সম্পাদক ও সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাডিজে ও অন্যান্য সাময়িকীতে তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পেপার প্রকাশিত হয়েছে। সমিতির মুখপত্র 'গণিত পরিক্রমা'য় তিনি জ্ঞানগর্ভ ও সারগর্ভ প্রবন্ধ প্রকাশ করতেন। প্রফেসর আবদুর রহমান উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে স্থিতিবিদ্যা, গতিবিজ্ঞান, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক পুস্তক রচনা করেন। তার প্রণীত 'গণিতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস' (তৃতীয় সংস্করণ, নভেম্বর ২০১১) খুবই মানসম্মত এবং বিদ্বৎসমাজে সমাদৃত একটি গ্রন্থ। জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি ছিলেন সুপণ্ডিত।
গণিত বিভাগের সভাপতির পক্ষে বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন আবদুর রহমান স্যার তৈরি করে দিতেন। পরে বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর এসএম আজিজুল হক এ দায়িত্ব দিলেন আমাকে। প্রফেসর আবদুর রহমান নোবেল জয়ী (১৯৭৯) পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর আবদুস সালামের (১৯২৬-৯৬) স্নেহধন্য ছিলেন। ত্রিয়েস্ত পরিদর্শন এবং লন্ডনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকালে (১৯৫৭-৫৮) তিনি ইম্পিরিয়াল কলেজে বিশ্ববরেণ্য এ বিজ্ঞানীর সাহচর্যে আসেন। গণিত পরিক্রমা সপ্তম খণ্ডে (১৯৯৭) প্রকাশিত 'প্রফেসর আবদুস সালাম স্মরণে' শীর্ষক তার প্রবন্ধে এ সংক্রান্ত আভাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশ গণিত সমিতির সভাপতি হিসেবে আমার কার্যকালে (২০০৮, ২০০৯) সমিতি ১৯ বর্ষীয়ান গণিতবিদকে সম্মাননা প্রদান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আমার সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আবদুর রহমান স্যার সম্মাননায় ভূষিত গণিতবিদদের অন্যতম। বাংলাদেশে গণিত শিক্ষার উন্নতি বিধানে তার অবদান অপরিমেয়।
আবদুর রহমান স্যার ছিলেন নিরহঙ্কার, অমায়িক, মিষ্টভাষী। তার ব্যক্তিত্বের আলো ও মাধুর্য আর আদর্শ চরিত্র মুগ্ধতায় ভরে দিত ছাত্র-শিক্ষক সবার মন-প্রাণ। পৃথিবীর ধূলিধূসরিত রৌদ্রকরোজ্জ্বল সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন এই গণিতবিদ অনন্তের কল্যাণলোকে। কিন্তু আমাদের জন্য রেখে গেছেন গণিত সাধনার স্বর্ণফসল। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। শোকার্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। এই মনস্বী শিক্ষাবিদ, এই সুন্দর মনের মানুষটিকে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। আমাদের স্মৃতিতে তিনি আজও অম্লান।
প্রফেসর এম শামসুর রহমান
গণিতবিদ ও ফেলো, ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশন
ছাত্রাবস্থায় আবদুর রহমান স্যারের কথা আমি শুনেছি। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় (পাকিস্তান) থেকে অধ্যাপনার পাট চুকিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে যোগদান করলে আমি হলাম তার নবীন সহকর্মী। ১৯৭৫ সালের জুলাই থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হলো আমার নতুন কর্মক্ষেত্র। তবে ছিন্ন কর্মক্ষেত্র আমাদের নিবিড় যোগসূত্র ছিন্ন করেনি কখনও। প্রফেসর আবদুর রহমান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারমান (১৯৭৯-৮২)। বাংলাদেশ গণিত সমিতির প্রেসিডেন্ট (১৯৮৮, ১৯৮৯)। গণিত সমিতির জার্নালের (এঅঘওঞ) সম্পাদকও ছিলেন তিনি কিছুকাল। একসময় বাংলাদেশ গণিত সমিতির মুখপত্র 'গণিত পরিক্রমা'র সম্পাদক ও সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাডিজে ও অন্যান্য সাময়িকীতে তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পেপার প্রকাশিত হয়েছে। সমিতির মুখপত্র 'গণিত পরিক্রমা'য় তিনি জ্ঞানগর্ভ ও সারগর্ভ প্রবন্ধ প্রকাশ করতেন। প্রফেসর আবদুর রহমান উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে স্থিতিবিদ্যা, গতিবিজ্ঞান, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক পুস্তক রচনা করেন। তার প্রণীত 'গণিতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস' (তৃতীয় সংস্করণ, নভেম্বর ২০১১) খুবই মানসম্মত এবং বিদ্বৎসমাজে সমাদৃত একটি গ্রন্থ। জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি ছিলেন সুপণ্ডিত।
গণিত বিভাগের সভাপতির পক্ষে বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন আবদুর রহমান স্যার তৈরি করে দিতেন। পরে বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর এসএম আজিজুল হক এ দায়িত্ব দিলেন আমাকে। প্রফেসর আবদুর রহমান নোবেল জয়ী (১৯৭৯) পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর আবদুস সালামের (১৯২৬-৯৬) স্নেহধন্য ছিলেন। ত্রিয়েস্ত পরিদর্শন এবং লন্ডনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকালে (১৯৫৭-৫৮) তিনি ইম্পিরিয়াল কলেজে বিশ্ববরেণ্য এ বিজ্ঞানীর সাহচর্যে আসেন। গণিত পরিক্রমা সপ্তম খণ্ডে (১৯৯৭) প্রকাশিত 'প্রফেসর আবদুস সালাম স্মরণে' শীর্ষক তার প্রবন্ধে এ সংক্রান্ত আভাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশ গণিত সমিতির সভাপতি হিসেবে আমার কার্যকালে (২০০৮, ২০০৯) সমিতি ১৯ বর্ষীয়ান গণিতবিদকে সম্মাননা প্রদান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আমার সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আবদুর রহমান স্যার সম্মাননায় ভূষিত গণিতবিদদের অন্যতম। বাংলাদেশে গণিত শিক্ষার উন্নতি বিধানে তার অবদান অপরিমেয়।
আবদুর রহমান স্যার ছিলেন নিরহঙ্কার, অমায়িক, মিষ্টভাষী। তার ব্যক্তিত্বের আলো ও মাধুর্য আর আদর্শ চরিত্র মুগ্ধতায় ভরে দিত ছাত্র-শিক্ষক সবার মন-প্রাণ। পৃথিবীর ধূলিধূসরিত রৌদ্রকরোজ্জ্বল সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন এই গণিতবিদ অনন্তের কল্যাণলোকে। কিন্তু আমাদের জন্য রেখে গেছেন গণিত সাধনার স্বর্ণফসল। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। শোকার্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। এই মনস্বী শিক্ষাবিদ, এই সুন্দর মনের মানুষটিকে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। আমাদের স্মৃতিতে তিনি আজও অম্লান।
প্রফেসর এম শামসুর রহমান
গণিতবিদ ও ফেলো, ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশন
No comments