যত অভিযোগ

চার্জ-১ : এছাড়া আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে জোরপূর্বক ধরে এনে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর এবং ১ নং শাহ আলী মাজার থেকে হাতে দড়ি বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে পুনরায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে এসে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।
পল্লবের দেহ দু’দিন ঝুলিয়ে রেখে তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারী দ্বারা পল্লবের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলে এবং ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তার প্রধান সহযোগী আলবদর আক্তার গু-া পল্লবের বুকে পর পর ৫টি গুলি করে হত্যা করে। হাতের আঙুল কেটে দেয়। ১৯৭১-এর মার্চ স্বাধীনতাবিরোধীরা পল্লবের অবস্থান জানতে পেরে নবাবপুর থেকে তাকে জোরপূর্বক ধরে মিরপুরে কাদের মোল্লার কাছে নেয়া হয়। পরে কাদের মোল্লার নির্দেশে তার সহযোগীরা পল্লবকে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সেকশন শাহ আলী মাজার পর্যন্ত হাতে দড়ি বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এবং একইভাবে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর সেকশনে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে গাছে ঝুলিয়ে আগুল কেটে দু’দিন পর গুলি করে হত্যা করা হয়। এর দু’দিন পর পল্লবের লাশ মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে কালাপানি ঝিলের পাশে আরও ৭ জনের সঙ্গে মাটি চাপা দেয়।
চার্জ-২ : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আলবদর বাহিনী নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লার তার সহযোগী আলবদর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে মিরপুরের মহিলা কবি মেহেরুন্নেছাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকা-ের দৃশ্য দেখে বাড়ির সিরাজ নামক এক ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
চার্জ-৩ : ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব পিতা - মৃত খন্দকার আব্দুর রউফ, সেকশন-১০, ব্লক-বি, রোড নং-২, প্লট-১৩ মিরপুর, ঢাকার আরামবাগ হতে তার নিজ বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য আসেন। বাসার সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় তিনি পুনরায় আরামবাগের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার জন্য মিরপুর ১০ নং বাসস্ট্যান্ডে গেলে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাসে উঠার আগেই খন্দকার আবু তালেবকে ধরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তাকে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউসে নিয়ে আসে। এরপর আসামি আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তাকে জবাই করে হত্যা করে।
চার্জ-৪ : আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী বাহিনী আলবদর সদস্য ও পাকি সৈন্যদের নিয়ে হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। একাত্তরের ২৫ নবেম্বর ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচর (শহীদনগর) এবং পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রামে কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্যসহ পাকিস্তানী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর স্থানীয় বাড়িঘড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সেখানে যাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন, ওসমান গনি, গোলাম মোস্তফা, দরবেশ আলী, আরজ আলী, রাজা মিয়া, আব্দুর রহমান, আব্দুল কাদির, সোহরাব হোসেন, আব্দুল লতিফ, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলীসহ আরো অনেকে। এই হত্যাকা-ের পর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা মোজাফফর আহম্মেদ খানের বাড়িসহ দুটি গ্রাম আগুন ধরিয়ে দেয়।
চার্জ-৫: মোল্লার নেতৃত্বে একাত্তরের ২৪ এপ্রিল তার সহযোগী আল-বদর বাহিনীর বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবহিনীর সহায়তায় আলোকদি গ্রাম ঘিরে নির্বিচারে গুলি করে ৩৪৪ জনকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৪ এপ্রিল ফজরের নামাজ পড়ে পাকবাহিনী হেলিকপ্টারযোগে তুরাগ নদীর পারে আলোকদি গ্রামের পাশ্চিম পাশে অবতরণ করে। পূর্বদিক হতে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য ও কতিপয় অবাঙালী বিহারীদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় ও যোগসাজশে আলোকদি গ্রাম ঘিরে ফেলে ও নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে বাসু মিয়া, জহিরুল হক ওরফে জোরা মোল্লা, জেরাত আলী, ফোয়াদ আলী, শুকুর মিয়া, আওয়াল মোল্লা, ছলে মোল্লা, রুস্তম আলী ব্যাপারী, করিম মোল্লা, জয়নাল মোল্লা, কাশেম মোল্লা, বদরউদ্দিন, বিষু মোল্লা, অজল হক, ফজল হক, রহমান ব্যাপারী, নবী মোল্লা, আলামত মিয়া, মোকলেচুর রহমান, ফুলচান, নওয়াব মিয়া, ইয়াছিন ভানু, লালুচান ব্যাপারী, সুনু মিয়াসহ ৩৪৪ জনের অধিক লোককে হত্যা করা হয়।
চার্জ-৬ : আব্দুল কাদের মোল্লা, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তার আলবদর বাহিনী নিয়ে শহীদ হযরত আলী লস্করের বাড়িতে ঢুকে মধ্যযুগীয় তা-ব চালায়। ঢাকার মিরপুরের ১২ নং সেকশনের কালাপানির ৫নং লাইনের ২১ নম্বর বাড়িতে এই তা-ব চালানো হয়। সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলী লস্করকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী আমেনা ও দুই শিশু মেয়ে খোদেজা ও তাছলিমাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ছোট ছেলে বাবুু। যার বয়স মাত্র ২ বছর তাকে মাটিতে আছড়িয়ে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় মেয়ে আমেনাকে (১১) পালাক্রমে ১২ জন মিলে ধর্ষণ করে।
একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে শহীদ হযরত আলী লস্কর হাফাতে হাফাতে দৌড়ে তার ঘটনাস্থলের বাড়িতে আসে।
তখন বাইরে থেকে আসামি কাদের মোল্লার নেতৃত্বে বিহারী আক্তার গু-াসহ ১২/১৩ জন বিহারী পাকিস্তানী সেনা নিয়ে উক্ত হযরত আলীর বাড়িতে ঢোকে এবং বাইরে থেকে দরজায় লাথি মেরে হয়রত আলীকে দরজা খুলে দিতে বলে। দরজা না খুললে বোমা মারবে। এর পরও হযরত আলী লস্কর দরজা না খুললে আসামীরা বোমা মেরে দেয়। এবং এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তখন হযরত আলী লস্কর একটি দা হাতে নিয়ে দরজা খোলে। সঙ্গে সঙ্গে আসামি কাদের মোল্লার নির্দেশে পাক আর্মিরা ঘরে ঢুকেই প্রথমে হযরত আলী লস্করের পেটে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে হযরত আলী লস্কর গুলি খেয়ে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তখন হযরত আলীর স্ত্রী আমিনা (অন্তঃসত্ত্বা) চিৎকার দিয়ে ঘর থেকে বের হলে আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে পাকিস্তানী আর্মি ও সঙ্গে থাকা বিহারী হযরত আলী লস্করের স্ত্রী আমিনা বেগমকে জবাই করে হত্যা করে। এরপর তার ৩ নম্বর মেয়ে (বয়স অনুমান ৯ বছর) জবাই করে হত্যা করা হয়। পরে ৪র্থ মেয়ে তাসলিমাকে (বয়স ৬/৭ বছর) তাকেও জবাই করে হত্যা করা হয়। ছোট শিশু (বয়স অনুমান ২ বছর) বাবুকে মাটিতে আছড়াইয়া হত্যা করা হয়। এ দৃশ্য দেখে ঘরের ভিতর ট্রাংকের পিছন লুকিয়ে থাকা হযরত আলী লস্করের ২য় মেয়ে (বয়স অনুমান ১১ বছর) চিৎকার দেয়। এই চিৎকার শুনে আসামি আব্দুল কাদের মোল্লার সহযোগী (পরবর্তীতে আলবদর) উক্ত আমেনাকে চৌকির নিচে ট্রাংকের পিছন থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে তার পরনে থাকাপ্যান্ট-ফ্রক খুলে ফেলে বিবস্ত্র করে ঘরের মেঝেতে ফেলে একজন একজন করে ধর্ষণ করে।

No comments

Powered by Blogger.