বিএনপি নামে আলাদা কোন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন আছে কি? by মাসুদা ভাট্টি

চলে গেল ৭ মার্চ। বাঙালী জাতির ইতিহাসের আরেকটি মাইলফলক। প্রশ্নের অপো থাকে না যে, এই দিনটিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সফলতা অর্জনের পর থেকে ৭ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত ঘটনাবলীকে যদি প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে ধরি তাহলে সর্বাত্মক যুদ্ধের শুরু এই ৭ মার্চেই।
এই দিনের পর থেকে বাঙালী আর বসে থাকেনি, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলেছে। যার যা আছে তাই-ই নিয়ে প্রস্তুত হয়েছে মুক্তির যুদ্ধযাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর এই দিনটির বক্তৃতাকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করি তাহলে আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, তিনি একই সঙ্গে আসন্ন স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালীকে সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে তিনি বাঙালীকে প্রস্তুত হতে বলেছেন মুক্তির জন্য। তিনি স্বাধীনতা এবং মুক্তিকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলেননি। তিনি দুটো বিষয়কেই ভিন্ন অবস্থানে রেখে বাঙালীকে ভবিষ্যত দিক্-নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি তো চাইলেই বলতে পারতেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবং এখানেই শেষ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বললেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবং তারপর একটু থেমে বললেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি বললেন, স্বাধীনতা আসবেই, বাঙালীর স্বাধীনতাকে কেউ 'দাবায়ে' রাখতে পারবে না। তিনি হুমকি দিলেন 'আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো।' তিনি হুকুম দিলেন, 'অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকবে, ব্যাংক বন্ধ থাকবে।' বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, 'আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো' এবং একজন দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক নেতার মতো বললেন, "মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্।" এ রকমভাবে কোন জাতির বর্তমানের নির্দেশ আর ভবিষ্যতের রূপরেখা টেনে দেয়ার উদাহরণ আর কোন নেতার ক্ষেত্রে আছে কি- না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এখানেই বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব এবং বাঙালী জাতি-ইতিহাসে ৭ মার্চের গুরুত্ব ও মহত্ত্ব। ৭ মার্চের পরবর্তী ইতিহাস আমাদের জানা। পাকিস্তানী সামরিক সরকার এর পর যা কিছুই করেছে তাই-ই দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের বিপক্ষে গেছে। পৃথিবীর অন্যতম আধুনিক ও সুশিতি সামরিক বাহিনীর প্রতিটি কৌশলকে বাঙালী হাস্যকর প্রমাণ করেছে এবং তাদেরকে যথেষ্ট নাকানি-চুবানি খাইয়েছে। যেহেতু তারা অস্ত্রে এবং শক্তিতে বলীয়ান সেহেতু তারা দেদার বাঙালী হত্যায় সম হয়েছে। নইলে হয়ত এই ইতিহাসও ভিন্ন হতো। বাঙালীর হাতে সঠিক অস্ত্র আর প্রশিণ থাকলে হয়ত ৯ মাস না, তার আগেই স্বাধীনতা আসত এবং ৯০ হাজার পাকিসত্মানী সৈন্যের অর্ধেকেরই কবর রচিত হতো এখানে। কিন্তু সেটা হয়নি মূলত অস্ত্র আর প্রশিণের অভাবে এবং সেই সঙ্গে কুলাঙ্গার কিছু বাঙালীর পাকিসত্মানের পাবলম্বন করার কারণে। তারপরও বাঙালীর ইতিহাস বিজয়ের। শুধু দুঃখ এই যে, এত বড় ত্যাগ আর তের পর যে বিজয় অর্জিত হলো তার ইতিহাসের বিকৃতি শুরু হলো যুদ্ধ শুরুর সেই মাহেন্দ্রণ থেকে। আমরা আজ প্রশ্ন তুলতে পারি যে, ২৫ মার্চের সেই কালরাতে জিয়াউর রহমান কী ভূমিকা পালন করছিলেন? তিনি কি চট্টগ্রামে পাকিসত্মানীদের সঙ্গে বাঙালী নিধনের সেই অপারেশন সার্চলাইটে অংশ নিয়েছিলেন? নাকি গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছিলেন? তারপর ২৬ মার্চ সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে যাওয়ার পথে তিনি যে বিদ্রোহ করে পালালেন, তার ইতিহাস বলতে গিয়ে এতদিন ধরে প্রচার চালানো হয়েছিল যে, তিনি নাকি তার সহযোগী পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে পালিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি, সেই সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু হয় অনেক পরে। পালিয়ে জিয়াউর রহমান কালুরঘাট গেলেন এবং সেখানে যে কাজটি তিনি করলেন তা বাঙালী জাতি-ইতিহাসে এক স্থায়ী ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তিনি সেখানে গিয়ে প্রথমে পাঠ করলেন বঙ্গবন্ধুর নামে কয়েকটি বাক্য। আবার এক সময় তাঁর মনে হলো তিনি নিজেই 'প্রভিন্সিয়াল চীফ' এবং সেই মর্মেও ঘোষণা দিলেন। শুরু হলো আমাদের ইতিহাস নিয়ে টানাটানি। সন্দেহটা আসলে এখানেই, পাকিস্তানের যুদ্ধ-কৌশলে যদি পরাজয় ঘটে তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে নিশ্চয়ই কোনও প্ল্যান থেকে থাকবে এবং সেই প্ল্যানের অংশ হিসেবে জিয়াউর রহমানের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এবং কালুরঘাটে এসে একেকবার একেক ঘোষণা পাঠকে মিলিয়ে দেখলে পাকিস্তানের ব্যাক-আপ প্লানের ধারণাটি বেশ খানিকটা উন্মোচিত হয়। ধরে নিচ্ছি, জিয়াউর রহমান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে, দেশকে ভালবেসেই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধপরবর্তীকালে তাঁর ভূমিকা কী ছিল? বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং হত্যাপরবর্তীকালে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা থেকে শুরু করে হত্যাকারীদের সঙ্গে তাঁর আচরণ এমনকি হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রম্নদ্ধ করা, সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সৈনিকদের একে একে হত্যা করা; পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে পুকুর খুঁড়ে পাকিস্তানের পরাজয়ের চিহ্ন মুছে ফেলা_ এসব ঘটনাকে এক এক করে সাজিয়ে বিশেস্নষণ করলে আমাদের কাছে যে চিত্রটি পরিষ্কার হয় তাহলো জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কখনও ধারণ তো করেনইনি, বরং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালীর ভবিষ্যত রূপকল্পের যে চরিত্র ফুটে ওঠে বা বঙ্গবন্ধু যে মুক্তির কথা আমাদের বলেছিলেন, তাঁর ভাষণে জিয়াউর রহমান সেই মুক্তিকেই যেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছেন তাঁর কর্মকা-ের ভেতর দিয়ে। বাঙালীর আত্মত্যাগে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু জিয়াউর রহমানের একক প্রচেষ্টায় বাঙালীর মুক্তির পথ বন্ধ হয়েছে এবং তাঁর স্ত্রী-সনত্মানেরা রাষ্ট্রৰমতায় গিয়ে বাঙালীর মুক্তির পথ চিরতরে বন্ধ করার দায়িত্বটি রিলে রেসের পতাকার মতো বহন করে চলেছেন মাত্র। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
১. জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সম্পৃক্ত ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর জাতীয় মুক্তির ল্যে গৃহীত চার মূলনীতিকে ধ্বংস করে বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হত্যা করেছেন। বেগম জিয়া মতায় এসে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- দিবসকে নিজের জন্মদিনের কেক কেটে উদ্যাপন করার মতো নগ্নতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
২. জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-বিরোধীদের পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছেন। বেগম জিয়া চিহ্নিত এই রাজাকার, আলবদরকে মতায় নিয়ে গেছেন, মন্ত্রী বানিয়েছেন।
৩. জিয়াউর রহমান যদিও নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে কখনও দাবি করেননি, কিন্তু বেগম জিয়া মতায় গিয়েই এই কাজটি করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে নিজের স্বামীকে (যদিও স্বামী হিসেবে যতটা নয়, তার চেয়ে তাঁর দলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই বেশি) স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গোটা স্বাধীনতা যুদ্ধকেই বিকৃত এবং নিতানত্মই মামুলি ঘটনায় পরিণত করেছেন। কারণ যে যুদ্ধ দীর্ঘ পঁচিশ বছরের বঞ্চনা আর নির্যাতনের সর্বশেষ অধ্যায়, তা কেবল একজন মেজরের ঘোষণার ফল হিসেবে বর্ণনা করা হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্পূর্ণই খেলো করা হয়_এটা কি বলার অপো রাখে?
৪. জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে ধর্ম এবং অর্থকে টেনে এনেছিলেন ব্যাপকার্থে, যা ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সেই 'মুক্তির সংগ্রাম'-এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আর বেগম জিয়া ও তাঁর পুত্রদ্বয় রাজনীতিতে ধর্ম ও টাকাকে করেছেন মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে। এর বাইরে জনগণের ভোট কিংবা আশা-আকাঙ্ৰাকে তাঁরা দেখেছেন সামান্য ব্যাপার হিসেবে।
৫. জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে মতা, অস্ত্র আর অর্থকে ব্যবহার করেছেন, এবং নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে দেবেন। জেলের ভেতর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির ধারাবাহিকতাকে পুরোপুরি স্তব্ধ করে দিয়েছেন। আর বেগম জিয়া ও তাঁর পুত্র শুরু করেছেন মনোনয়ন-বাণিজ্য, গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিরোধী রাজনীতিবিদদের হত্যা এবং দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে জাতীয় অর্থনীতিতে ধস নামিয়ে আনা। একই সঙ্গে রাজনীতির নামে রাজনীতিবিদদের অর্থ আর বিত্তের মালিক হওয়ার পথ দেখিয়ে রাজনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়ার কাজটিও জিয়া পরিবারের আদর্শ।
৬. ক্যান্টনমেন্টে বসে রাজনৈতিক দল গঠন করে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীকে দেশসেবার পরিবর্তে রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছেন এবং কী করে নির্বাচিত সরকারের সমানত্মরালে একটি সেনা-সরকারও কাজ করতে পারে সে পথ উন্মুক্ত করেছেন। সেনাবাহিনীকে মতার স্বাদ পাইয়ে দিয়েছেন জিয়াউর রহমান; এরশাদ করে তুলেছেন লোলুপ এবং বেগম জিয়া করেছেন আগ্রাসী। আমাদের সেনাবাহিনী এই লেগেসি থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারছে না কোনভাবেই। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় তাই তারা ডাঙায় তোলা মাছের মতো খাবি খায় শুধু এবং যে কোন সুযোগে গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকারকে বেকায়দায় ফেলার সুযোগ খোঁজে।
৭. জিয়াউর রহমান এই ভূখ-কে বিভক্ত করেছিলেন বাঙালী ও বাংলাদেশী এই দুই সত্তায়। আদিবাসীদের জায়গা-জমি কেড়ে নিয়ে সেখানে সমতল থেকে লোকজন নিয়ে বসিয়েই ক্ষান্ত হননি, সেখানে তিনি অকাতরে আদিবাসীদের হত্যা করেছেন। পাকিসত্মানী গোয়েন্দা বাহিনীকে সুযোগ করে দিয়েছেন ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার। বেগম জিয়া মতায় এসে জিয়াউর রহমানের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত তো রেখেছেনই, সেই সঙ্গে আদিবাসীদের উদ্বাস্তু করে বরাদ্দ দিয়েছেন তাঁর সমর্থকগোষ্ঠী বাঙালীকে। শুধু জমি বরাদ্দই নয়, তাদেরকে রেশনের ব্যবস্থা করে আদিবাসী ও বাঙালীর মধ্যকার পার্থক্যকে আরও স্পষ্ট করেছেন।

৮. জিয়াউর রহমান দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের জন্ম দিয়েছিলেন বাঙালীকে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদে দীক্ষা দিয়ে। আর বেগম জিয়া বাংলা ভাই, হিযবুত তাহ্রীর, জেএমবি'র মতো উগ্রবাদী সংগঠনকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন কেবলমাত্র নিজের রাজনীতিকে নিরঙ্কুশ করতে।
৯. জিয়াউর রহমান পরাজিত পাকিস্তান ও পাকিস্তানী ঘরানার সেনা রাজনীতিকে এদেশের মাটিতে স্থাপন করেছেন এবং বেগম জিয়া ও তাঁর সহযোগী প্রতিষ্ঠান জামায়াতে ইসলামী যেন গোটা পাকিসত্মানকে এনেই বাংলাদেশে প্রতিস্থাপন করেছেন। আজকে আমাদের রাজনীতি, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা সর্বত্রই যেন পাকিস্তানের সেনা-রাজনীতির প্রতিফলন বিচ্ছুরিত হতে দেখা যাচ্ছে।
১০. জিয়াউর রহমান যদি জাতি ও রাষ্ট্রের গায়ে কিছু স্থায়ী ত তৈরি করে থাকেন তাহলে বেগম জিয়া ও তাঁর পুত্র এই তে ক্যান্সারের বীজ রোপণ করেছেন, যা এখন মহীরূহে রূপান্তরিত হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, উদাহরণের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে বলে এখানেই ইতি টানি। এখানে একটি বিষয় লণীয়; জিয়াউর রহমান এবং বেগম জিয়া ও তাঁর পুত্ররা যে কাজগুলো করেছেন তা আসলে পরাজিত পাকিসত্মানের এবং পাকিসত্মানের এদেশীয় এজেন্ট জামায়াতের করার কথা। কিন্তু তারা সরাসরি তা না করে এগুলো করিয়েছে জিয়া পরিবারকে দিয়ে। আসলে যে কথা বলার জন্য এত কথা বলা, তাহলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এই ঐতিহাসিক ভাষণকে পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত এখন ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তারা এই দিনে পালন করছে তারেক জিয়ার কারাবন্দী দিবস হিসেবে। তারা এই দিনকে ঘোষণা করেছে কালো দিবস হিসেবে। ভেবে দেখুন, মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত অর্জনকে গিলে ফেলে জামায়াত চক্র এখন হাত বাড়িয়েছে ৭ মার্চের দিকে। কারণ ওরা বুঝতে পারছে যে, ওদের ঘোষক প্রকল্প সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই ৭ মার্চের কারণেই। একে হাল্কা করা না গেলে ঘোষক প্রকল্প প্রতিষ্ঠা পাবে না, তাই এখন ওরা ৭ মার্চ নিয়ে পড়েছে। এরপর আর বাকি থাকল কী? বস্তুত কিছুই না। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তনীরা আত্মসমর্পণ করে চলে গেলেও রেখে গিয়েছিল কিছু রক্তবীজ। আজ তাই-ই বিশাল শক্তিধর হয়ে বাঙালীর সমস্ত অর্জনকে বিসর্জন দিতে বসেছে। জিয়াউর রহমান যে বিএনপির খোলসে জামায়াতকে পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন আজ তা আর কোনভাবেই গোপন থাকল না। বিএনপির খোলস থেকে আজ জামায়াত সর্বাত্মকভাবে আত্মপ্রকাশ করল। ৭ মার্চকে কালোদিবস ঘোষণার মাধ্যমে দেশবাসী সেই প্রমাণটিই পেল। দল হিসেবে বিএনপির আর কোন প্রয়োজন থাকল কি?

ঢাকা, ১২ মার্চ শুক্রবার, ২০১০।
masudabhatti@hotmail.com

No comments

Powered by Blogger.