যুদ্ধাপরাধী বিচারের পক্ষে জনঐক্য গড়তে সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা কাল

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থনসূচক সক্রিয় জনঐক্য গড়ে তুলতে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
আগামীকাল শনিবার সকাল ৮টায় দু'দিনব্যাপী এ যাত্রা শুরম্ন হবে টিএসসি প্রাঙ্গণ থেকে। সংস্কৃতিকর্মীরা এই অভিযাত্রায় দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাবেন গণহত্যা ও মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধ সংক্রানত্ম তথ্যভা-ার গড়ে তোলার। যেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াকে জাতি সম্মিলিতভাবে জোরদার করে তুলতে পারে। বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযাত্রার নানা দিক তুলে ধরে বক্তৃতা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ছায়ানটের সভাপতি ড. সন্জীদা খাতুন, রামেন্দু মজুমদার, সৈয়দ হাসান ইমাম, আসাদুজ্জামান নূর, মফিদুল হক, জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীর, চিত্রশিল্পী মনিরম্নজ্জামান।
ড. সন্জীদা খাতুন বলেন, আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা বাসত্মবিক রাজনীতির লোক নই। কিন্তু জীবন রাজনীতির বাইরে নয়, এমনকি সংস্কৃতিও। আমাদের সবারই ধর্ম আছে, কেউ এর বাইরে নই। সবার ধর্মই বলে শানত্মির কথা, বাঙালীরও। তবে বাঙালীর সংস্কৃতিও শানত্মির কথা বলে। এই শানত্মি ও কল্যাণ যদি আমরা আস্বাদন করতে না পারি তাহলে মুক্তি পাব না। আর এই মুক্তি ও কল্যাণ আসবে তখন, যখন নিজ দেশে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে সংস্কৃতিচর্চা করতে পারব। এই সুযোগ তখনই আসবে, যখন দেশে কোন মৌলবাদী ও যুদ্ধাপরাধী থাকবে না, দেশ ফিরে যাবে '৭২-এর সংবিধানে। এ জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। কারণ যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তা বাসত্মবায়ন করতে হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে এবং '৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, সংস্কৃতিকর্মীরা সব সময়ই জনতার সঙ্গে ও কাছাকাছি রয়েছে। এবারও আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তাদের কাছেই যাচ্ছি। জনতার শক্তি কাজে লাগাতেই আমাদের এই অভিযাত্রা।
সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরম্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা নস্যাতের জন্য নানা চক্রানত্ম শুরম্ন হয়ে গেছে। তাই আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা মনে করেছি এ ব্যাপারে জনতার সহযোগিতা নেয়া দরকার, এমনিতেই জনতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে এককাট্টা রয়েছে, তার পরও জনতাকে প্রতি মুহূর্তে সজাগ থাকতে আমাদের এই অভিযাত্রা।
গোলাম কুদ্দুছ অভিযাত্রার রোডম্যাপ তুলে ধরে বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, আবৃত্তি শিল্পী, পথনাটকের দল ও বরেণ্য শিল্পীদের ৪০ জনের একটি দল নিয়ে শনিবার সকাল আটটায় টিএসসি থেকে আমরা রওনা দেব। সকাল ৯টায় সোনারগাঁও, বেলা ১১টায় গৌরিপুর (মুন্সী ফজলুর রহমান কলেজ মাঠ), দুপুর সাড়ে ১২টায় চান্দিনা (মহিলা কলেজ মাঠ) এবং বিকেল ৫টায় কুমিলস্নায় (টাউন হল মাঠ) পেঁৗছব। তবে পথের প্রতিটি যাত্রাবিরতিতে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। আমাদের পেঁৗছানোর আগেই উলিস্নখিত স্থানগুলোতে জোটের স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা, মুক্তিযোদ্ধা ও ১৪ দলের কর্মীরা প্রচার প্রচারণা চালাবে। কুমিলস্নায় রাতযাপনের পরের দিন সকাল ৯টায় সুয়াগাজী, ১১টায় চৌদ্দগ্রাম (যুদ্ধাপরাধীদের বড় ঘাঁটি ছিল, তাই এখানে বড় অনুষ্ঠান হবে), সাড়ে ১২টায় ফেনী (শহীদ মিনার), আড়াইটায় মীরসরাই (জোড়ালগঞ্জ) এবং সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে পেঁৗছব। তিনি আরও বলেন, সব স্থানেই স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার দ্বিতীয় পাঠ শুরম্ন হবে ১৯ ও ২০ মার্চ, ঢাকা থেকে নীলফামারী।
ওয়াহিদুল হকের জন্মবার্ষিকী ও বসনত্ম উৎসব কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, বহুগুণে গুণান্বিত বিশিষ্ট সাংবাদিক ওয়াহিদুল হকের জন্মবার্ষিকী, বসনত্ম উৎসব ও তাঁর পিতা প্রয়াত এটি মাজাহারম্নল হক স্মরণে তারানগর ইউনিয়নের আটি ভাওয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সরোজ সংস্কৃতিবৃত্ত, কল্যাণপরম্পরার বসনত্মোৎসব ও শুদ্ধ সঙ্গীতের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনন্দ বিষাদের এ বসনত্মে বৃহস্পতিবার ওয়াহিদুল হকের জন্ম উপলৰে বসনত্মোৎসব এবং মাজাহারম্নল হক স্মরণে রাতভর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আয়োজন, সরোজ সংস্কৃতিবৃত্ত ও কল্যাণপরম্পরা। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরম্ন হয় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যনত্ম এবং দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় রাত ৮-৩০ হতে সকাল ৭টা পর্যনত্ম। প্রথম পর্বে বসনত্ম উৎসবের শোভাযাত্রা, একক ও সমবেত সঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য ছাড়াও ছায়ানট এবং সরোজ সংস্কৃতিবৃত্তের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার ছেলেমেয়েরা অংশগ্রহণ করেন।
শেলটেক পদক পেলেন অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য গুণী ব্যক্তিদের প্রতিবছর শেলটেক পদক দিয়ে আসছে শেলটেক। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর শেলটেক পদক ২০০৯ পেয়েছেন রন্ধনশিল্পী সিদ্দিকা কবীর। রান্না ও পুষ্টিবিষয়কে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তাকে এই পদকে ভূষিত করা হয়। বৃহস্পতিবার শেলটেক টাওয়ারে অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীরের হাতে ক্রেস্ট ও নগদ এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। আরও উপস্থিত ছিলেন শেলটেকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী কুতুবউদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তৌফিক এম সেরাজ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.