সাড়ে তিন শ খুন ও ধর্ষণের অপরাধে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন-অপ্রত্যাশিত রায়ে জাতি স্তম্ভিত ক্ষুব্ধ by আশরাফ-উল-আলম ও এম বদি-উজ-জামান

'এ রায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যাখ্যান করলাম। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিকল্প হতে পারে না। এ রকমের রায় কখনো হয় না। এতে জাতি স্তম্ভিত হয়েছে।'
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেনের কণ্ঠের এই দীর্ঘশ্বাস গোটা বাংলাদেশের হৃদয় থেকেই উৎসারিত হয়। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একাত্তরে সাড়ে তিন শরও বেশি নারী-পুরুষকে হত্যার অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলেও মৃত্যুদণ্ডের বদলে শুধু কারাদণ্ড হওয়ায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিকভাবেই হতাশা ব্যক্ত করেন। বিস্ময় প্রকাশ করে মামলার প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী প্রশ্ন তোলেন, 'আর কতজনকে হত্যা বা ধর্ষণ করলে আসামিকে ফাঁসি দেওয়া যাবে?' ট্রাইব্যুনালে রায় শুনতে আসা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন বলে ওঠেন, 'বরং আমরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তাঁদেরকেই ফাঁসিতে ঝোলান।' আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। জনগণ অন্য রায় আশা করেছিল। কিন্তু তা হয়নি। এ রায়ে জনগণ হতাশ।
এ ধরনের মর্মস্পর্শী সব হতাশাধ্বনির পাশাপাশি সারা দেশে সর্বস্তরের মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- 'এ রায় মানি না।' ক্ষোভে-দুঃখে মানুষ নেমে আসে রাজপথে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। সন্ধ্যার পর থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। মশাল, মোমবাতি জ্বালিয়ে দীর্ঘ মিছিল নিয়ে একে একে এসে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা। তারা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলে শাহবাগ থেকে টিএসসি চত্বর পর্যন্ত। সবার কণ্ঠে একই দাবি- 'কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই।'
গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দলের সদস্যরাও অপ্রত্যাশিত রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়ায় দেশবাসী হতাশ।
চাঁদপুরের মতো অনেক জেলায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন সকালে আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতি নেয়; কিন্তু রায় ঘোষণার পরমুহূর্তেই সে আনন্দ রূপ নেয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায়। কালের কণ্ঠের কাছে অনেকে বলেন, তাঁদের প্রত্যাশা ছিল 'কসাই কাদের' হিসেবে পরিচিত কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই হবে। কিন্তু যে রায় হলো, তাতে সবাই বিস্মিত, মর্মাহত। একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আশপাশেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল সকালে আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতি নিয়ে জড়ো হয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওদিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে একই উদ্দেশ্যে জড়ো হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। রায় হওয়ার পর তারা সবাই হতাশ মনে ফিরে যায়। এ ছাড়া রায় ঘোষণার পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল বের করে জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রীসহ বাম ছাত্রসংগঠনগুলো। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে তারা প্রয়োজনে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেয়। দোয়েল চত্বরে ছাত্রলীগ নেতারা সমাবেশ করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সারা দেশে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করার ঘোষণা দেন।
গতকালের রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এই পাঁচটি অভিযোগের প্রতিটি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ২০(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ছয়টি অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। এই ছয়টি অভিযোগের মধ্যে একটি গণহত্যার (কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর) অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমাণিত না হওয়ায় সেটি থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। বাকি পাঁচটির মধ্যে দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় (মিরপুরের আলোকদী গ্রামে গণহত্যা ও ধর্ষণ) তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর তিনটি অভিযোগ (এগুলোও হত্যাকাণ্ড) তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেক অভিযোগে তাঁকে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে রায়ে বলা হয়েছে, সব সাজা একসঙ্গে চলবে। অর্থাৎ ১৫ বছরের কারাদণ্ড যাবজ্জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। এ কারণে কাদের মোল্লাকে শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা, পরবর্তী সময়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকার মিরপুরে 'কসাই কাদের' হিসেবে খ্যাত আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলায় রায়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি মামলার নিষ্পত্তি হলো। তবে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় জামায়াতের কোনো কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে ও কারাবন্দি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রথম রায়। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ ফরিদপুরে বাচ্চু রাজাকার নামে খ্যাত জামায়াতের সাবেক রুকন পলাতক মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে প্রথম রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে আবুল কালামকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এরপর পর্যায়ক্রমে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার সম্পন্ন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আপাতত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে।
একাত্তরের ঘাতক, দালালসহ মানবতাবিরোধী বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০ বছরেরও বেশি আগে শহীদজননী জাহানারা ইমাম, কবি বেগম সুফিয়া কামালসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ আন্দোলন শুরু করেছিল। দুটি মামলার রায়ের পর ওই আন্দোলন এত দিন পর সফলতা অর্জন করেছে বলে মনে করা হলেও বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, গতকালের রায় জাতির আশা মেটাতে পারেনি। কোথায় যেন গলদ রয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের পাশে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষ ও সংবাদকর্মীরা ভিড় করেন। সকাল থেকে সেখানে কড়া নিরাপত্তা বসানো হয়। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সকাল ১০টার পর ট্রাইব্যুনালে সংবাদকর্মীদের ঢোকার মূল গেট খুলে দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের অনুমোদনপ্রাপ্তরা ট্রাইব্যুনালে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় আসামি কাদের মোল্লাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। প্রথমে তাঁকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয়। বিচারকরা এজলাসে বসার আগেই সাড়ে ১০টায় তাঁকে এজলাস কক্ষের আসামির কাঠগড়ায় নেওয়া হয়।
রায় শোনার জন্য গতকাল ট্রাইব্যুনাল কক্ষে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মফিদুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধ শহিদুল হক মামা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক হাফিজুর রহমান কার্জন প্রমুখ। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, মুরাদ রেজা ও মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি এ কে এম সাইফুদ্দিন, সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, কাদের মোল্লার মামলার প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী উপস্থিত হন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সদস্যরাও সেখানে আসেন।
আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা রায় শুনতে আসেননি। তবে কাদের মোল্লার পক্ষে অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ আলী চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম, নাজেব মোমেন, গাজী তামিমসহ কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। কাদের মোল্লার বড় ছেলে হাসান জামিল ও বড় মেয়ে আমাতুল্লাহ পারভীন রায় শুনতে উপস্থিত হন।
সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সদস্য বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম এজলাসে ওঠেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রায় ঘোষণা করতে সবার সহযোগিতা কামনা করে জানান, রায়টি ১৩২ পৃষ্ঠার এবং এতে ৪২৯টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ অর্থাৎ ৩৫ পৃষ্ঠা পড়ে শোনানো হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ট্রাইব্যুনালের সদস্য মো. শাহিনুর ইসলাম, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ে শোনান।
রায় ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত বিশিষ্টজনরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। রায়ের বিষয়ে তাঁরা যখন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন তখন প্রত্যেকের চোখে-মুখে হতাশা ও ক্ষোভ ফুটে উঠছিল। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু কালের কণ্ঠকে বলেন, এ রায়ে জাতি হতাশ হয়েছে। দীর্ঘদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আশা করেছিলাম কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড হবে।' তিনি আরো বলেন, শহীদ পরিবারেরও প্রত্যাশা ছিল অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হবে, কিন্তু হয়নি। ফলে তারাও হতাশ হয়েছে।
মামলায় প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, 'আসামির বিরুদ্ধে গণহত্যা ও ধর্ষণসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। এ রায়ে খুব হতাশ হয়েছি।' তিনি বলেন, 'আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছিলাম। আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করে আবেদন জানিয়েছিলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে। আমরা আসামি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। এ পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে আছে- পল্লবীর আলোকদী গ্রামেই ৩৪৪ জন নিরস্ত্র নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা, আওয়ামী লীগ করার কারণে হযরত আলীর বাড়িতে ঢুকে হযরত আলী, তাঁর স্ত্রী, তিন সন্তানকে হত্যা, ১১ বছরের এক নাবালিকাকে গণধর্ষণ, কবি মেহেরুননেসার বাড়িতে ঢুকে পাঁচজনকে হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব ও কলেজছাত্র পল্লবকে ধরে নিয়ে হত্যা। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর পরও শাস্তি হলো যাবজ্জীবন!' তিনি আরো বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করেছিলাম। কিন্তু আজ বড় দুর্ভাগা মনে হচ্ছে নিজেকে।'
শুধু প্রসিকিউটর নন, এ রায়ে প্রচণ্ড হতাশা ব্যক্ত করেছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান ও এম সানাউল হক। রায়ের পর তাঁরা পৃথক প্রতিক্রিয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সচিবালয়ে তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'ট্রাইব্যুনাল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন। রায়ের কপি এখনো দেখিনি। কাজেই রায়ের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এ রায়ই চূড়ান্ত নয়। আইনানুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আছে।'
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, 'আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম তাঁকে চরম শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে; কিন্তু তা হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ সাজা একসঙ্গে চলবে। ফলে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, 'এ রায়ে জাতির সঙ্গে আমিও হতাশ হয়েছি।' 'এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না' জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রায়ের কপি পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, 'আমাদের প্রত্যাশা ছিল মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু তা হয়নি। ট্রাইব্যুনাল যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই দিয়েছেন। অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণের পরও কেন এ সাজা হলো তা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি দেখে পর্যালোচনা করা হবে। এরপর আপিল করা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আবদুল হান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, 'বিচারকের দৃষ্টিতে যেটা ভালো মনে হয়েছে তাঁরা সে রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তার পরও যে রায় দেওয়া হলো তাতে তদন্ত সংস্থার সদস্য হিসেবে অসন্তুষ্ট হয়েছি। এ রায়ে ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপট প্রতিফলিত হয়নি।'
তদন্ত সংস্থার আরেক সদস্য এম সানাউল হক বলেন, 'তদন্ত সংস্থা যে সঠিকভাবেই তদন্ত করেছে তা এ রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের আশা ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। এ রায়ে হতাশ হয়েছি। তার পরও ট্রাইব্যুনালের রায়ে যে সাজা দেওয়া হয়েছে সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বলার নেই।'

No comments

Powered by Blogger.