দুরন্ত রাজশাহীর হ্যাটট্রিক জয়

ডোয়াইন স্মিথকে কাভার সীমানার ওপারে উড়িয়েই ছুটলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। দুই হাত উঁচিয়ে, বুক ফুলিয়ে...মুক্তার আলী ঝাঁপিয়ে পড়লেন ডাগআউট থেকে ছুটে আসা সতীর্থদের বুকে।
পেসার মুক্তার বিস্ময় উপহার দিয়েই যাচ্ছেন ব্যাট হাতে! পেছন থেকে ছুটে এসে মুক্তারকে জড়িয়ে ধরলেন জহুরুল ইসলাম। আগেও দুরন্ত রাজশাহীর দুটি জয়ে বড় ভূমিকা ছিল মুক্তারের ব্যাটিংয়ের। কাল যখন উইকেটে গিয়েছিলেন, ম্যাচের পেন্ডুলাম খানিকটা হেলে সিলেট রয়্যালসের দিকে। ৩১ বলে ৪২ রান প্রয়োজন রাজশাহীর, হাতে উইকেট ৫টি। ফিল্ডিংয়ের সময় হাতে আঘাত পাওয়া তামিম ইকবাল প্যাড-ট্যাড পরে বসে ছিলেন, কিন্তু ব্যথা নিয়ে কতটা কী করতে পারতেন, সংশয় ছিল যথেষ্টই। তামিমের প্রয়োজনই হলো না, জহুরুলের সঙ্গে মুক্তারের ৪৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ শেষ দুই বল আগেই! এক চার, দুই ছয়ে ১৭ বলে অপরাজিত ২৬ মুক্তার! নবীকে ৮৯ মিটার দূরে আছড়ে ফেলা শটটি ছিল ম্যাচের সবচেয়ে বড় ছয়!
এমন ধারাবাহিকতা অপ্রত্যাশিত বলেই মুক্তারকে শুরুতে টেনে আনা। এমনিতে রাজশাহীর জয়ের নায়ক আবারও জহুরুল। নেতৃত্ব ছাড়াটা জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করছে জহুরুল ও রাজশাহীর জন্য। আগের দুই ম্যাচে ৩৮ বলে ৫৭ ও ১৮ বলে অপরাজিত ৩৮, কাল ৩৭ বলে অপরাজিত ৪৯ করে ম্যাচসেরা। নেতৃত্ব ছাড়ায় মাথা থেকে বিষম ভার নেমে যাওয়ার কথা বললেন আরেকবার। মুগ্ধ তিনি মুক্তারের ব্যাটিংয়েও, তবে আর সবার মতো তিনি বিস্মিত নন, ‘আমার কাছে এটা অপ্রত্যাশিত নয়। গতবার ঢাকা লিগে ভিক্টোরিয়ায় আমরা একসঙ্গে খেলেছি। কয়েকটি ম্যাচে ও দারুণ ব্যাটিং করেছে। ভরসা ছিল বলেই আমি সিঙ্গেল নিয়ে ওকে স্ট্রাইক দিচ্ছিলাম।’
১৪৮ রান তাড়া করতে নেমে মুনাবীরা (১৬ বলে ২১) ও কভেন্ট্রি (১৭ বলে ২০) মোটামুটি দ্রুত একটা শুরু এনে দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু ২০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে রাজশাহী হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৫৮। পঞ্চম উইকেটে জহুরুল-জিয়ার ৪৮ রানের জুটি ম্যাচে টিকিয়ে রাখে রাজশাহীকে। জহুরুল-মুক্তারের জুটিতে ম্যাচ শেষ। চামারা কাপুগেদেরার নেতৃত্বে রাজশাহী এখন সত্যিই দুরন্ত, জিতল টানা তিন ম্যাচ।
নতুন পরিচয়ে উদ্ভাসিত হওয়ার আগে মুক্তার কিছুটা ফিরে পেয়েছিলেন নিজের মূল পরিচয়ও। বল হাতে ফিরিয়েছেন সিলেটের সর্বোচ্চ স্কোরার মুশফিকুর রহিমকে। সিলেট অধিনায়ক কাল তিনে নেমে ৩৪ করেছেন ২৩ বলে। স্মিথের (২১ বলে ২৪) সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৫ বলে গড়েছেন ৫১ রানের জুটি। ৬ ওভারে ৫৬ তুলে সিলেট তখন বড় স্কোরের পথে। কিন্তু এই দুজন ফেরার পর বলার মতো কোনো জুটিই হয়নি। অষ্টম ম্যাচে দ্বিতীয় পরাজয়ের স্বাদ পাওয়া মুশফিক ম্যাচ শেষে আক্ষেপ করলেন আর ১০-১৫ রানের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট রয়্যালস: ২০ ওভারে ১৪৭/৮ (স্মিথ ২৪, স্টার্লিং ৬, মুশফিকুর ৩৪, মমিনুল ১০, নাজমুল মিলন ১৬, চিগুম্বুরা ৮, নবী ১৭, সোহাগ ১, সোহরাওয়ার্দী ১৮*, বিশ্বনাথ ৪*; মুনাবীরা ২/১৯, মনির ২/৩৫, নাঈম ১/১৭, মুক্তার ১/২০, এডমন্ডসন ১/২৫)।
দুরন্ত রাজশাহী: ১৯.৪ ওভারে ১৫২/৫ (মুনাবীরা ২১, কভেন্ট্রি ২০, কাপুগেদেরা ৪, জহুরুল ৪৯*, আরভিন ১, জিয়াউর ১৯, মুকতার ২৬*; স্মিথ ২/২৫, সোহাগ ১/১১, সোহরাওয়ার্দী ১/১৫, চিগুম্বুরা ১/৩০)।
ফল: রাজশাহী ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জহুরুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.