রাজধানীতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ-ভাঙচুর, আজও হরতাল- চট্টগ্রামে ছাত্রসহ নিহত ৪
চট্টগ্রামে গতকাল মঙ্গলবার হরতাল চলাকালে
পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এতে পুলিশের ১৬
সদস্যসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন
চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের
ছাত্র ইমরান খান (২৪), ইয়ংওয়ান গ্রুপের কর্মচারী শফিকুল ইসলাম (২৫), দোকান
কর্মচারী আফজাল হোসেন (২০) ও আবিদ।
এদিকে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে গতকাল রাজধানীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করেছে জামায়াত-শিবির। এ সময় অন্তত ৩০টি ককটেল বিস্ফোরণ, পাঁচটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও অন্তত আটটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাত সাড়ে আটটা থেকে ১২ প্লাটুন বর্ডার গার্ডের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির উপমহাপরিচালক কর্নেল ইকবাল আক্তার মিঞা এই তথ্য জানান।
রায় ঘোষণার প্রতিবাদে আজ বুধবার আবারও সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান গতকাল এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। সংবাদপত্রের গাড়ি, সাংবাদিক, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
চট্টগ্রামে সংঘর্ষ: মানবতা-বিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড় ও মুরাদপুর এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। এ সময় পুলিশের ওপর গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করেন শিবিরকর্মীরা। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে নগরের অলংকার মোড়ে একজন নিহত হন। নিহত ইমরান খান চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা শিবিরের সাথি ছিলেন বলে দাবি করেছে জামায়াত। গুলিবিদ্ধ শিবিরের ছয় কর্মীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বেলা সোয়া একটার দিকে অলংকার মোড়ের তিন দিক থেকে মিছিল বের করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। তাঁরা পুলিশ বক্সের সামনে ১৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশ বক্সের ভেতর অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ ভ্যানসহ কয়েকটি যানে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং চারটি রকেট (রকেট প্যারাসুট ফ্লেম সিগন্যাল) নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। পুলিশ প্রায় ১৫০টি শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিকে অতর্কিতে হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পরে গুলিবিদ্ধ একজন হাসপাতালে মারা যায়।
অলংকার মোড়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফসহ পুলিশের ১০ সদস্য আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সময় নগরের বহদ্দারহাট মোড় থেকে পাঁচ শতাধিক হরতাল-সমর্থক মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। এ সময় পুলিশ পিছু হটে। পিছু হটা পুলিশের সদস্যরা বেতারবার্তায় সিএমপি সদর থেকে সাহায্য চান। ততক্ষণে নগরের মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, মির্জারপুল ও পাঁচলাইশ থানার মোড়ে অবস্থান নিয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাণ্ডব চালাতে থাকেন। পরে বাড়তি পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বহদ্দারহাটের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ২০টি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেন। একপর্যায়ে মুরাদপুর মোড় থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গুলি করতে করতে পাঁচলাইশ থানার দিকে চলে যান। তাঁরা থানা চত্বরের কাছাকাছি এলে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়।
সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডে আবার পুলিশের ওপর হামলা চালান জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় সংঘর্ষে দোকান কর্মচারী আফজাল হোসেন ও তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ানের কর্মচারী শফিকুল ইসলাম নিহত হন। গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে আফজাল এবং লাঠির আঘাতে শফিকুল মারা গেছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেখ মুজিব রোড সংলগ্ন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার একটি গলি থেকে আবিদ নামের এক তরুণকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর চোখে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
সংঘর্ষে অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শহীদুল্লাহ মাথায় আঘাত পান। তাঁর মাথায় কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। পাঁচলাইশ অঞ্চলের সহকারী কমিশনার আবদুর রউফ ও থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ আজকের হরতাল কর্মসূচি মোকাবিলার জন্য বিজিবির সদস্য চেয়েছে।
ঢাকায় হরতাল: ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখা থেকে বলা হয়েছে, গতকাল হরতাল চলাকালে রাজধানীতে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ, চারটি বাস ভাঙচুর ও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মিরপুর, ধানমন্ডি, জুরাইন, যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ, দোলাইরপাড়, কুতুবখালী, বাড্ডা ও রামপুরায় জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও জামায়াতের নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় না দেওয়ার দাবিতে গতকাল হরতাল ডেকেছিল দলটি।
সকাল সাতটার দিকে মিরপুরের বেগম রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। তাঁরা একটি সংবাদপত্রের গাড়িতে হামলা ও অন্তত দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশ এগিয়ে গেলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে অন্তত পাঁচটি ককটেল ছোড়েন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ তালতলা এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়লে শিবিরের কমী শাফাওয়াত কবির (৪৪) ও মইনুল ইসলাম (২৩) আহত হন।
বেগম রোকেয়া সরণির আল হেলাল হাসপাতালের সামনে জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিরপুর থানার কাছে একটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে।
শ্যামলীর শিশুপল্লীর সামনে বিআরটিসির একটি বাসে ভাঙচুর চালায় হরতালের সমর্থকেরা। শাহজাহানপুরে একটি বাসে ভাঙচুর চালাতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষে সংঘর্ষে পুলিশের বিশেষ শাখার কনস্টেবল নুরন্নবী আহত হন। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগে জামায়াতের কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছয়টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। রায়েরবাগ এলাকায় জামায়াত-শিবিরের মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডে শিবিরের কর্মীরা বিআরটিসির একটি দোতলা বাস এবং শেরেবাংলা নগরের কলেজ গেট এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেছেন। বাড্ডায় বিকেলে একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়া হয়।
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সকাল সোয়া নয়টার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) একটি স্টাফ বাস ভাঙচুর করেন এবং পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই গাড়িতে থাকা আইসিবির ১০-১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্রুত বেরিয়ে পড়ায় রক্ষা পান।
যাত্রাবাড়ীতে একটি বাসে আগুন দেয় হরতাল-সমর্থকেরা। পল্টন ও বিজয়নগর এলাকায় হরতাল-সমর্থকেরা পিকেটিং করতে গেলে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মহাখালী এলাকায় হরতাল-সমর্থকদের হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হন।
জুরাইন ও রামপুরায় পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ হয়। পুরান ঢাকার সুরিটোলা হাইস্কুলের কাছে নর্থ-সাউথ রোডে শিবিরের নেতা-কর্মীরা যাত্রীবাহী একটি বাস ভাঙচুর করেন এবং চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।
হরতাল চলাকালে রাজধানীতে হরতালবিরোধী মিছিল হয়েছে। মিরপুর ১০ নম্বরে হরতালের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাহারা বসাতে দেখা গেছে।
এদিকে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে গতকাল রাজধানীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করেছে জামায়াত-শিবির। এ সময় অন্তত ৩০টি ককটেল বিস্ফোরণ, পাঁচটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও অন্তত আটটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাত সাড়ে আটটা থেকে ১২ প্লাটুন বর্ডার গার্ডের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির উপমহাপরিচালক কর্নেল ইকবাল আক্তার মিঞা এই তথ্য জানান।
রায় ঘোষণার প্রতিবাদে আজ বুধবার আবারও সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান গতকাল এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। সংবাদপত্রের গাড়ি, সাংবাদিক, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
চট্টগ্রামে সংঘর্ষ: মানবতা-বিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড় ও মুরাদপুর এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। এ সময় পুলিশের ওপর গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করেন শিবিরকর্মীরা। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে নগরের অলংকার মোড়ে একজন নিহত হন। নিহত ইমরান খান চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা শিবিরের সাথি ছিলেন বলে দাবি করেছে জামায়াত। গুলিবিদ্ধ শিবিরের ছয় কর্মীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বেলা সোয়া একটার দিকে অলংকার মোড়ের তিন দিক থেকে মিছিল বের করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। তাঁরা পুলিশ বক্সের সামনে ১৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশ বক্সের ভেতর অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ ভ্যানসহ কয়েকটি যানে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং চারটি রকেট (রকেট প্যারাসুট ফ্লেম সিগন্যাল) নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। পুলিশ প্রায় ১৫০টি শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিকে অতর্কিতে হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পরে গুলিবিদ্ধ একজন হাসপাতালে মারা যায়।
অলংকার মোড়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফসহ পুলিশের ১০ সদস্য আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সময় নগরের বহদ্দারহাট মোড় থেকে পাঁচ শতাধিক হরতাল-সমর্থক মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। এ সময় পুলিশ পিছু হটে। পিছু হটা পুলিশের সদস্যরা বেতারবার্তায় সিএমপি সদর থেকে সাহায্য চান। ততক্ষণে নগরের মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, মির্জারপুল ও পাঁচলাইশ থানার মোড়ে অবস্থান নিয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাণ্ডব চালাতে থাকেন। পরে বাড়তি পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বহদ্দারহাটের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ২০টি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেন। একপর্যায়ে মুরাদপুর মোড় থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গুলি করতে করতে পাঁচলাইশ থানার দিকে চলে যান। তাঁরা থানা চত্বরের কাছাকাছি এলে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়।
সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডে আবার পুলিশের ওপর হামলা চালান জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় সংঘর্ষে দোকান কর্মচারী আফজাল হোসেন ও তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ানের কর্মচারী শফিকুল ইসলাম নিহত হন। গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে আফজাল এবং লাঠির আঘাতে শফিকুল মারা গেছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেখ মুজিব রোড সংলগ্ন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার একটি গলি থেকে আবিদ নামের এক তরুণকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর চোখে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
সংঘর্ষে অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শহীদুল্লাহ মাথায় আঘাত পান। তাঁর মাথায় কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। পাঁচলাইশ অঞ্চলের সহকারী কমিশনার আবদুর রউফ ও থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ আজকের হরতাল কর্মসূচি মোকাবিলার জন্য বিজিবির সদস্য চেয়েছে।
ঢাকায় হরতাল: ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখা থেকে বলা হয়েছে, গতকাল হরতাল চলাকালে রাজধানীতে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ, চারটি বাস ভাঙচুর ও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মিরপুর, ধানমন্ডি, জুরাইন, যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ, দোলাইরপাড়, কুতুবখালী, বাড্ডা ও রামপুরায় জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও জামায়াতের নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় না দেওয়ার দাবিতে গতকাল হরতাল ডেকেছিল দলটি।
সকাল সাতটার দিকে মিরপুরের বেগম রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। তাঁরা একটি সংবাদপত্রের গাড়িতে হামলা ও অন্তত দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশ এগিয়ে গেলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে অন্তত পাঁচটি ককটেল ছোড়েন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ তালতলা এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়লে শিবিরের কমী শাফাওয়াত কবির (৪৪) ও মইনুল ইসলাম (২৩) আহত হন।
বেগম রোকেয়া সরণির আল হেলাল হাসপাতালের সামনে জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিরপুর থানার কাছে একটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে।
শ্যামলীর শিশুপল্লীর সামনে বিআরটিসির একটি বাসে ভাঙচুর চালায় হরতালের সমর্থকেরা। শাহজাহানপুরে একটি বাসে ভাঙচুর চালাতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষে সংঘর্ষে পুলিশের বিশেষ শাখার কনস্টেবল নুরন্নবী আহত হন। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগে জামায়াতের কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছয়টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। রায়েরবাগ এলাকায় জামায়াত-শিবিরের মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডে শিবিরের কর্মীরা বিআরটিসির একটি দোতলা বাস এবং শেরেবাংলা নগরের কলেজ গেট এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেছেন। বাড্ডায় বিকেলে একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়া হয়।
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সকাল সোয়া নয়টার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) একটি স্টাফ বাস ভাঙচুর করেন এবং পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই গাড়িতে থাকা আইসিবির ১০-১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্রুত বেরিয়ে পড়ায় রক্ষা পান।
যাত্রাবাড়ীতে একটি বাসে আগুন দেয় হরতাল-সমর্থকেরা। পল্টন ও বিজয়নগর এলাকায় হরতাল-সমর্থকেরা পিকেটিং করতে গেলে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মহাখালী এলাকায় হরতাল-সমর্থকদের হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হন।
জুরাইন ও রামপুরায় পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ হয়। পুরান ঢাকার সুরিটোলা হাইস্কুলের কাছে নর্থ-সাউথ রোডে শিবিরের নেতা-কর্মীরা যাত্রীবাহী একটি বাস ভাঙচুর করেন এবং চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।
হরতাল চলাকালে রাজধানীতে হরতালবিরোধী মিছিল হয়েছে। মিরপুর ১০ নম্বরে হরতালের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাহারা বসাতে দেখা গেছে।
No comments