বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের ভাবনা by অধ্যাপক ডা: আবু উবাইদ মুহম্মদ মুহসিন
বিশ্বব্যাপী, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বে
সংক্রামক ব্যাধির নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সফল হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবং
নগরায়ন, দৈনন্দিন জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া,
বায়ুদূষণসহ
পরিবেশদূষণ ইত্যাদির কারণে অসংক্রামক ব্যাধিগুলো আজকের প্রধান
স্বাস্থ্যসমস্যা। অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ,
ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার। বিশ্বব্যাপী মানুষকে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করা
এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও এনজিওগুলোকে ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ
এবং চিকিৎসা সম্পর্কে যথোচিতভাবে অবহিত করার জন্য প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
প্রতি বছর এক কোটি ২৭ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ৭৬ লাখ মারা যায়। কিন্তু মজার কথা হলো ক্যান্সার সম্পর্কে এ যাবৎ যা-ই ধারণা থাকুক না কেন, শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ক্যান্সার যথাসময়ে নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি হচ্ছে এই যে, বাংলাদেশে যেসব কারণে মানুষ মারা যায় তার মধ্যে ক্যান্সার ষষ্ঠ স্থানে আছে। এক হিসেবে দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগী আছে ১০ লাখ। প্রতি বছর আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ২০০৫ সালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, পুরুষের মাঝে শীর্ষ পাঁচটি ক্যান্সার হলো ফুসফুসের ক্যান্সার ২৪.৭%, অজানা ক্যান্সার ৮.১%, স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার ৭.৩%, লসিকানালী ও লসিকাগ্রন্থি ৭.৩%, গলনালী ৫.১%। অন্য দিকে মহিলাদের মাঝে শীর্ষ পাঁচটি ক্যান্সার হলো জরায়ুমুখের ক্যান্সার ২৪.৬%, ব্রেস্ট ক্যান্সার ২৪.৩%, ফুসফুসের ক্যান্সার ৫.৫%, মুখগহ্বরের ক্যান্সার ৪.১% এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার ৩.৮%।
২০০৫ সালে প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেনস্ট ক্যান্সার-এর উদ্যোগে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উদযাপিত হয়। বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের অভিযাত্রায় আর একটি মাইলফলক হলো ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার ডিকারেশন। এর মূল উদ্দেশ্য ক্যান্সারের যে সঙ্কটটি ধীরে ধীরে বাড়ছে, তা বিভিন্ন দেশের সরকারের শীর্ষ নেতাদের এবং স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নকারীদের দৃষ্টিগোচরে আনা যেন ২০২০ সালের মধ্যে ক্যান্সারের ব্যাপকতাকে হ্রাস করা যায়।
‘দ্য ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার ডিকারেশন’-এর ১১টি লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ১. কার্যকর ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জন্য প্রতিটি দেশে উপযুক্ত ও স্থায়ী সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ২. বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের ব্যাপ্তি ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোর ফলাফল নির্ধারণের ব্যবস্থার উন্নতি সাধন। ৩. বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহার, দেহের ওজন এবং এলকোহল গ্রহণ যথাসম্ভব কমিয়ে আনা। ৪. যেসব জায়গায় মানুষের মাঝে এইচপিভি এবং এইচবিভির সংক্রমণ রয়েছে সেই জনগোষ্ঠীকে সার্বজনীন টিকা দান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা। ৫. ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করা এবং ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণাগুলোকে দূর করা। ৬. স্ক্রিনিং এবং সময় থাকতেই ক্যান্সার নির্ণয় কর্মসূচির মাধ্যমে আরো ক্যান্সারকে নির্ণয় করা এবং ব্যাপক জনগোষ্ঠী এবং চিকিৎসা পেশার সাথে সংশ্লিষ্টদের ক্যান্সারের বিপদ সঙ্কেত সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। ৭. বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার রোগীদের জন্য নির্ভুল ক্যান্সার নির্ণয়, ক্যান্সারের যথোচিত চিকিৎসা আর ক্যান্সার রোগীদের পুনর্বাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা। একই সাথে বিশ্বব্যাপী সব ক্যান্সার রোগীর জন্য সান্ত্বনা চিকিৎসার উন্নত করা। ৮. ক্যান্সারের ব্যথা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার রোগীদের জন্য ব্যথা নিরসনের সুব্যবস্থা করা। ৯. ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের জন্য ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিকের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। ১০. প্রত্যেকটি দেশে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী ইতোমধ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন, তাদের দেশের বাইরে যাওয়া একেবারে নিম্নমাত্রায় আনা। ১১. প্রতিটি দেশে ক্যান্সারের মৃত্যু হার কমিয়ে আনা ও ক্যান্সার রোগীদের দীর্ঘজীবন নিশ্চিত করা।
বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরই বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে একটি করে প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘ক্যান্সার সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণাগুলো দূর করুন’। ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের মাঝে যে চলমান ভুল ধারণাগুলো আছে তা হচ্ছে : ১. ক্যান্সার কেবলই একটি স্বাস্থ্যসমস্যা। কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, ক্যান্সার শুধুই একটি স্বাস্থ্যসমস্যা নয়। বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে সুদূরপ্রসারী সামাজিক, অর্থনৈতিক, জাতীয় উন্নয়ন ও মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলো। ২. ক্যান্সার হচ্ছে ধনী, বয়স্ক এবং উন্নত দেশের রোগ। কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, ক্যান্সার কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা বিশেষ ধরনের দেশের রোগ নয়। এটা বিশ্বব্যাপী একটি মহামারী, যা সব বয়সের এবং ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব দেশের রোগ। ৩. ক্যান্সার মানেই মৃত্যু। কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, আগে যে ক্যান্সারগুলোকে মানুষের মৃত্যুদণ্ড বলেই মনে হতো সেগুলো এখন সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব এবং অনেক ক্যান্সার কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। ৪. ক্যান্সার হচ্ছে আমার ভাগ্য। কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, যদি সঠিক কৌশল অবলম্বন করা যায়, তাহলে প্রতি তিনটির মধ্যে একটি ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্যান্সারকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। প্রথমত, ক্যান্সার সম্পর্কে যে সতর্ক সঙ্কেতগুলো আছে, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা রাখা। আর তা হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গোটা, পিণ্ড বা চাকা হওয়া; খুশখুশে কাশি বা কণ্ঠস্বর ভেঙে যাওয়া; হজমে গণ্ডগোল বা ঢোঁক গিলতে অসুবিধা; অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ; তিল বা আঁচিলের পরিবর্তন; পায়খানা-প্রস্রাবের স্বাভাবিক নিয়মের পরিবর্তন, একটি ঘা যা সহজে সারছে না এ ধরনের লক্ষণ ১৫ দিনেও যদি সহজে না সারে তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আপনার মাঝে এ ধরনের অনুভূতি হতে হবে, এটা আবার ক্যান্সারের লক্ষণ নয়তো। অন্য দিকে আমাদের শরীরকে হালকা-পাতলা রাখা, শাকসবজি বেশি খাওয়া, চর্বি গোশতজাতীয় খাবার কম খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, মদ্যপান থেকে দূরে থাকা, মহিলাদের ক্ষেত্রে শিশুকে বুকের দুধ দেয়া, যে কোনো ধরনের তামাক বর্জন করা এবং সম্ভব হলে হেপাটাইটিস বি ও হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণ করা।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০১৩-এর যে মূল ডাক ‘আপনি জানেন কি’ তখনই সার্থক হবে যখন আমরা ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণাগুলোকে দূর করতে সক্ষম হবো এবং ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যথোচিত পদক্ষেপ নিতে পারব।
লেখক : এম এইচ শমরিতা মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এবং সাবেক সমন্বয়কারী, ক্যান্সার জনশিক্ষা কার্যক্রম, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি
প্রতি বছর এক কোটি ২৭ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ৭৬ লাখ মারা যায়। কিন্তু মজার কথা হলো ক্যান্সার সম্পর্কে এ যাবৎ যা-ই ধারণা থাকুক না কেন, শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ক্যান্সার যথাসময়ে নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি হচ্ছে এই যে, বাংলাদেশে যেসব কারণে মানুষ মারা যায় তার মধ্যে ক্যান্সার ষষ্ঠ স্থানে আছে। এক হিসেবে দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগী আছে ১০ লাখ। প্রতি বছর আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ২০০৫ সালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, পুরুষের মাঝে শীর্ষ পাঁচটি ক্যান্সার হলো ফুসফুসের ক্যান্সার ২৪.৭%, অজানা ক্যান্সার ৮.১%, স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার ৭.৩%, লসিকানালী ও লসিকাগ্রন্থি ৭.৩%, গলনালী ৫.১%। অন্য দিকে মহিলাদের মাঝে শীর্ষ পাঁচটি ক্যান্সার হলো জরায়ুমুখের ক্যান্সার ২৪.৬%, ব্রেস্ট ক্যান্সার ২৪.৩%, ফুসফুসের ক্যান্সার ৫.৫%, মুখগহ্বরের ক্যান্সার ৪.১% এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার ৩.৮%।
২০০৫ সালে প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেনস্ট ক্যান্সার-এর উদ্যোগে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উদযাপিত হয়। বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের অভিযাত্রায় আর একটি মাইলফলক হলো ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার ডিকারেশন। এর মূল উদ্দেশ্য ক্যান্সারের যে সঙ্কটটি ধীরে ধীরে বাড়ছে, তা বিভিন্ন দেশের সরকারের শীর্ষ নেতাদের এবং স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নকারীদের দৃষ্টিগোচরে আনা যেন ২০২০ সালের মধ্যে ক্যান্সারের ব্যাপকতাকে হ্রাস করা যায়।
‘দ্য ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার ডিকারেশন’-এর ১১টি লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ১. কার্যকর ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জন্য প্রতিটি দেশে উপযুক্ত ও স্থায়ী সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ২. বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের ব্যাপ্তি ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোর ফলাফল নির্ধারণের ব্যবস্থার উন্নতি সাধন। ৩. বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহার, দেহের ওজন এবং এলকোহল গ্রহণ যথাসম্ভব কমিয়ে আনা। ৪. যেসব জায়গায় মানুষের মাঝে এইচপিভি এবং এইচবিভির সংক্রমণ রয়েছে সেই জনগোষ্ঠীকে সার্বজনীন টিকা দান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা। ৫. ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করা এবং ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণাগুলোকে দূর করা। ৬. স্ক্রিনিং এবং সময় থাকতেই ক্যান্সার নির্ণয় কর্মসূচির মাধ্যমে আরো ক্যান্সারকে নির্ণয় করা এবং ব্যাপক জনগোষ্ঠী এবং চিকিৎসা পেশার সাথে সংশ্লিষ্টদের ক্যান্সারের বিপদ সঙ্কেত সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। ৭. বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার রোগীদের জন্য নির্ভুল ক্যান্সার নির্ণয়, ক্যান্সারের যথোচিত চিকিৎসা আর ক্যান্সার রোগীদের পুনর্বাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা। একই সাথে বিশ্বব্যাপী সব ক্যান্সার রোগীর জন্য সান্ত্বনা চিকিৎসার উন্নত করা। ৮. ক্যান্সারের ব্যথা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার রোগীদের জন্য ব্যথা নিরসনের সুব্যবস্থা করা। ৯. ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের জন্য ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিকের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। ১০. প্রত্যেকটি দেশে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী ইতোমধ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন, তাদের দেশের বাইরে যাওয়া একেবারে নিম্নমাত্রায় আনা। ১১. প্রতিটি দেশে ক্যান্সারের মৃত্যু হার কমিয়ে আনা ও ক্যান্সার রোগীদের দীর্ঘজীবন নিশ্চিত করা।
বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরই বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে একটি করে প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘ক্যান্সার সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণাগুলো দূর করুন’। ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের মাঝে যে চলমান ভুল ধারণাগুলো আছে তা হচ্ছে : ১. ক্যান্সার কেবলই একটি স্বাস্থ্যসমস্যা। কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, ক্যান্সার শুধুই একটি স্বাস্থ্যসমস্যা নয়। বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে সুদূরপ্রসারী সামাজিক, অর্থনৈতিক, জাতীয় উন্নয়ন ও মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলো। ২. ক্যান্সার হচ্ছে ধনী, বয়স্ক এবং উন্নত দেশের রোগ। কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, ক্যান্সার কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা বিশেষ ধরনের দেশের রোগ নয়। এটা বিশ্বব্যাপী একটি মহামারী, যা সব বয়সের এবং ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব দেশের রোগ। ৩. ক্যান্সার মানেই মৃত্যু। কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, আগে যে ক্যান্সারগুলোকে মানুষের মৃত্যুদণ্ড বলেই মনে হতো সেগুলো এখন সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব এবং অনেক ক্যান্সার কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। ৪. ক্যান্সার হচ্ছে আমার ভাগ্য। কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, যদি সঠিক কৌশল অবলম্বন করা যায়, তাহলে প্রতি তিনটির মধ্যে একটি ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্যান্সারকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। প্রথমত, ক্যান্সার সম্পর্কে যে সতর্ক সঙ্কেতগুলো আছে, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা রাখা। আর তা হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গোটা, পিণ্ড বা চাকা হওয়া; খুশখুশে কাশি বা কণ্ঠস্বর ভেঙে যাওয়া; হজমে গণ্ডগোল বা ঢোঁক গিলতে অসুবিধা; অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ; তিল বা আঁচিলের পরিবর্তন; পায়খানা-প্রস্রাবের স্বাভাবিক নিয়মের পরিবর্তন, একটি ঘা যা সহজে সারছে না এ ধরনের লক্ষণ ১৫ দিনেও যদি সহজে না সারে তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আপনার মাঝে এ ধরনের অনুভূতি হতে হবে, এটা আবার ক্যান্সারের লক্ষণ নয়তো। অন্য দিকে আমাদের শরীরকে হালকা-পাতলা রাখা, শাকসবজি বেশি খাওয়া, চর্বি গোশতজাতীয় খাবার কম খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, মদ্যপান থেকে দূরে থাকা, মহিলাদের ক্ষেত্রে শিশুকে বুকের দুধ দেয়া, যে কোনো ধরনের তামাক বর্জন করা এবং সম্ভব হলে হেপাটাইটিস বি ও হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণ করা।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০১৩-এর যে মূল ডাক ‘আপনি জানেন কি’ তখনই সার্থক হবে যখন আমরা ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণাগুলোকে দূর করতে সক্ষম হবো এবং ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যথোচিত পদক্ষেপ নিতে পারব।
লেখক : এম এইচ শমরিতা মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এবং সাবেক সমন্বয়কারী, ক্যান্সার জনশিক্ষা কার্যক্রম, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি
No comments