৬১ বছর ধরে চলছে একটি মামলা॥ বাদী সর্বস্বান্ত by সাজেদ রহমান

৬১ বছর ধরে আইনী লড়াই করেও যশোরের প্রতাপ কুমার সাহা নিজের সম্পত্তির দখল নিতে পারেননি। বর্তমানে প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যের এ সম্পত্তি ভোগদখল করছে মামলার বিবাদী এক আইনজীবী ও তার পরিবার।
উচ্চ আদালতের আদেশও কার্যকর হয়নি এ মামলার েেত্র। আদালতে প্রকৃত তথ্য গোপন করে একের পর এক মামলা করে তিনি জমির প্রকৃত মালিককে পথে বসিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর শহরের ৯১ নং বারান্দিপাড়া মৌজার (রেল রোড) ২১ শতক জমির মালিক শরৎ কুমারি। তিনি এ সম্পত্তি উইল করে দেন সুরেন্দ্রনাথ সাহাকে। তাঁর মৃতু্যর পর অস্থি ধর্মীয় মতে গঙ্গায় বিসর্জন দিতে গেলে নগেন্দ্র ভূষণ ১৯৪৯ সালের ৫ মে ওই জমির মালিকানা দাবি করে ১৪৪ ধারা জারি করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে এবং সুরেন্দ্রনাথ সাহাকে জমির মালিক ঘোষণা করে। কিন্তু জমির দখল নিতে না পেরে সুরেন্দ্রনাথ জেলা জজ আদালতে টেস্টামেন্টারি সু্যট দাখিল করেন। যার নং-০৭/৪৯। বিবাদী নগেন্দ্র ভূষণ আগের ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি গোপন করে টেস্টামেন্টারি সু্যট দাখিল করেন একই আদালতে। যার নং-০২/৫০। আদালত উভয় মামলার শুনানি শেষে সুরেন্দ্রনাথের প েডিক্রি দেয়। এর বিরম্নদ্ধে নগেন্দ্র ভূষণ হাইকোর্টে আপীল করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্টও নিম্নআদালতের আদেশ বহাল রাখে। এর বিরম্নদ্ধে ফেডারেল কোর্টে নগেন্দ্র ভূষণ আপীল করলে ফেডারেল কোর্টও একই আদেশ দেয়। কিন্তু নগেন্দ্র ভূষণ উচ্চ আদালতের আদেশ কার্যকরে বাধা দেন এবং সুরেন্দ্রনাথের ভাড়াটিয়াদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘর থেকে নামিয়ে দেন। এত সব তথ্য গোপন রেখে নগেন্দ্র ভূষণ মূল্যবান এ সম্পত্তি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন এবং পুনরায় মুনসেফ আদালতে দেওয়ানী মামলা করেন। যার নং ১৪৩/১৯৫৯। কিন্তু এ মামলার শুনানিতে তিনি পরাজিত হন। এ রায়ের বিরম্নদ্ধে নগেন্দ্র ভূষণ জেলা জজ আদালতে আপীল করেন। আপীল নং-১২১/৫৯। এ আপীলও খারিজ হয়ে যায়। এরপর আবার নগেন্দ্র ভূষণ দেওয়ানী মামলা করেন। যার নং-০৪/৪৯। এ মামলা আদালত শুনানি শেষে বাতিল করে দেয়। এত কিছুর পরও নগেন্দ্র ভূষণ এ জমির দখল ছাড়েননি। আজ পর্যনত্ম দখল তাঁর কাছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সুরেন্দ্রনাথ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য জেলা জজ আদালতে ১৯৬১ সালে দেওয়ানী মামলা করেন। যার নং ২৩/৬১। এ মামলা চলাকালে সুরেন্দ্রনাথ সাহা এবং তাঁর একমাত্র ছেলে মনিন্দ্রনাথ সাহা মারা যান। বর্তমানে মনিন্দ্রনাথ সাহার ছেলে প্রতাপ কুমার সাহা মামলা চালিয়ে আসছেন। আর নগেন্দ্র ভূষণের ওয়ারিশ হিসেবে প্রতাপ কুমার সরকার মামলা পরিচালনা করছেন। ১৯৬১ সালের এ মামলাটি রি-নম্বর হয়েছে। রি-নম্বর নং ২০/৭৯। বর্তমানে এ মামলাটির বিচারকার্য চলছে। ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রম্নয়ারি যশোরের জেলা জজ একেএম জহির আহম্মদ ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। জেলা জজের সে নির্দেশও কাজে আসেনি। নানা রকম বাহানায় মামলাটি বছরের পর বছর চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিবাদী। মামলা চালাতে গিয়ে বর্তমান বাদী প্রতাপ কুমার সাহা পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসেছেন। সর্বশেষ ২৪ ফেব্রম্নয়ারি এ মামলার চূড়ানত্ম শুনানির দিন ছিল। এ দিনও শুনানি হয়নি। বিবাদী প্রতাপ কুমার সরকার এর মাঝে জেলা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন। সাব জজ আদালত আগামী ৩ মার্চ চূড়ানত্ম শুনানির দিন পুনর্ধার্য করে। বলা যায়, এভাবেই এ মামলাটি গত ৬১ বছর ধরে চলে আসছে।

No comments

Powered by Blogger.