সরকার-জামায়াত সমঝোতা? by পাভেল হায়দার চৌধুরী
রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের
হঠাৎ সখ্য দেখে কিছুটা খটকা লাগলেও আগে থেকে কারো মনে কোনো সন্দেহ জাগেনি।
কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার রায় ঘোষণার পরপরই মানুষের মনে যে প্রশ্নটা প্রথম
এলো, তা হলো- জামায়াতের সঙ্গে সরকারের কি তাহলে কোনো সমঝোতা হলো!
রায় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে কেউ অবশ্য নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে রায়ের পর হতাশা ও সন্দেহ ব্যক্ত করতে এবং সরকারের সমালোচনা করতে
ছাড়েননি রাজনীতিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সুধী সমাজ, বুদ্ধিজীবী, এমনকি ১৪ দলের
শরিকরাও।
২১ জানুয়ারি 'বাচ্চু রাজাকারের' ফাঁসির আদেশের মধ্য দিয়ে কলঙ্কমোচনের রায়ের সূচনা হয়েছিল। গতকাল ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শুনে মানুষ যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। গত কয়েক দিন রাস্তায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের পরিবর্তিত আচরণ বিশ্লেষণ করে তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিল।
নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যেদিন এক পুলিশ সদস্যকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক লাঠিপেটা করে, সেই রবিবারেই ঢাকার মতিঝিলে পুলিশ প্রহরায় তাদের বিশাল মিছিল বের হয়। 'পুলিশ-শিবির ভাই ভাই'- এমন স্লোগানও শোনা যায় মিছিল থেকে। পরে সমাবেশ থেকে পুলিশকে দেখে নেওয়ার এবং ট্রাইব্যুনাল উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ করার অধিকার সব সংগঠনেরই রয়েছে, তাই এ সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ এর কয়েক দিন আগেই সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার কারণে জামায়াত হরতাল পালন করেছে। পরদিন সোমবার চট্টগ্রামে দেখা গেল, জামায়াত নেতারা হাসিমুখে রজনীগন্ধার স্টিক ধরা হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন হতভম্ব পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে।
পুলিশ দেখলেই এত দিন যারা লাঠি, বাঁশ, ইট, অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ত, জামায়াত-শিবিরের সেই সব নেতা-কর্মীর হঠাৎ করে পুলিশের প্রতি এমন অমায়িক আচরণে খটকা লেগেছে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও তাদের মনে হয়নি, দ্বিতীয় রায়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম হতাশা। রায় ঘোষণার পরপরই আইন প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারি দলের কয়েকজন নেতা হতাশা প্রকাশ করায় তাদের সন্দেহ যেন আরো প্রকট হলো; এমন রায়ের কথা সরকারি দলের নেতারা আগে থেকেই জানতেন বলেই কি এমন প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে ছিলেন।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার অপরাধের তুলনায় লঘুদণ্ডের রায়ে জাতি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। রাজনৈতিক মহলসহ সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও সরকারের সমালোচনা ছিল সারা দেশের আলোচনার বিষয়বস্তু। ঘুরেফিরে একটি কথাই উঠে এসেছে, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাত বা সমঝোতা হয়েছে কি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আহমেদ ইমতিয়াজ বলেন, জামায়াত-শিবিরকে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে রাজনীতি করতে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকতে পারে। বিষয়টিকে সমঝোতা হিসেবেও দেখতে পারে অনেকেই। তিনি আরো বলেন, সরকারকে মনে রাখতে হবে, যে বছর নির্বাচন, সেই বছরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের চিন্তা করা ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না।
১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, 'এই রায়ে আমি হতাশ। এটা আপসমূলক মনোভাব। মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার সংঘটিত অপরাধের সাক্ষী এখনো বাংলাদেশে রয়েছে।' সমঝোতা বা আঁতাত হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এই রায় বিভিন্ন প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। আমি দাবি করব, শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হোক।'
জামায়াতের সঙ্গে আপস, সমঝোতার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আপস করে না। আপসে বিশ্বাসী নয়।' রায় সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগসহ সবাই আমরা মনে করি, কাদের মোল্লার বিচারের রায়ের মধ্য দিয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সরকার আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
তবে জাসদ সভাপতি ও সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, 'জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের প্রশ্নই ওঠে না। যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করব।' তিনি বলেন, কাদের মোল্লার রায়ের বিপক্ষে আপিল হবে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসিত বরণ রায় বলেন, গণ-আদালতের রায়ের প্রতিফলন ঘটেনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে। রায়ের মাত্র দুই দিন আগে জামায়াত-শিবিরের ট্রাইব্যুনাল বন্ধের দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতারা এক বিবৃতিতে বলেন, কাদের মোল্লার রায় জাতিকে বিস্মিত করেছে। এটা সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ফল কি না, জনমনে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাঁরা বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে টালবাহানা বা সমঝোতা জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
রায় ঘোষণার আগে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ ট্রাইব্যুনালের আশপাশ, জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন, বিজয়নগর, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় উল্লাস, উৎসব, মিছিলে সরগরম থাকলেও রায়ের পর নিমেষেই তা শেষ হয়ে যায়। হতাশার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে সবাই। তরুণ প্রজন্মের হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক সমঝোতার রায়। এর পরও এই লঘু শাস্তি মেনে নেওয়া কষ্টকর।
এ রায়ে বরং জামায়াত ইসলামীতে স্বস্তি এসেছে। রাজনীতিক, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী মহলসহ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীনতার পক্ষের সব মহলে। এর বাইরে ছিল না আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও। হতাশার সুরে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারাও।
জামায়াতের দেশব্যাপী তাণ্ডব, সহিংস ঘটনাকে কি ভয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল? নাকি আগামী নির্বাচনী যোগ-বিয়োগ করেছে সরকার? সারা দেশে অসংখ্য তাণ্ডবলীলা, পুলিশের ওপর হামলার পরও রাজধানী ঢাকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনাল বন্ধের দাবিতে জামায়াত-শিবিরের মতো সংগঠনকে কেন পুলিশি পাহারায় সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও হিসাব-নিকাশ কষছে সবাই। রায় ঘোষণার মাত্র দুই দিন আগে জামায়াতের এসব কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে বিভিন্ন মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ দলের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াতকে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়ার ঘটনাকে শুধুই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। সরকারের 'গ্রিন সিগন্যাল' ছাড়া এটা অসম্ভব বলে দাবি করেন তাঁরা। তাঁরা সমঝোতা বা আঁতাতের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে এ বিষয়ে পরিষ্কার হতে হলে সরকারের পরবর্তী কার্যক্রমের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, অন্যদিকে প্রকাশ্যে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় পুলিশি পাহারায় জামায়াতকে মিছিল-সমাবেশ করতে দেওয়া সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়টি 'সরকারের দেখা উচিত' দাবি করে তিনি বলেন, তা না হলে মানুষের মধ্যে নানা রকম সন্দেহের সৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যে সরকারকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়েছে।
২১ জানুয়ারি 'বাচ্চু রাজাকারের' ফাঁসির আদেশের মধ্য দিয়ে কলঙ্কমোচনের রায়ের সূচনা হয়েছিল। গতকাল ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়ে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শুনে মানুষ যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। গত কয়েক দিন রাস্তায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের পরিবর্তিত আচরণ বিশ্লেষণ করে তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিল।
নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যেদিন এক পুলিশ সদস্যকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক লাঠিপেটা করে, সেই রবিবারেই ঢাকার মতিঝিলে পুলিশ প্রহরায় তাদের বিশাল মিছিল বের হয়। 'পুলিশ-শিবির ভাই ভাই'- এমন স্লোগানও শোনা যায় মিছিল থেকে। পরে সমাবেশ থেকে পুলিশকে দেখে নেওয়ার এবং ট্রাইব্যুনাল উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ করার অধিকার সব সংগঠনেরই রয়েছে, তাই এ সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ এর কয়েক দিন আগেই সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার কারণে জামায়াত হরতাল পালন করেছে। পরদিন সোমবার চট্টগ্রামে দেখা গেল, জামায়াত নেতারা হাসিমুখে রজনীগন্ধার স্টিক ধরা হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন হতভম্ব পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে।
পুলিশ দেখলেই এত দিন যারা লাঠি, বাঁশ, ইট, অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ত, জামায়াত-শিবিরের সেই সব নেতা-কর্মীর হঠাৎ করে পুলিশের প্রতি এমন অমায়িক আচরণে খটকা লেগেছে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও তাদের মনে হয়নি, দ্বিতীয় রায়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম হতাশা। রায় ঘোষণার পরপরই আইন প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারি দলের কয়েকজন নেতা হতাশা প্রকাশ করায় তাদের সন্দেহ যেন আরো প্রকট হলো; এমন রায়ের কথা সরকারি দলের নেতারা আগে থেকেই জানতেন বলেই কি এমন প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে ছিলেন।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার অপরাধের তুলনায় লঘুদণ্ডের রায়ে জাতি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। রাজনৈতিক মহলসহ সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও সরকারের সমালোচনা ছিল সারা দেশের আলোচনার বিষয়বস্তু। ঘুরেফিরে একটি কথাই উঠে এসেছে, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাত বা সমঝোতা হয়েছে কি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আহমেদ ইমতিয়াজ বলেন, জামায়াত-শিবিরকে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে রাজনীতি করতে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকতে পারে। বিষয়টিকে সমঝোতা হিসেবেও দেখতে পারে অনেকেই। তিনি আরো বলেন, সরকারকে মনে রাখতে হবে, যে বছর নির্বাচন, সেই বছরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের চিন্তা করা ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না।
১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, 'এই রায়ে আমি হতাশ। এটা আপসমূলক মনোভাব। মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার সংঘটিত অপরাধের সাক্ষী এখনো বাংলাদেশে রয়েছে।' সমঝোতা বা আঁতাত হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এই রায় বিভিন্ন প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। আমি দাবি করব, শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হোক।'
জামায়াতের সঙ্গে আপস, সমঝোতার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আপস করে না। আপসে বিশ্বাসী নয়।' রায় সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগসহ সবাই আমরা মনে করি, কাদের মোল্লার বিচারের রায়ের মধ্য দিয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সরকার আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
তবে জাসদ সভাপতি ও সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, 'জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের প্রশ্নই ওঠে না। যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করব।' তিনি বলেন, কাদের মোল্লার রায়ের বিপক্ষে আপিল হবে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসিত বরণ রায় বলেন, গণ-আদালতের রায়ের প্রতিফলন ঘটেনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে। রায়ের মাত্র দুই দিন আগে জামায়াত-শিবিরের ট্রাইব্যুনাল বন্ধের দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতারা এক বিবৃতিতে বলেন, কাদের মোল্লার রায় জাতিকে বিস্মিত করেছে। এটা সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ফল কি না, জনমনে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাঁরা বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে টালবাহানা বা সমঝোতা জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
রায় ঘোষণার আগে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ ট্রাইব্যুনালের আশপাশ, জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন, বিজয়নগর, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় উল্লাস, উৎসব, মিছিলে সরগরম থাকলেও রায়ের পর নিমেষেই তা শেষ হয়ে যায়। হতাশার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে সবাই। তরুণ প্রজন্মের হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক সমঝোতার রায়। এর পরও এই লঘু শাস্তি মেনে নেওয়া কষ্টকর।
এ রায়ে বরং জামায়াত ইসলামীতে স্বস্তি এসেছে। রাজনীতিক, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী মহলসহ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীনতার পক্ষের সব মহলে। এর বাইরে ছিল না আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও। হতাশার সুরে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারাও।
জামায়াতের দেশব্যাপী তাণ্ডব, সহিংস ঘটনাকে কি ভয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল? নাকি আগামী নির্বাচনী যোগ-বিয়োগ করেছে সরকার? সারা দেশে অসংখ্য তাণ্ডবলীলা, পুলিশের ওপর হামলার পরও রাজধানী ঢাকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনাল বন্ধের দাবিতে জামায়াত-শিবিরের মতো সংগঠনকে কেন পুলিশি পাহারায় সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও হিসাব-নিকাশ কষছে সবাই। রায় ঘোষণার মাত্র দুই দিন আগে জামায়াতের এসব কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে বিভিন্ন মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ দলের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াতকে কর্মসূচি পালন করতে দেওয়ার ঘটনাকে শুধুই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। সরকারের 'গ্রিন সিগন্যাল' ছাড়া এটা অসম্ভব বলে দাবি করেন তাঁরা। তাঁরা সমঝোতা বা আঁতাতের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে এ বিষয়ে পরিষ্কার হতে হলে সরকারের পরবর্তী কার্যক্রমের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, অন্যদিকে প্রকাশ্যে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় পুলিশি পাহারায় জামায়াতকে মিছিল-সমাবেশ করতে দেওয়া সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়টি 'সরকারের দেখা উচিত' দাবি করে তিনি বলেন, তা না হলে মানুষের মধ্যে নানা রকম সন্দেহের সৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যে সরকারকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়েছে।
No comments