সমাজ ও রাজনীতি, রাজনীতি ও সমাজ by মেজর (অব.) সুধীর সাহা
বর্তমান বাংলাদেশ চরম এক সামাজিক
অস্থিরতার মধ্যে বসবাস করছে। সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার অবস্থা খারাপ
বলা যাবে না। এটা সব সময়ই আমাদের সমাজে ছিল। আর শুধু আমাদের দেশেই কেন,
সামাজিক প্রতিযোগিতার অস্তিত্ব সব দেশের সব সমাজেই বিদ্যমান।
তবে সমাজভেদে এ প্রতিযোগিতার আঙ্গিক এবং ধরন ভিন্নতর। বাংলাদেশের সামাজিক
অবস্থানের বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সময়ভেদে এই সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং
প্রতিযোগিতার পার্থক্য ঘটেছে। আমাদের অতীত সমাজে সামাজিক প্রতিযোগিতা বলে
যা চালু ছিল তা মূলত শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়নে অবদান, মূল্যবোধ এবং ত্যাগের
মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অর্থাৎ শিক্ষিত হওয়ার জন্য, বেশি করে সমাজের ভালো কাজ
করার জন্য এবং ত্যাগী ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি প্রতিযোগিতা
ছিল। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা বিস্তৃত ছিল।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে
যুক্ত ব্যক্তি, এনজিও ব্যক্তিত্ব, পেশাজীবী ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি সব মহলেই
সমাজে ভালো কাজ করার একটি প্রতিযোগিতা ছিল। আর এ চমৎকার প্রতিযোগিতার হাত
ধরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিল সুন্দর, ন্যায় আর কল্যাণের নীতিব্যবস্থা। কিন্তু
আমি যখন লিখছি সেই সময়টা আসলে সে জায়গায় নেই। আমাদের বর্তমান সমাজেও
প্রতিযোগিতা আছে, তবে সে প্রতিযোগিতায় সাদা নয়, কালো দ্রব্যের প্রাধান্য
বেশি। মাত্র ৪০ বছর আগেও এমন সামাজিক অবস্থা আমাদের ছিল না। ৪০ বছরে কিভাবে
আমাদের সমাজে প্রবেশ করল এত অনিয়ম, এত নীতিবহির্ভূত প্রতিযোগিতার উপকরণ,
তা বিশ্লেষণ করার জন্যই আজ লিখতে বসেছি।
১৯৭১ সালের সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধে যেসব মুক্তিযোদ্ধা অংশ নিয়েছিলেন, আমাদের সবারই জানা যে তাঁদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ সবাই ছিলেন। সেদিন এই সমাজ থেকেই বেরিয়ে এসেছিলেন লাখ লাখ দেশপ্রেমিক মানুষ। কেউ প্রাণ দিয়েছেন, কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কেউবা ধর্ষিতা হয়েছেন। কিন্তু সম্ভবত তখন একজন মুক্তিযোদ্ধাকেও পাওয়া যেত না, যিনি তাঁর আত্মত্যাগের পেছনে ব্যক্তিলাভের বিষয়টি হিসাব করে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনে পুরো পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু যদি সেই সময়ে নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবতেন, তবে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়তো আজ অন্যভাবে লেখা হতো। সেদিন যেমন পাস করা একজন জনপ্রতিনিধিও দেশ এবং সমাজের কথা ভেবেছিলেন, ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন শ্রমিক বা কৃষক অথবা একজন ছাত্র বা শিক্ষকও একইভাবে সবার কথাই ভেবেছিলেন। দেশের কথাই ভেবেছিলেন। ঠিক নিজের কথা ভেবে কেউ সেদিন যুদ্ধে যেতে পারেননি। জীবনের নিশ্চয়তা ছিল না, ভবিষ্যৎ ছিল অন্ধকার; এর পরও শুধু দেশের মায়ায় এবং মানুষকে শোষকদের হাত থেকে বাঁচানোর তাগিদে সেদিন সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শুধু এটুকুই নয়, সুনিশ্চিত সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিত বিপদের মুখে নিজেদের সঁপে দিয়েছিলেন একদল সেনা, পুলিশ এবং বিডিআরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অফিসার সেনারাও।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি, উন্নয়ন, মঙ্গল সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই নষ্ট অবস্থা থেকে এখনো বাঙালি বেরিয়ে আসতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে সবচেয়ে শুরুতে ধ্বংস করলেন এ দেশের রাজনীতিকে। লোভ, অর্থ, ক্ষমতা দিয়ে দলে ভিড়ালেন সুবিধাবাদী একদল রাজনীতিবিদকে। আর তখন থেকেই সুবিধাবাদের রাজনীতির পালে হাওয়া লাগতে শুরু হলো। রাতারাতি রাজনীতিবিদ হওয়ার, রাতারাতি ধনবান হওয়ার পথ খুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়া। কাউকে তিনি রাস্তা থেকে তুলে আনলেন, কাউকে অন্য দল থেকে ছিনিয়ে আনলেন, কাউকে ভয় দেখিয়ে দলে ভিড়ালেন, কাউকে অবৈধ অর্থ দিয়ে কাছে টানলেন, কাউকে বিদেশ থেকে ধরে দেশে নিয়ে এসে রাজনীতিবিদ বানিয়ে দিলেন। এমন একটি হ-য-ব-র-ল রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করে ফেললেন তিনি। সুবিধাভোগী লোকজন তাঁর পতাকাতলে আসতে শুরু করে দিলেন। তিনি সিভিল এবং মিলিটারি প্রশাসনকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দল ও মতের এবং স্বার্থপর কিছু রাজনীতিবিদের দলে ভিড়াতে সমর্থ হলেন। অন্যদিকে তিনি আওয়ামী লীগ ও অন্য রাজনৈতিক দলকে এমন চাপে রাখলেন যে তারা কেউ তাঁর সামনে দাঁড়াতেই পারল না। প্রাসাদ থেকে শুরু হলো বলে তিনি রাজার মতোই এগিয়ে গেলেন সদর্পে। পেছনে পড়ে রইল ত্যাগ-তিতিক্ষা আর নীতির চর্চায় রত কিছু হাতেগোনা ভালো মানুষ আওয়ামী লীগ এবং অন্য ছোট ছোট দলের সঙ্গে। বিএনপিতে সারা জীবন রাজনীতি করেছেন এমন লোকও এলেন, মুক্তিযোদ্ধা এলেন, রাজাকার-স্বাধীনতাবিরোধী এলো, আওয়ামী লীগকে সহ্য করতে পারত না এমন একটি দলও এলো। নতুন সেনাপতির হাতে সঁপে ধরলেন- এরা সবাই তাদের ভবিষ্যতের রাজনীতিকে। ব্যস, সেই যে সুবিধাবাদের রাজনীতি চর্চা শুরু হলো, তা এক সময় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল আমাদের সমাজব্যবস্থাকে। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগও হারিয়ে ফেলল তাদের সাধারণ গতি এবং রাজনৈতিক নীতি।
পেশিশক্তি, কালো টাকার শক্তি এবং অবৈধ রাস্তায় পা এসব শক্তি দিয়েই যেহেতু সমাজের সর্বত্র দখল করা যায়, তখন কে আর বসে বসে আঙুল চুষবে। তাই যে যেভাবে পারে ক্ষমতার পাশাপাশি থেকেছেন। দিন দিন তাই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে; কেননা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ দুটি দলই পালা করে যাওয়ার মতো উপযুক্ত।
অন্যদিকে ছোট ছোট রাজনৈতিক দল নীতির আলো ছড়িয়ে নিজের দারিদ্র্যতা ডেকে না এনে বরং আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন এবং ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন বা হয়ে গিয়েছেন। একটু ভালো করে লক্ষ করলেই দেখবেন, আওয়ামী লীগে যেমন অনেকগুলো কমিউনিস্ট ব্লকের ঝানু নেতারা আছেন, তেমনি বিএনপিতেও আছেন আরেক দল ঝানু কমিউনিস্ট নেতা। জেনারেল শওকতের কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগে এবং পরে বিএনপিতে আসেন। জামায়াত নিয়ে দল গঠনের একটি প্রশ্ন তাঁকে করার সুযোগ আমার হয়েছিল। হেসে বললেন, আমি কিন্তু কোনো জামায়াত নেতার সঙ্গে করমর্দন করিনি এখনো। করমর্দন না করতে পারলেও একসঙ্গে রাজনীতির মঞ্চে বসা অথবা জামায়াতের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদে যোগ না দিয়ে কিন্তু এই প্রতিথযশা মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেননি। মাত্র একটি উদাহরণ দিলাম। বিএনপিতে থাকা হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার যদি একই প্রশ্ন করি, কী জবাব দেবেন তাঁরা?
সমাজ সংস্কারের কথা দূরে থাক, রাজনীতির সংস্কারের কথা কেউ বললে সঙ্গে সঙ্গে তার আজীবন রাজনীতি শেষ। সংস্কার করা যাবে না, রাজনীতিতে কোনো শুভ পরিবর্তন আনা যাবে না। তবে কিভাবে সমাজ দূষণমুক্ত হবে? রাজনীতি ঠিক পথে না চললে সমাজ ঠিক পথে যেতে পারে না। বিষয়টি যদি আজকের রাজনীতিবিদরা একটুও বুঝতেন এবং একটিবার হুঙ্কার দিয়ে আবার সুপথে চলব- এমনটা বলতে পারতেন তবে হয়তোবা আমরা না হলেও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মানুষগুলো এ দেশের, এ সমাজের, এ জাতির প্রকৃত উন্নয়ন দেখে যেতে পারতেন।
লেখক : কলামিস্ট
১৯৭১ সালের সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধে যেসব মুক্তিযোদ্ধা অংশ নিয়েছিলেন, আমাদের সবারই জানা যে তাঁদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ সবাই ছিলেন। সেদিন এই সমাজ থেকেই বেরিয়ে এসেছিলেন লাখ লাখ দেশপ্রেমিক মানুষ। কেউ প্রাণ দিয়েছেন, কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কেউবা ধর্ষিতা হয়েছেন। কিন্তু সম্ভবত তখন একজন মুক্তিযোদ্ধাকেও পাওয়া যেত না, যিনি তাঁর আত্মত্যাগের পেছনে ব্যক্তিলাভের বিষয়টি হিসাব করে নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনে পুরো পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু যদি সেই সময়ে নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবতেন, তবে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়তো আজ অন্যভাবে লেখা হতো। সেদিন যেমন পাস করা একজন জনপ্রতিনিধিও দেশ এবং সমাজের কথা ভেবেছিলেন, ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন শ্রমিক বা কৃষক অথবা একজন ছাত্র বা শিক্ষকও একইভাবে সবার কথাই ভেবেছিলেন। দেশের কথাই ভেবেছিলেন। ঠিক নিজের কথা ভেবে কেউ সেদিন যুদ্ধে যেতে পারেননি। জীবনের নিশ্চয়তা ছিল না, ভবিষ্যৎ ছিল অন্ধকার; এর পরও শুধু দেশের মায়ায় এবং মানুষকে শোষকদের হাত থেকে বাঁচানোর তাগিদে সেদিন সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শুধু এটুকুই নয়, সুনিশ্চিত সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিত বিপদের মুখে নিজেদের সঁপে দিয়েছিলেন একদল সেনা, পুলিশ এবং বিডিআরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অফিসার সেনারাও।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি, উন্নয়ন, মঙ্গল সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই নষ্ট অবস্থা থেকে এখনো বাঙালি বেরিয়ে আসতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে সবচেয়ে শুরুতে ধ্বংস করলেন এ দেশের রাজনীতিকে। লোভ, অর্থ, ক্ষমতা দিয়ে দলে ভিড়ালেন সুবিধাবাদী একদল রাজনীতিবিদকে। আর তখন থেকেই সুবিধাবাদের রাজনীতির পালে হাওয়া লাগতে শুরু হলো। রাতারাতি রাজনীতিবিদ হওয়ার, রাতারাতি ধনবান হওয়ার পথ খুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়া। কাউকে তিনি রাস্তা থেকে তুলে আনলেন, কাউকে অন্য দল থেকে ছিনিয়ে আনলেন, কাউকে ভয় দেখিয়ে দলে ভিড়ালেন, কাউকে অবৈধ অর্থ দিয়ে কাছে টানলেন, কাউকে বিদেশ থেকে ধরে দেশে নিয়ে এসে রাজনীতিবিদ বানিয়ে দিলেন। এমন একটি হ-য-ব-র-ল রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করে ফেললেন তিনি। সুবিধাভোগী লোকজন তাঁর পতাকাতলে আসতে শুরু করে দিলেন। তিনি সিভিল এবং মিলিটারি প্রশাসনকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দল ও মতের এবং স্বার্থপর কিছু রাজনীতিবিদের দলে ভিড়াতে সমর্থ হলেন। অন্যদিকে তিনি আওয়ামী লীগ ও অন্য রাজনৈতিক দলকে এমন চাপে রাখলেন যে তারা কেউ তাঁর সামনে দাঁড়াতেই পারল না। প্রাসাদ থেকে শুরু হলো বলে তিনি রাজার মতোই এগিয়ে গেলেন সদর্পে। পেছনে পড়ে রইল ত্যাগ-তিতিক্ষা আর নীতির চর্চায় রত কিছু হাতেগোনা ভালো মানুষ আওয়ামী লীগ এবং অন্য ছোট ছোট দলের সঙ্গে। বিএনপিতে সারা জীবন রাজনীতি করেছেন এমন লোকও এলেন, মুক্তিযোদ্ধা এলেন, রাজাকার-স্বাধীনতাবিরোধী এলো, আওয়ামী লীগকে সহ্য করতে পারত না এমন একটি দলও এলো। নতুন সেনাপতির হাতে সঁপে ধরলেন- এরা সবাই তাদের ভবিষ্যতের রাজনীতিকে। ব্যস, সেই যে সুবিধাবাদের রাজনীতি চর্চা শুরু হলো, তা এক সময় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল আমাদের সমাজব্যবস্থাকে। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগও হারিয়ে ফেলল তাদের সাধারণ গতি এবং রাজনৈতিক নীতি।
পেশিশক্তি, কালো টাকার শক্তি এবং অবৈধ রাস্তায় পা এসব শক্তি দিয়েই যেহেতু সমাজের সর্বত্র দখল করা যায়, তখন কে আর বসে বসে আঙুল চুষবে। তাই যে যেভাবে পারে ক্ষমতার পাশাপাশি থেকেছেন। দিন দিন তাই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে; কেননা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ দুটি দলই পালা করে যাওয়ার মতো উপযুক্ত।
অন্যদিকে ছোট ছোট রাজনৈতিক দল নীতির আলো ছড়িয়ে নিজের দারিদ্র্যতা ডেকে না এনে বরং আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন এবং ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন বা হয়ে গিয়েছেন। একটু ভালো করে লক্ষ করলেই দেখবেন, আওয়ামী লীগে যেমন অনেকগুলো কমিউনিস্ট ব্লকের ঝানু নেতারা আছেন, তেমনি বিএনপিতেও আছেন আরেক দল ঝানু কমিউনিস্ট নেতা। জেনারেল শওকতের কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগে এবং পরে বিএনপিতে আসেন। জামায়াত নিয়ে দল গঠনের একটি প্রশ্ন তাঁকে করার সুযোগ আমার হয়েছিল। হেসে বললেন, আমি কিন্তু কোনো জামায়াত নেতার সঙ্গে করমর্দন করিনি এখনো। করমর্দন না করতে পারলেও একসঙ্গে রাজনীতির মঞ্চে বসা অথবা জামায়াতের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদে যোগ না দিয়ে কিন্তু এই প্রতিথযশা মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেননি। মাত্র একটি উদাহরণ দিলাম। বিএনপিতে থাকা হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার যদি একই প্রশ্ন করি, কী জবাব দেবেন তাঁরা?
সমাজ সংস্কারের কথা দূরে থাক, রাজনীতির সংস্কারের কথা কেউ বললে সঙ্গে সঙ্গে তার আজীবন রাজনীতি শেষ। সংস্কার করা যাবে না, রাজনীতিতে কোনো শুভ পরিবর্তন আনা যাবে না। তবে কিভাবে সমাজ দূষণমুক্ত হবে? রাজনীতি ঠিক পথে না চললে সমাজ ঠিক পথে যেতে পারে না। বিষয়টি যদি আজকের রাজনীতিবিদরা একটুও বুঝতেন এবং একটিবার হুঙ্কার দিয়ে আবার সুপথে চলব- এমনটা বলতে পারতেন তবে হয়তোবা আমরা না হলেও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মানুষগুলো এ দেশের, এ সমাজের, এ জাতির প্রকৃত উন্নয়ন দেখে যেতে পারতেন।
লেখক : কলামিস্ট
No comments