২৬৭ কোটি টাকার ২০ প্রকল্প অনুমোদন- জলবায়ু বদলের ঝুঁকি মোকাবেলায় ট্রাস্টি বোর্ডের তৃতীয় সভা

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় ২৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বন এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ডের তৃতীয় সভায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়।
বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ২৪৭ সরকারী এবং বিভিন্ন এনজিও ৩ হাজার ৬৬৫ প্রকল্প জমা দিয়েছে। এখন শুধু সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। সরকারী প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার পর বাকি অর্থ বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও)কে বরাদ্দ দেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, অনুমোদনের ৰেত্রে যেসব প্রকল্পে সরাসরি জনগণ উপকৃত হবে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। জনসচেতনতার জন্য জমা দেয়া প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এনজিওগুলোর অধিকাংশই জনসচেতনতার ওপর গুরম্নত্ব দিয়ে প্রকল্প জমা দিয়েছে। এছাড়া অনেকে একই প্রকল্প একটু এদিক-সেদিক করে জমা দিয়ে প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। এনজিওদের এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২শ' বলে জানান তিনি। এছাড়া যারা প্রকল্পে গাড়ি এবং বাড়ি নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে তা কর্তন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার অনুমোদন দেয়া ২০ প্রকল্পের দু'টিই বন এবং পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নিজ এলাকা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্প দু'টি বাসত্মবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ৫ কোটি এবং বাঁধের প্রতিরৰা কাজে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
প্রকল্প দু'টি হচ্ছে রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালখালি উপজেলায় পানিপ্রবাহ সমস্যা সমাধান প্রকল্প এবং রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলীর ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ প্রতিরা কাজ। প্রকল্প দুটির মধ্যে প্রথমটি বাসত্মবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এবং দ্বিতীয়টি বাসত্মবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রথম প্রকল্পটি বাসত্মবায়নের জন্য চলতি বছর ১ কোটি ২১ লাখ এবং দ্বিতীয়টির জন্য ১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অনুমোদন পাওয়া অন্যসব প্রকল্প হচ্ছে বিরি'র ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় খরাপ্রবণ উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার জন্য টেকসই ফসল ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলা বিষয়ক প্রকল্প, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫ কোটি টাকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উষ্ণতা এবং লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিভিন্ন ফসলের জাত বাছাই, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১ কোটি ৭ লাখ টাকার জামালপুর এবং শেরপুর এলাকার ১৩ চরের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রকল্প, ত্রাণ এবং পুনর্বাসন অধিদফতরের আইলাবিধ্বসত্ম খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সহনীয় গৃহনির্মাণ বিষয়ে তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গৃহনির্মাণ প্রকল্পের প্রতিটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ঢাকার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য বুড়িগঙ্গা এবং তুরাগ নদীর পলিথিন এবং বর্জ্য অপসারণের জন্য বাংলাদেশ অভ্যনত্মরীণ নৌপরিবহন কতর্ৃপরে (বিআইডবিস্নউটিএ) ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাটের ধলেশ্বরী নদী খননের জন্য ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প, ২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিসত্মরে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ চিহ্নিতকরণে স্থায়ী পর্যবেণ নেটওয়ার্ক স্থাপন ও গাণিতিক মডেল সমীা, পরিবেশ অধিদফতরের ১৫ কোটি টাকার সমগ্র বাংলাদেশের শহরগুলোতে জৈব আবর্জনা ব্যবহার করে প্রোগ্রামেটিক সিডিএম শীর্ষক প্রকল্প, বন অধিদফতরের ৭ কোটি টাকা ব্যয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কোর জোনে জলবায়ু পরিবর্তনে স্থিতিস্থাপক বনায়ন, ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মধুপুর বনাঞ্চলে স্থানীয় ও জাতিতাত্তি্বক জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে ২টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ডের ১১ কোটি ২০ লাখ টাকার সৌরবিদু্যত ব্যবহার করে সেচপাম্প চালানো এবং বিদু্যত ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, পরিবেশ অধিদফতরের আওতায় ১ কোটি টাকার কিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজমের আওতায় ডিএনএ প্রকল্প মূল্যায়ন এবং উদ্যোক্তাগণের সিডিএম প্রকল্প তৈরির সমতা অর্জন এবং সিডিএম বেস লাইন প্রস্তুত সংক্রানত্ম প্রকল্প, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩ কোটি ৯৯ লাখ, এসপিএআরআরএসও ১৮ কোটি ৫০ লাখ, বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন কেন্দ্রের ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আগে অনুমোদন দেয়া ৫ প্রকল্পের ব্যয় আরও এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.