চট্টগ্রামে বৃষ্টির মতো গুলি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের সমর্থনে গতকাল চট্টগ্রাম নগরীতে
মিছিল করার সময় পুলিশের গুলিতে ছাত্রশিবিরের এক নেতা এবং পুলিশ-ছাত্রলীগের
যৌথ হামলায় দুই জামায়াতকর্মী নিহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামে
জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের শান্তিপূর্ণ দু’টি মিছিলে বৃষ্টির মতো
গুলি চালায় পুলিশ। এতে ছাত্রশিবির নেতা ইমরান খান নিহত হয়েছেন।
অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই শতাধিক। তাদের মধ্যে
কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ দেখে জানা যায়,
পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ জামায়াত-শিবির
নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে তাদের পা ও হাতে গুলি করেন। কাতালগঞ্জ মসজিদে নামাজ
আদায়রত মুসল্লিদের ওপর ওসি প্রদীপ দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গুলিবর্ষণ
করে।
পুলিশ ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩৫ জনকে গ্রেফতার করে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে পুলিশ ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর বহদ্দারহাট, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর এবং পাহাড়তলীর অলঙ্কার মোড় এলাকা রণেেত্র পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ওপর শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ, রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিপে করে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এ ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করেছে। তাদের মতে, পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।
এ দিকে হরতালে চট্টগ্রাম মূলত অচল হয়ে পড়ে। কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করেনি। স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। নগরের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে পিকেটিং করে।
বেলা ১টার দিকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন অলঙ্কার মোড় এলাকায় একটি মিছিল বের করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে তাদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের নেতা ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র ইমরান খান নিহত হন। এরপর মিছিলকারীরা পুলিশকে ল্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে জামায়াত-ছাত্রশিবিরের ২০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। বেলা ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে পিকেটারদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলে। এ সময় পুলিশ ২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। অপর দিকে গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পুলিশ সেখানেও অভিযান চালায় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।
নিহত ছাত্রশিবির নেতা ইমরান খান পাবনা জেলার ফরিদপুরের তেনাই গ্রামের বাবুল খানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্র।
ছাত্রশিবির নেতা ইমরান খান নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা সোয়া ১টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি এন মুহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ অতিক্রম করার পর পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের কয়েকজন সদস্য অতর্কিতভাবে বাংলানিউজের ফটো সাংবাদিক সোহেল সরওয়ারের ওপর হামলা চালায়। এতে তার নাক ফেটে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যদর্শীরা জানান, মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিভিন্ন দোকানপাট, বাসাবাড়ি ও মসজিদ থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে হাতেপায়ে গুলি করেন। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ শাহ কাতাল বড় মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় মুসল্লিদের ধরে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন মুসল্লিকে গুলি করে। এ সময় ৭০ বছরের এক লোক গুলিবিদ্ধ হন। সংঘর্ষ চলাকালে জামায়াত-শিবির বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে।
পুলিশের চান্দগাঁও জোনের উপকমিশনার মিরাজ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে জানান, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল করে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিপে করে।
এ দিকে জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি করে তিনজনকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবির উত্তর ও দণি নেতৃবৃন্দ।
জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় প্রদানের প্রতিবাদ, বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বাতিল এবং জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবিতে ও হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে গুলি করে তিনজনকে হত্যার প্রতিবাদে নগরীর লালদীঘির পাড়ে এক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামী নেতা ও সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী।
পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় জামায়াত কর্মী নিহত
নগরীর আগ্রাবাদে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহত জামায়াত কর্মীর নাম মুহাম্মদ আফজাল (২৪)। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি নিহত হন।
প্রত্যদর্শীরা জানান, হরতালের সমর্থনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নগরীর দেওয়ানহাট থেকে একটি মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ মিছিলে অতর্কিত হামলা করে। এতে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর পুলিশকে সাথে নিয়ে ছাত্রলীগের একদল ক্যাডার এলাকায় ছাত্রশিবির কর্মীদের খুঁজতে থাকে। তারা আগ্রাবাদ সেন্টমার্টিন হোটেলের সামনে জামায়াত কর্মী মুহাম্মদ আফজালকে পেয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে এবং মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করে।
নগরীর ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট মোড়ে পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে রাত ৯টার দিকে নিহত হন জামায়াতকর্মী শফিকুল ইসলাম (২৫)। তিনি সিইপিজেডের ইয়ং ওয়ান কারখানার কর্মচারী।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশফাঁড়ির উপপরিদর্শক পংকজ বড়–য়া নয়া দিগন্তকে জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে আফজাল মারা যান আর রাত ৯টার দিকে শফিকুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
৪ শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ, গ্রেফতার ৪
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দণি চট্টগ্রামের সর্বত্রই সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে সকাল ১০টায় লোহাগাড়ায় জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বেশ কিছু রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে চার শিবির কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে ছাত্রশিবিরের প থেকে জানানো হয়েছে। এ দিকে জামায়াত, শিবির ও পিকেটারদের হামলায় পুলিশ বহনকারী একটি পিকআপ তিগ্রস্ত হয়। গাড়িচালক পুলিশ সদস্য জয়নাল আবেদীন (৪০) গুরুতর আহত হন। তাকে লোহাগাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চুনতি বনপুকুর এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় র্যাব- ৭ এর একটি দল ঘটনাস্থল থেকে চার শিবির কর্মীকে আটক করে লোহাগাড়া থানায় সোপর্দ করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো নুরুল আমিন (২২), আবদুল্লাহ তকি (২০), কবির আহমদ (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম (২২)। জামায়াত শিবিরের বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ চার-পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ প্রায় ১৭ রাউন্ড গুলি করে। এ ছাড়া হরতাল চলাকালে দণি চট্টগ্রামের ১৯ রুটসহ চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া বোয়ালখালী উপজেলার বেশির ভাগ সড়ক পিকেটারেরা অবরোধ করে। এ সময় বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
মিরসরাইয়ে শিবিরকর্মী সন্দেহে ৪ দিনমজুর আটক
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, মিরসরাইয়ে শিবিরকর্মী সন্দেহে চার দিনমজুরকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দণি ওয়াহেদপুর এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে তাদের আটক করা হয়। তারা হলেন শাহীন, সাঈন, শাহ আলম ও কামরুল।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিরসরাই তিন নম্বর ব্লকের সাবেক পরিচালক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান বলেন, আটককৃতরা কেউ রাজনীতিতে জড়িত নন। তারা সবাই দিনমজুর। আমি আমাদের নেতৃবৃন্দের সাথে তাদের ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছি।
পুলিশ ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩৫ জনকে গ্রেফতার করে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে পুলিশ ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর বহদ্দারহাট, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর এবং পাহাড়তলীর অলঙ্কার মোড় এলাকা রণেেত্র পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ওপর শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ, রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিপে করে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এ ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করেছে। তাদের মতে, পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।
এ দিকে হরতালে চট্টগ্রাম মূলত অচল হয়ে পড়ে। কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করেনি। স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। নগরের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে পিকেটিং করে।
বেলা ১টার দিকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন অলঙ্কার মোড় এলাকায় একটি মিছিল বের করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে তাদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের নেতা ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র ইমরান খান নিহত হন। এরপর মিছিলকারীরা পুলিশকে ল্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে জামায়াত-ছাত্রশিবিরের ২০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। বেলা ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে পিকেটারদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলে। এ সময় পুলিশ ২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। অপর দিকে গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পুলিশ সেখানেও অভিযান চালায় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।
নিহত ছাত্রশিবির নেতা ইমরান খান পাবনা জেলার ফরিদপুরের তেনাই গ্রামের বাবুল খানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্র।
ছাত্রশিবির নেতা ইমরান খান নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা সোয়া ১টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি এন মুহাম্মদ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ অতিক্রম করার পর পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের কয়েকজন সদস্য অতর্কিতভাবে বাংলানিউজের ফটো সাংবাদিক সোহেল সরওয়ারের ওপর হামলা চালায়। এতে তার নাক ফেটে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যদর্শীরা জানান, মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিভিন্ন দোকানপাট, বাসাবাড়ি ও মসজিদ থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে হাতেপায়ে গুলি করেন। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ শাহ কাতাল বড় মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় মুসল্লিদের ধরে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন মুসল্লিকে গুলি করে। এ সময় ৭০ বছরের এক লোক গুলিবিদ্ধ হন। সংঘর্ষ চলাকালে জামায়াত-শিবির বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে।
পুলিশের চান্দগাঁও জোনের উপকমিশনার মিরাজ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে জানান, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল করে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিপে করে।
এ দিকে জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি করে তিনজনকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবির উত্তর ও দণি নেতৃবৃন্দ।
জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় প্রদানের প্রতিবাদ, বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বাতিল এবং জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবিতে ও হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে গুলি করে তিনজনকে হত্যার প্রতিবাদে নগরীর লালদীঘির পাড়ে এক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামী নেতা ও সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী।
পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় জামায়াত কর্মী নিহত
নগরীর আগ্রাবাদে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহত জামায়াত কর্মীর নাম মুহাম্মদ আফজাল (২৪)। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি নিহত হন।
প্রত্যদর্শীরা জানান, হরতালের সমর্থনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নগরীর দেওয়ানহাট থেকে একটি মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ মিছিলে অতর্কিত হামলা করে। এতে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর পুলিশকে সাথে নিয়ে ছাত্রলীগের একদল ক্যাডার এলাকায় ছাত্রশিবির কর্মীদের খুঁজতে থাকে। তারা আগ্রাবাদ সেন্টমার্টিন হোটেলের সামনে জামায়াত কর্মী মুহাম্মদ আফজালকে পেয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে এবং মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করে।
নগরীর ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট মোড়ে পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে রাত ৯টার দিকে নিহত হন জামায়াতকর্মী শফিকুল ইসলাম (২৫)। তিনি সিইপিজেডের ইয়ং ওয়ান কারখানার কর্মচারী।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশফাঁড়ির উপপরিদর্শক পংকজ বড়–য়া নয়া দিগন্তকে জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে আফজাল মারা যান আর রাত ৯টার দিকে শফিকুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
৪ শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ, গ্রেফতার ৪
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দণি চট্টগ্রামের সর্বত্রই সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে সকাল ১০টায় লোহাগাড়ায় জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বেশ কিছু রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে চার শিবির কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে ছাত্রশিবিরের প থেকে জানানো হয়েছে। এ দিকে জামায়াত, শিবির ও পিকেটারদের হামলায় পুলিশ বহনকারী একটি পিকআপ তিগ্রস্ত হয়। গাড়িচালক পুলিশ সদস্য জয়নাল আবেদীন (৪০) গুরুতর আহত হন। তাকে লোহাগাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চুনতি বনপুকুর এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় র্যাব- ৭ এর একটি দল ঘটনাস্থল থেকে চার শিবির কর্মীকে আটক করে লোহাগাড়া থানায় সোপর্দ করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো নুরুল আমিন (২২), আবদুল্লাহ তকি (২০), কবির আহমদ (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম (২২)। জামায়াত শিবিরের বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ চার-পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ প্রায় ১৭ রাউন্ড গুলি করে। এ ছাড়া হরতাল চলাকালে দণি চট্টগ্রামের ১৯ রুটসহ চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া বোয়ালখালী উপজেলার বেশির ভাগ সড়ক পিকেটারেরা অবরোধ করে। এ সময় বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
মিরসরাইয়ে শিবিরকর্মী সন্দেহে ৪ দিনমজুর আটক
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, মিরসরাইয়ে শিবিরকর্মী সন্দেহে চার দিনমজুরকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দণি ওয়াহেদপুর এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে তাদের আটক করা হয়। তারা হলেন শাহীন, সাঈন, শাহ আলম ও কামরুল।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিরসরাই তিন নম্বর ব্লকের সাবেক পরিচালক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান বলেন, আটককৃতরা কেউ রাজনীতিতে জড়িত নন। তারা সবাই দিনমজুর। আমি আমাদের নেতৃবৃন্দের সাথে তাদের ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছি।
No comments