চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল-ইউনাইটেড- তর সইছে না রোনালদোর

তিনি জানতেন! তাঁর মন বলছিল, এমনই হবে। হয়েছেও। চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্রয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পেয়ে গেছেন তাঁর পুরোনো ক্লাবকে, যে ক্লাবে এসেই তাঁর তারকা হয়ে ওঠা।
ক্যারিয়ারের একমাত্র ব্যালন ডি’অরও জিতেছেন এই ক্লাবের হয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগও। পেশাদারির এই যুগে আবেগের মূল্য হয়তো সামান্যই। কিন্তু তার পরও হূদয়ের এক কোণে এই ক্লাবকে সযতনে লালন করেন। সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আবার ফিরে আসছে রোনালদোর জীবনে। এবার প্রতিপক্ষরূপে!
শেষ ষোলোতে মুখোমুখি হচ্ছে ইউনাইটেড-রিয়াল মাদ্রিদ। আগামী বুধবার প্রথম লেগটা অবশ্য বার্নাব্যুতে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফিরতি লেগ ৫ মার্চ। ফুটবল বিশ্ব অধীর আগ্রহে দিন গুনছে এই দ্বৈরথের। তর সইছে না রোনালদোরও, ‘আমার একটা অনুভূতি হচ্ছিল, হয়তো ইউনাইটেডের সঙ্গেই আমাদের খেলা পড়বে। সত্যি সত্যিই যখন এটা হলো, আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম, যদিও এটাও আমি জানি, আমাদের জন্য এটা হবে কঠিন এক নকআউট পর্বের লড়াই।’
এই ম্যাচে তাঁর ওপর থাকবে আলাদা নজর। ২০০৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে অ্যালেক্স ফার্গুসনের শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন। এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন আধা যুগ। তাঁকে ঘিরে বাড়তি আগ্রহটা বুঝতে পারছেন রোনালদোও, ‘ভালো করেই জানি, আমার ওপর সবার দৃষ্টি থাকবে। কিন্তু এটা আমাকে মোটেও বাড়তি কোনো চাপের মধ্যে ফেলছে না। এটা স্রেফ আমার পুরোনো দলের বিপক্ষে একটা খেলা। আমি তো আর যুদ্ধে যাচ্ছি না, আমি যাচ্ছি আমার বাড়িতে।’ বাড়ি? রোনালদো পরের বাক্যেই পরিষ্কার করে দিলেন, ‘ম্যানচেস্টার আমার বাড়িই ছিল। এটা এখনো আমার হূদয়ে বিশেষ একটা জায়গা দখল করে আছে। যখন কেউ আপনাকে অনেক সমাদর করবে, সেই স্মৃতি আপনি কখনোই ভুলবেন না।’
তবে লড়াইটা যে তাঁর জন্য ভীষণ আবেগের হবে, সেটা স্বীকার করলেন নির্দ্বিধায়, ‘আমি সেখানে ছয় বছর ছিলাম। আমার অনেক বন্ধু আছে সেখানে। এটা হবে আমার জন্য অনেক আবেগের ম্যাচ।’ ফার্গুসন যে তাঁর মনে এখনো আলাদা একটা আসনে, বলেছেন সেটিও, ‘তিনি আমাকে ফুটবলের মৌলিক জিনিসগুলো শিখিয়েছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ম্যানচেস্টারে এসেছিলাম। তিনি সম্ভাব্য সেরা উপায়েই আমার ক্যারিয়ারের দেখভাল করেছেন। আমার কাছে তিনি ফুটবলের দিক দিয়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে এখনো আমার দারুণ সম্পর্ক। তাঁকে আবার দেখতে পারাটা হবে দারুণ।’
তাঁর একটা ভবিষ্যদ্বাণী খেটে গেছে। এবার রোনালদোই বলুন, কী হবে এই লড়াইয়ের ফল? সরাসরি ভবিষ্যদ্বাণী করেননি তিনি, ‘ইউনাইটেড ইংল্যান্ডের সেরা দল। প্রতিবছরই দলটি কোনো না কোনো শিরোপা জেতে। অ্যালেক্স ফার্গুসনের মতো দুর্দান্ত এক কোচও আছে তাদের। তবে আমাদেরও হোসে মরিনহোর মতো কোচ আছেন। যেহেতু তিনি এখন আমার কোচ, আমি অবশ্যই চাই মরিনহোই জিতুন। তবে কোন দলটা বেশি ভালো, এটা বলা অন্যায়ই হয়ে যাবে। এটা ফেরারি আর পোরশের মধ্যে তুলনা করার মতো। দুই দলই ভালো।’
দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে অবশ্য ইউনাইটেডই এগিয়ে। বার্সেলোনার চেয়ে ১৬ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে লিগ শিরোপা একরকম হাতছাড়া করেই ফেলেছে রিয়াল। আর ৯ পয়েন্টের লিড নিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে ভালোমতোই এগোচ্ছে ইউনাইটেড। তবে গতকাল ২৮তম জন্মদিন পালন করা রোনালদো ‘আসল ম্যাচে’ রিয়ালকেই এগিয়ে রাখছেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমরা ভালোই করব। আমার মতে, রিয়াল মাদ্রিদ তুলনামূলকভাবে ভালো দল, কিন্তু সেটা আমাদের মাঠে প্রমাণ করে দিতে হবে। কারণ, ইউনাইটেড দল হিসেবে সত্যিই ইউনাইটেড (একতাবদ্ধ)।’ ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.