আঁধারের বুক চিরে ছিনিয়ে আনতে হবে অধিকার- চতুর্থ মানবাধিকার নাট্যোৎসব শুরু

ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন মানুষের মর্যাদাপূর্ণ বিকাশ। এ বিকাশ মানুষের অধিকার। প্রতিটি মানুষই স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য কিছু অধিকার নিয়ে জন্মায়।
কিন্তু মানব সৃষ্ট নানা কারণে মানুষ তাঁর অধিকারগুলো সঠিকভাবে চর্চর্া করতে পারে না। আমাদের দেশের দিকে তাকালে বিষয়টি প্রকটভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিৰা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা থেকে শুরম্ন করে প্রতিটি ৰেত্রে মানুষের অধিকার পূরণে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বৈষম্যের সৃষ্টি পরিবার থেকে শুরম্ন করে রাষ্ট্র পর্যনত্ম। যদিও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে নারী-পুরম্নষ, ধনী-দরিদ্রসহ সকল নাগরিকের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, তথাপি 'সমান অধিকার' শব্দটি আজ কেবল সংবিধান ও বই-পুসত্মকে অবরম্নদ্ধ হয়ে পড়েছে আর বিভিন্নভাবে লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে মানুষের অধিকার। মানুষের বেঁচে থাকা ও বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে মর্যাদার, সে বিষয়েই মানুষকে সচেতন করে তুলতে দীর্ঘ চার বছর যাবত কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার নাট্য পরিষদ (মানাপ)।
এই পরিষদেরই তিন দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় মানবাধিকার নাট্যোৎসব শুরম্ন হলো শুক্রবার। এবারের সেস্নাগান 'অাঁধারের বুক চিরে সত্যেরে করি উন্মোচন।' ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে আয়োজিত এ উৎসবের উদ্বোধন করেন সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক। আরও বক্তৃতা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ ও মান্নান হীরা। মানাপের সহসভাপতি আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে স্বাগত ভাষণ দেন সাধারণ সম্পাদক মোতাহার আকন্দ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মানাপের এক নারী কর্মী।
ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে, কাগজের তৈরি উড়োজাহাজ উড়িয়ে এবং ঢোল বাজিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, মানবাধিকার মানুষের জন্মাধিকার। ন্যায্য এ অধিকার না পেলে অাঁধারের বুক চিরে তা ছিনিয়ে আনতে হবে, বাঁধন টুটে তাকে মুক্ত করতে হবে। আর এ কাজ করতে হবে অধিকার বঞ্চিতদেরই। মানবাধিকার লঙ্ঘিত মেয়েদের বলি, তোমাদের অধিকার আদায়ে তোমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ছেলেদের বলি, তোমাদের মন বড় করতে হবে। দৰিণ এশিয়ায় বাঙালীর ইতিহাস ৫ হাজার বছরের। একমাত্র বাঙালীই যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভারত বা পাকিসত্মানের মতো লন্ডন থেকে ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীনতা পায়নি, যে অমুক দিন থেকে তোমরা স্বাধীন। যেহেতু লড়াই করে অধিকার অর্জনের জাতি আমরা, সেহেতু এ ৰেত্রেও আমরা পারব। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের পৰেই সম্ভব। মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের দেশে নাটক খুব জনপ্রিয়, কারণ এখানে গণতন্ত্রের চর্চর্া নেই। যতটুকু আছে তা নাটকে। যত অনিয়ম, অত্যাচার, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে, এ সব কিছুই নাট্যকর্মীরা তুলে ধরছে নাটকের মাধ্যমে। মানুষকে তাঁর অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে নাট্যকর্মীরাই ভূমিকা রেখে চলেছে। মান্নান হীরা বলেন, এখনও গণতন্ত্রের বিরম্নদ্ধে চক্রানত্ম চলছে। শিবিরের রগ কাটার রাজনীতি অব্যাহত রয়েছে, সেনাবাহিনী নিয়ে চক্রানত্ম চলছে। এসব নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা তুলে ধরে নাটক লিখতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে মানবাধিকার নাট্যকর্মীরা নারী-পুরম্নষের সমতা নিশ্চিত করে সকল প্রকার নারী নির্যাতন বন্ধ ও যাবতীয় বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ, দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া ষড়যন্ত্রকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবিলম্বে সম্পন্ন করতে এবং সংবিধান সংশোধন করে যাবতীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে জনগণের মৌলিক চাহিদাসমূহ সমতার ভিত্তিতে পরিপূরণের জন্য রাষ্ট্রকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে এবং দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয় ৰমতার মধ্যে রাখার দাবি জানান। উদ্বোধনী দিনে মানাপের জয়পুরহাটের নাট্যকর্মীরা নাটক 'কালবেলা', সিরাজগঞ্জের নাট্যকর্মীরা নাটক 'চেনা মানুষেরা', খুলনার রূপানত্মর 'পটগান' এবং আসকের কর্মজীবী শিশু নাট্যদল কবিগুরম্ন রবি ঠাকুরের 'রাজা ও রাজদ্রোহী' নাটক মঞ্চায়ন করে। এ ছাড়া ঢাকার প্রাচ্যনাট ও আরণ্যক নাট্যদলও পরিবেশন করে নাটক। আজ শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মানবাধিকার নাট্যকর্মীরা সকাল দশটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক শোভাযাত্রা বের করবে, শেষ হবে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে গিয়ে। যথারীতি বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে থাকবে আলোচনা ও নাটক। আগামী রবিবার উৎসবের সমাপনী দিনে তিন গুণী ব্যক্তিত্ব সরদার ফজলুল করিম, অধ্যাপক যতীন সরকার ও নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদারকে প্রদান করা হবে সম্মাননা।

No comments

Powered by Blogger.