নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা- হয়তো সম্ভব, তবে ঝুঁকি অনেক
নিজস্ব অর্থায়নে চলতি অর্থবছরে শুরু করে
পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার কথা এক বিবৃতিতে সংসদকে
জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
কার্যপ্রণালীর
৩০০ বিধিতে দেয়া এই বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে কাজটি স্থগিত করা হয়েছে, সেখান থেকেই আবার
শুরু হবে। পরবর্তী পদেেপ থাকবে, সেতু নির্মাণে ইতোমধ্যে প্রাক বাছাই
পাঁচজন ঠিকাদারের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান। ইতোমধ্যে নির্ধারিত সেতু নির্মাণ
পর্যবেণ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান, নদী শাসনের
জন্য সম্মতি?মে প্রণীত দরপত্র আহ্বান, একই সাথে সার্ভিস এরিয়া প্রস্তুতি
এবং মাওয়া অ্যাপ্রোচ রাস্তা নির্মাণের দরপত্র আহ্বান ও ইসলামী উন্নয়ন
ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় নির্মিতব্য জাজিরা সংযোগ সড়কের জন্য নির্বাচিত
ঠিকাদারের সাথে চুক্তি সম্পাদন। এসব কাজে মোট ৩০৫ কোটি মার্কিন ডলার,
অর্থাৎ ২৪ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা লাগবে। এই ব্যয়ের জন্য অর্থ সাশ্রয় এখন
থেকে চার বছরের মধ্যে করতে হবে। এই পুরো প্রকল্প নিজস্ব ব্যয়ে সম্পন্ন
করতে প্রথমেই নজর দিতে হবে নিজস্ব সম্পদ থেকে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলারের
বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে
শুরু হয়ে পরবর্তী তিন বছরে কাজ সম্পন্ন করতে পদ্মা সেতুর জন্য এবারের
বাজেটে যে বরাদ্দ রয়েছে, তা কিছুটা বাড়াতে হবে। পরবর্তী তিন বছরের জন্য
পদ্মা সেততুর প্রাক্কলিত বাজেট অনেক বাড়াতে হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ও অন্য সহ-অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরে যাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট একটি প্রস্তাব দিলেন সংসদে। এই সেতু নির্মাণে যেসব বিকল্পের কথা বলা হচ্ছিল, তার মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে স্থগিত হওয়ার পর থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন-উদ্যোগ অধিকতর বাস্তবসম্মত। যদিও এক বছর তিন মাস বিশ্বব্যাংকের সাথে সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনের কারণে ২৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প-ব্যয় এখন ২৭ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে কাজ শেষ করতে আরো সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকছি লাগবে। বর্তমান সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলে প্রকল্পের কিছুটা অগ্রগতি হয়তো সম্ভব। অর্থমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সক্ষমতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য গত কয়েক বছরে বাজেট ও রাজস্ব আয়ের আকার কত বেড়েছে সেটি তুলে ধরেছেন। কিন্তু পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ততার জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে আসার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই বিড়ম্বনা ও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর জন্য অন্য সব ক্ষেত্রে অর্থায়ন বন্ধ হয়তো করবে না। কিন্তু প্রতিটি প্রকল্পে দুর্নীতি নিরোধক বিশেষ ব্যবস্থা নিতে গিয়ে প্রকল্প নেগোসিয়েশন ও অর্থছাড়করণ দুটোতেই বিলম্ব হবে। একই অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে আইএমএফ এডিবিসহ অন্য অর্থায়নকারী সংস্থা ও দেশের ক্ষেত্রেও । এতে সার্বিকভাবে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অবমুক্তি দুটোই কমতে পারে। পদ্মাসেতুর জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের কাজটি যে কিছুটা চ্যালেঞ্জের হবে, সেটি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়। সভরেন বন্ড ইস্যু করে এ জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হলে এর সুদ ও আসল পরিশোধের জন্য এক দিকে সময় পাওয়া যাবে কম, অন্য দিকে এর সুদের খরচ রেয়াতি ঋণের কম করে হলেও আট থেকে ১০ গুণ হবে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ শেয়ারবাজার থেকে এ জন্য অর্থ সংগ্রহ করা গেলেও সুদ দিতে হবে অনেক বেশি। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নোত্তর যে দায় বাজেটে চাপবে তা থেকে রেহাই পেতে সেতু পারাপারের যানবাহনে অতিরিক্ত টোল বসাতে হবে। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে সাশ্রয় করে এই সেতু নির্মাণের যে কথা অর্থমন্ত্রী বলছেন, তাতে অন্য উন্নয়ন কর্মকাে স্থবিরতা নেমে আসবে। এটি কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টি হলোÑ পদ্মা সেতুর দুর্র্নীতি নিয়ে যে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব যদি বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বাজারে পড়ে, তা হবে মারাত্মক। এমন কিছু লক্ষণ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা পোশাকের ওপর অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক রেয়াত বা জিএসপি সুবিধা দেয়া তো দূরে থাক এখন অন্য যেসব খাতে এই সুবিধা দিচ্ছে, সেটি প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পদ্মাসেতু দুর্নীতি নিয়ে যে দেশটিতে একটি মামলা শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে, সেই কানাডায়ও বাংলাদেশসহ বেশ ক’টি দেশের পোশাকের ওপর জিএসপি সুবিধা তুলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর হাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে গিয়ে লাগলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প নির্মাণের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাব। তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সাহস দেখাতে গিয়ে যদি হঠকারী কোনো পদক্ষেপ নিয়ে বসি, তার ক্ষতির বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে ঝগড়া না করে আস্থার সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে যে ভাষায় বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করেছেন, তাতে এই সংস্থার সাথে দীর্ঘস্থায়ী তিক্ততা সৃষ্টির আলামত দেখা যাচ্ছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ও অন্য সহ-অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরে যাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট একটি প্রস্তাব দিলেন সংসদে। এই সেতু নির্মাণে যেসব বিকল্পের কথা বলা হচ্ছিল, তার মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে স্থগিত হওয়ার পর থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন-উদ্যোগ অধিকতর বাস্তবসম্মত। যদিও এক বছর তিন মাস বিশ্বব্যাংকের সাথে সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনের কারণে ২৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প-ব্যয় এখন ২৭ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে কাজ শেষ করতে আরো সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকছি লাগবে। বর্তমান সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলে প্রকল্পের কিছুটা অগ্রগতি হয়তো সম্ভব। অর্থমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সক্ষমতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য গত কয়েক বছরে বাজেট ও রাজস্ব আয়ের আকার কত বেড়েছে সেটি তুলে ধরেছেন। কিন্তু পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ততার জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে আসার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই বিড়ম্বনা ও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর জন্য অন্য সব ক্ষেত্রে অর্থায়ন বন্ধ হয়তো করবে না। কিন্তু প্রতিটি প্রকল্পে দুর্নীতি নিরোধক বিশেষ ব্যবস্থা নিতে গিয়ে প্রকল্প নেগোসিয়েশন ও অর্থছাড়করণ দুটোতেই বিলম্ব হবে। একই অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে আইএমএফ এডিবিসহ অন্য অর্থায়নকারী সংস্থা ও দেশের ক্ষেত্রেও । এতে সার্বিকভাবে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অবমুক্তি দুটোই কমতে পারে। পদ্মাসেতুর জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের কাজটি যে কিছুটা চ্যালেঞ্জের হবে, সেটি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়। সভরেন বন্ড ইস্যু করে এ জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হলে এর সুদ ও আসল পরিশোধের জন্য এক দিকে সময় পাওয়া যাবে কম, অন্য দিকে এর সুদের খরচ রেয়াতি ঋণের কম করে হলেও আট থেকে ১০ গুণ হবে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ শেয়ারবাজার থেকে এ জন্য অর্থ সংগ্রহ করা গেলেও সুদ দিতে হবে অনেক বেশি। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নোত্তর যে দায় বাজেটে চাপবে তা থেকে রেহাই পেতে সেতু পারাপারের যানবাহনে অতিরিক্ত টোল বসাতে হবে। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে সাশ্রয় করে এই সেতু নির্মাণের যে কথা অর্থমন্ত্রী বলছেন, তাতে অন্য উন্নয়ন কর্মকাে স্থবিরতা নেমে আসবে। এটি কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টি হলোÑ পদ্মা সেতুর দুর্র্নীতি নিয়ে যে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব যদি বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বাজারে পড়ে, তা হবে মারাত্মক। এমন কিছু লক্ষণ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা পোশাকের ওপর অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক রেয়াত বা জিএসপি সুবিধা দেয়া তো দূরে থাক এখন অন্য যেসব খাতে এই সুবিধা দিচ্ছে, সেটি প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পদ্মাসেতু দুর্নীতি নিয়ে যে দেশটিতে একটি মামলা শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে, সেই কানাডায়ও বাংলাদেশসহ বেশ ক’টি দেশের পোশাকের ওপর জিএসপি সুবিধা তুলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর হাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে গিয়ে লাগলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প নির্মাণের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাব। তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সাহস দেখাতে গিয়ে যদি হঠকারী কোনো পদক্ষেপ নিয়ে বসি, তার ক্ষতির বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে ঝগড়া না করে আস্থার সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে যে ভাষায় বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করেছেন, তাতে এই সংস্থার সাথে দীর্ঘস্থায়ী তিক্ততা সৃষ্টির আলামত দেখা যাচ্ছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
No comments