একদিকে 'বিজয় চিহ্ন' অন্যদিকে হরতালের ডাক

মানবতাবিরোধী অপরাধে যাবজ্জীবন সাজার রায় শোনার পর আবদুল কাদের মোল্লা হাতের দুই আঙুল তুলে বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন দেখান, যেন তিনি এই শাস্তি পেয়ে সন্তুষ্ট। তাঁকে আরো বড় শাস্তি না দিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়ায় তিনি বিজয়ী হয়েছেন।
তবে কাদের মোল্লার এই বিজয়ী মনোভাব সত্ত্বেও তাঁর দল জামায়াতে ইসলামী আজ আবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান কাদের মোল্লার সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে গতকাল হরতাল চলাকালে দুপুরে আজকের হরতালের ঢাক দেন। 'কাদের মোল্লার রায় দেওয়া হবে মঙ্গলবার' এ ঘোষণা শুনে জামায়াত সারা দেশে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। ট্রাইব্যুনালের রায় কাদের মোল্লার বিপক্ষে গেলে পরের দিন বুধবার (আজ) থেকে লাগাতার হরতাল চলবে বলেও তারা ঘোষণা দেয়। গতকাল রায়ের পর জামায়াত লাগাতার হরতাল থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় মনে করা হচ্ছে, তারা যা আশঙ্কা করছিল, কাদের মোল্লার সাজা সে তুলনায় কম হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গতকাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার পর দুপুরে এক বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'এ রায় প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি সরকারের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বিচারের নামে অবিচারের প্রতিবাদে আমাদের ঘোষিত গণতান্ত্রিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল (আজ বুধবার) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালিত হবে।'
রফিকুল ইসলাম বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের নামে আজ ট্রাইব্যুনালে আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সরকার নির্দেশিত। সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা দীর্ঘদিন বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যেসব বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছেন, এ রায়ে তার প্রতিফলন ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বিচারের নামে আবদুল কাদের মোল্লাকে শাস্তি দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, আজকের রায়ে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হলো মাত্র।
রফিকুল ইসলাম খান আগের দিন সোমবার বলেছিলেন, 'বিতর্কিত রাজনৈতিক ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ে যদি সরকারের নীলনকশার শাস্তি বিধানের কোনো প্রতিফলন ঘটে, তা হলে আগামীকালের হরতাল বর্ধিত হয়ে পরের দিন ৬ ফ্রেব্রুয়ারি বুধবার থেকে লাগাতার অব্যাহত থাকবে।'
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল গতকাল আরো বলেন, বিশ্বের বিবেকবান মানুষ, মানবাধিকার সংস্থা, দেশি-বিদেশি আইনবিদ এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই বিচার, ট্রাইব্যুনাল ও বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে বরাবরই আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সরকার সেসব মতামত উপেক্ষা করে তাদের নির্দিষ্ট ছকেই বিচারকার্য পরিচালনা করে আসছে। এই বিচার যে কত ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ, তা স্কাইপ সংলাপের মাধ্যমে গোটা দুনিয়ার মানুষ জানতে পেরেছে। স্কাইপ সংলাপে কোন মামলার রায় আগে, কোনটির পরে, কোন সাক্ষী কি সাক্ষ্য দেবেন- এসব বিষয়ে সলাপরামর্শ করে মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আবদুল কাদের মোল্লার রায়ে। মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয় ১৭ জানুয়ারি। মাত্র ১৮ দিনের মাথায় রায় ঘোষণা একটি ষড়যন্ত্রের জ্বলন্ত প্রমাণ।
হরতালের আওতামুক্ত : সংবাদপত্রের গাড়ি, সাংবাদিক, অ্যাম্বুল্যান্স, জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.