বাংলাদেশে সেকুলার রাজনীতি ও অর্থনীতি- রাস্তা থেকে বলছি by এরশাদ মজুমদার

সেকুলারিজম ও ফান্ডামেন্টালিজম শব্দ দু’টির জন্ম হয়েছে ব্রিটেনে। সে দেশ থেকে শব্দ দু’টিকে চালান দেয়া হয়েছে পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে।
ক্রিশ্চিয়ানিটির প্রধান দু’টি শাখার জন্ম হয়েছে ব্রিটেনে। ব্রিটেনের রাজার নেতৃত্বেই জন্ম নিয়েছে প্রটেস্ট্যান্ট শাখা। এই শাখার হেডকোয়ার্টার এখনো ব্রিটেনেই। ব্রিটেনের রাজপরিবারই এই শাখার প্রধান যাজক। এর মানে রাজা বা রাজার প্রতিনিধি গীর্জা বা ধর্মপ্রধান থাকবেন। ক্যাথলিক শাখাকে ফান্ডামেন্টালিস্ট বলে গালাগাল দিয়ে ব্রিটেন থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ইতালির ভ্যাটিকানে গিয়ে আশ্রয় পেয়েছে ক্যাথলিক শাখা। ইউরোপ-আমেরিকার সীমানা ছাড়িয়ে শব্দ দুটো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শব্দ দুটো এখন আমাদের দেশে নিত্যদিনের। মিডিয়ায় শব্দ দুটো খুব সম্মানের সাথে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশে তথাকথিত শিতি মার্জিত একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী নিজেদের ‘সেকুলার’ বলে আনন্দ পান। স্কুল-কলেজের ছাত্ররা নিজেদের প্রগতিশীল সেকুলার বলে জাহির করে খুশি হয় এবং মনে করে তারা সবাই মহাজ্ঞানী। এসব ছাত্রের বেশ কিছু শিক আছেন যারা নিজেদের সেকুলার, প্রগতিশীল, মানবতাবাদী বলে দাবি করেন। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সেকুলারিজম বা এর বাংলা অনুবাদের ‘ধর্মনিরপেতা’ কী, তা জানে না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ একেবারেই মাথা ঘামান না। সেকুলারিস্ট বা ধর্মনিরপেতাবাদীরা একধরনের পরগাছা। নিজেরা একা বাঁচতে পারেন না। অন্যের কাঁধে ভর করে তাদের চলতে হয়। তথাকথিত ধর্মনিরপেতাবাদীরা এবং তাদের সাগরেদরা জানে না তারা কী চান। পৃথিবীতে ‘ধর্মনিরপেতা’ বলে কিছুই নেই। এই তো ক’দিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শপথ নিলেন বাইবেল স্পর্শ করে। বারাক ওবামাই প্রথম কালো মানুষ যিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তিনি মুসলমান কি না, তা নিয়ে অনেক হইচই হয়েছে। আমেরিকায় বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষ বাস করেন। সবাই মিলে আমেরিকাকে গড়ে তুলেছেন। ধর্মগতভাবে খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসীরাই মেজরিটি বা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে আমেরিকার উচ্চ সমাজে ইহুদিদের প্রভাব বেশি। ফলে আমেরিকার রাজনীতি, সমাজনীতি,অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে খ্র্রিষ্ট ও ইহুদি ধর্মের আধিপত্যও বেশি। আমেরিকায় একজন মুসলমান, হিন্দু বা বৌদ্ধের মতায় আরোহণ করা খুবই কঠিন।

পশ্চিমা দেশগুলোতে বা তাদের প্রভাববলয়ে বেঁচে থাকা দেশগুলোতে তথাকথিত ধর্মনিরপেতা প্রচারের জন্য একধরনের এজেন্সি কাজ করে। এই এজেন্সিগুলো নানা আবরণে বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবীদের ওপর ভর করে তাদের স্বার্থ আদায়ের জন্য। স্বার্থগত কারণেই তারা অনেক সময় ধর্মবিরোধী কাজও করে। পশ্চিমের বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের ুদ্র স্বার্থের প্রয়োজনে ঈসা নবীর (আ:) বিরুদ্ধে কলম ধারণ করেন ও সিনেমা বানান। এসব দেখে আমাদের দেশেও একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী উৎসাহিত হয়ে পড়েন। ভারত একটি মহাহিন্দুবাদী জঙ্গি দেশ ও রাষ্ট্র। কিন্তু বাইরের খোলস হলো ‘ধর্মনিরপেতা’। ভারতে সারা বছর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। মুসলমানদের তো তারা হত্যা করেই। নিজ ধর্মের হরিজনদেরও তারা পুড়িয়ে মারে। ভারতে ব্রাহ্মণ ও তাদের সহযোগী ছাড়া অন্যদের রাজনীতি করা খুবই কঠিন। ধর্মীয় ভাবেই ভারত একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র ও সমাজ। ভারতের ৬০ কোটি মানুষ অবহেলিত ও নির্যাতিত। এরা হলেন মুসলমান ও হরিজন। এদের অধিকার নেই বললেই চলে। মুসলমানেরা ভারতে রাষ্ট্রের অন্যায় আচরণের শিকার। হরিজনেরা ধর্মের শিকার।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভারতের চেয়ে হাজার গুণ ভালো। আমাদের ভাগ্য ভালোÑ এ দেশে হরিজন নেই, বর্ণবাদও নেই। কারণ বাংলাদেশের সমাজ বর্ণবাদী নয়। ধর্মই এ দেশের মানুষকে অসাম্প্রদায়িক হতে সাহায্য করেছে। ইসলামে বর্ণবাদ নেই, সাম্প্রদায়িকতা নেই। কালামে পাকে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সব মানুষ আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান। দৃশ্যমান যে ভেদাভেদ আমরা দেখি, তা সমাজের সৃষ্টি। ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ, আরব-আজম, এসব সমাজের সৃষ্টি। সংক্রামক রোগের মতো মুসলমানেরা অমুসলমান সমাজ থেকে বিদ্যমান ভেদাভেদ আমদানি করেছে। আল্লাহ পাকের দৃষ্টিতে যার তাকওয়া বেশি সেই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও ইজ্জতদার।

আমাদের দেশে সেকুলারিজম একধরনের ফ্যাশন। আরেকদল শিতি মানুষ আছেন যারা নিজেদের ‘মানবতাবাদী’ বলে দাবি করেন ও পরিচয় দেন। আমরা তাদের ভালো মানুষ হিসেবে চিনি। কিন্তু এ ধরনের ভালো মানুষেরা সবাই নিজেদের ধর্মনিরপে বলে দাবি করেন। এদের অনেকেই আবার মোনাফেক। ধর্মে বিশ্বাস করেন না বা ধর্মহীনদের সাথে জোট বেঁধে চলেন। যেমন ধরুন, আমাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। জেনারেল এরশাদ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াবার জন্য ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন। তিনি তখন স্বপ্ন দেখে মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যেতেন। এটা হচ্ছে ধর্মকে রাজনীতিতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। এর পরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে জনতার ভয়ে বাধ্য হয়ে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রূপে মেনে নিতে হয়েছে। বিএনপি ঘোষণা দিয়ে বলেছে, তারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। তাই তারা ইসলামি দলগুলোর সাথে জোট বেঁধে চলে। আওয়ামী লীগ যদিও জোর গলায় নিজেদের ধর্মনিরপে বা সেকুলার বলে বেড়ায়, তারাও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে মেনে নিয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের মুখোশ পরা রাজনীতি। মানে, বিশ্বাস করি না; কিন্তু ভোটের জন্য মেনে নিলাম। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায় অনেক বামপন্থী, সেকুলার, ধর্মনিরপে বা ধর্মহীন রাজনীতিক আছেন। ইতোমধ্যে জনগণের মাঝে দৃঢ় ধারণা জন্মেছে যে, আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী একটি রাজনৈতিক দল। বর্তমান আমলে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ দেশের মেজরিটি মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমেরিকা যেহেতু মুসলমানদের সন্ত্রাসবাদী মনে করে, সেহেতু আওয়ামী লীগও মুসলমানদের মনে করে সন্ত্রাসবাদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান বানাবার জন্য তার সহযোগীরা প্রায়ই বলে থাকেনÑ আমাদের নেত্রী নিয়মিত কুরআন ও নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, হজ ও ওমরা পালন করেন। তারা এ কথা বারবার বলে চলেছেন কেন? কারণ, তারা নিজেরাও মনে করেন, জনসাধারণের ধারণা যে, আওয়ামী নেত্রী ধার্মিক নন; তিনি ধর্মনিরপে বা সেকুলার ( মানে যারা শুধু দুনিয়া নিয়ে থাকেন, আখেরাতে বা শেষ বিচারে বিশ্বাস করেন না, পবিত্রতায় বিশ্বাসী নন, ধর্মীয় শিার বিরোধী, ধর্মীয় সত্যে আস্থ্হাীন)। এবার আপনারাই বলুন, আমাদের দেশে ধর্মনিরপে জ্ঞানী-গুনিজন ধর্মনিরপেতা বলতে কী বোঝাতে চান। এই সেকুলার বা ধর্মনিরপেতাবাদীরা রাষ্ট্র, আইন- আদালত, শিাব্যবস্থাকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যেতে চান। বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ মন্ত্রীই ধর্মনিরপেতায় বিশ্বাস করেন। তারা রাষ্ট্রকে ধর্মহীন বা ধর্মনিরপে রাখতে চান। যে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান বা ইসলামে বিশ্বাসি, তাদের রাষ্ট্র বা দেশ কিভাবে ধর্মনিরপে থাকবে? কারণ, এর মানে দেশটা পরিচালিত হবে ধর্মহীন লোকদের দ্বারা। অপর দিকে ধর্মহীন লোকেরাই সংবিধানে রাষ্টধর্ম ইসলাম বহাল রেখেছেন শুধু দেশের ৯০ ভাগ সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। এই তথাকথিত সেকুলার লোকেরাই বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবর বলতে নারাজ। তারা বাংলায় অনুবাদ করে বিসমিল্লাহর স্থলে বলেন, পরম করুণাময়ের নামে শুরু করছি, আল্লাহু আকবরের স্থলে বলেন, আল্লাহ সর্বশক্তিমান। সেকুলার আর বাংলা ব্যবহারকারীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আমলেই মশকরা বা কৌতুক হয়েছিল। স্পিকার আবদুল মালেক উকিল সাহেবের নাম করা হয়েছিল ‘ভগবান দাস’ উকিল। এই সেকুলার বা প্রগতিশীলেরা সব সময় সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশকে বিভ্রান্ত করেছেন তাদের আচরণে। তারা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা থেকে পাস করা মেধাবী ছাত্রদের ভর্তি করতে চান না। কী কারণÑ তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপ ব্যাখ্যা করেননি। আদালতের রায়ের পরও কতৃপ মাদরাসা ছাত্রদের ভর্তি করা হচ্ছে না। পাঠকসমাজ নিশ্চয়ই জানেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কী পরিস্থিতিতে কারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যারা বিরোধিতা করেছিলেন তাদের আদর্শের সাথে হাত মিলিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপ। পাঠকসমাজকে অবশ্যই বুঝতে হবে বর্তমানে ধর্মনিরপেতাবাদী কারা এবং তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য কী? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেতা হচ্ছে মেজরিটি মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ বা এর নেত্রী কখনোই ধর্মহীন নন। দলটির কাধে ভর করেছেন ধর্মহীন একশ্রেণীর লোক যাদের কোনো ভোট বা সমর্থন নেই। এরা ভোটে দাঁড়ালে ৫০০ ভোটও পান না। এবার নৌকায় ভর করে তারা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। এখন তারাই খুব বড়গলায় নানা বিষয়ে গলাবাজি করে যাচ্ছেন। এসব সেকুলারিস্টদের ঠিকানা পশ্চিমা এনজিও আর দিল্লি। এমনকি এদের মাঝে মাঝে শেল্টার দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। ভারতের ল্যÑ এখানে ইসলামি বা মুসলমানদের চিন্তাধারা যেন বিকশিত না হয়। সোজা কথায় ধর্ম মসজিদ আর বাসগৃহে থাকবে। রাষ্ট্র চলবে ধর্মহীনদের দ্বারা। ধর্মহীনদের কোনো দল নেই, থাকলেও তাদের কোনো দল বা ভোট নেই। এরা আসলে মোনাফেক। এদের বিভিন্ন সময়ে আপনারা মুনাজাতরত অবস্থায় দেখবেন। কখনো কখনো মসজিদেও দেখবেন। সব কিছুই হচ্ছে লোকদেখানো। এরাই ছবির সামনে দাড়িয়ে মুনাজাত করেন, আবার মন্দিরে গিয়ে মুর্তির সামনে প্রার্থনা করেন। এরাই ধর্মহীন বিয়েব্যবস্থা সমর্থন করেন। হিন্দুদের জন্য এ ব্যবস্থা খুবই ভালো। কারণ তাদের ধর্মের বর্ণবাদ ব্যবস্থায় সহজে বিয়ে হতে চায় না। এ ধরনের বিয়েতে ধর্মের কথা উল্লেখ করতে হয় না। একেবারে খাঁটি বিয়ের ব্যবস্থা। হিন্দু ধর্মে কনভার্সন বা ধর্মান্তর বাংলাদেশে কোর্ট ম্যারেজে একই ধর্মাবলম্বী হতে হয়। ধর্মহীন বিয়ের ব্যবস্থা তথাকথিত সেকুলারদের একটি বড় খবর। রাষ্ট্রই কারো উসকানিতে এ ব্যবস্থা চালু করেছে। শুনেছি, ইতোমধ্যেই নাকি চার পাঁচটা ধর্মহীন বিয়ে সম্পাদিত হয়েছে। এই বিয়েব্যবস্থার কাজী বা রেজিসস্ট্রার হচ্ছেন শ্রীযুক্ত প্রাণেশ সমাদ্দার।

এবার সেকুলার অর্থনীতি নিয়ে দুই-চারটা কথা বলতে চাই। বাংলাদেশে ইসলামি বা মৌলবাদী অর্থনীতির গুরু হচ্ছেন শ্রীযুক্ত আবুল বারাকাত। তিনি রাশিয়া থেকে অর্থনীতিতে পাণ্ডিত্য অর্জন করে এসেছেন। তার জ্ঞানের বহর হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি, যা এখন বিশ্বের কোথাও নেই। তিনি এখন ধনবাদী ও সুদবাদী একটি সরকারি ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান। এ পদে তার নিয়োগ পাওয়ার প্রধানতম উপাদান হলো সেকুলার হওয়া এবং ইসলামি অর্থনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা। এ নিয়ে তিনি কয়েক হাজার পাতার গবেষণা করেছেন। দেশে এখন বেশ কয়েকটি ইসলামি ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের ডিপোজিট তথাকথিত সেকুলার সরকারি ব্যাংকের চেয়েও বেশি। পণ্ডিত আবুল বারাকাত সব  ধরনের ইসলামি ব্যবস্থাকেই জামাতি ব্যবস্থা মনে করেন। আর তাকে সমর্থন করেন বিদেশী ব্যাংক ও এনজিওগুলো। ইসলামবিরোধী প্রচারণা চালাবার জন্য এনজিওগুলো বিদেশ থেকে বহু টাকা-পয়সা নিয়ে আসে। এসব টাকা ইহুদিবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা থেকে বাংলাদেশে আসে। সেসব টাকা লগ্নি করে তথাকথিত গরিবদরদী স্যার উপাধির লোকজন। বাংলাদেশে ইহুদি পুঁজির সাথে জড়িত কিছু বিদেশী ব্যাংকও ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করেছে শুধু নিরীহ সরল মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। বর্তমানে বাংলাদেশে সেকুলারিজমের রমরমা অবস্থা। ভালো ধর্মহীন বা সেকুলার হতে পারলে চাকরি, মন্ত্রিত্ব, এমপিগিরি, আমলাগিরি ও উপদেষ্টাগিরি সহজেই পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা সবাই খাঁটি সেকুলার। এরা পশ্চিমাদের বরপুত্র। রিজভী নামে এক অজানা-অচেনা বিদেশী ভদ্রলোক তো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়ে গেছেন। তিনি দিল্লিতে আট বছর কাজ করেছেন ফোর্ড ফাউন্ডেশনের কর্তা হিসেবে। বাংলাদেশে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সব সম্পদ দেখাশোনা করার দায়িত্ব পেয়েছে ফ্রিডম ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান, যার কর্ণধার হলেন একজন সম্পাদকের স্ত্রী। বেশ কয়েক বছর আগে ফ্রিডম ফাউন্ডেশন থেকে বাঙ্গালি টাইটেল নিয়ে একটি ম্যাগাজিন বেরিয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল দুর্গাপূজা বাঙ্গালিদের একটি কালচারাল অ্যাক্টিভিটি। একইভাবে বৃটিশ হাইকমিশনের উদ্যোগে ও অর্থায়নে বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোর জরিপ চালিয়েছিলেন একজন শিাবিদ।

এই জরিপের ফলাফল ছিল মাদরাসাগুলোতে জঙ্গিবাদী তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের মাদরাসা শিাব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের জন্য আমেরিকা নানা ধরনের উপদেশ ও সুপারিশ খয়রাত করেছিল। এমনকি বিপুল অর্থ সরবরাহের ওয়াদা দিয়েছিল। সোজা কথায় মাদরাসা শিাব্যবস্থাকে সেকুলার করতে হবে। এই কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসার ছাত্রদের ভর্তি হতে দেয়া হচ্ছে না। সেনা বাহিনীতে কত মাদরাসার ছাত্র চাকরি পেয়েছে তার ওপরও জরিপ চালানো হয়েছে। এর মানে সেনা বাহিনীকেও সেকুলার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

লেখক : কবি ও কলামিস্ট

ershadmz40@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.