তদন্ত কমিটি সদস্যরা হাত মিলিয়েছে অপরাধীদের সঙ্গে- জাবির সেই দুর্নীতি by মামুন-অর-রশিদ
বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি তদন্তে বর্তমান সরকারের গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে
বিশেষ মহলের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।
কমিটির
রিপোর্টে আংশিক সত্য তথ্য উপস্থাপনা করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে চিহ্নিত
অপরাধীদের বেলায় কিছুই বলা হয়নি। উপরন্তু, অপরাধীদের রক্ষা করা এবং
ক্ষেত্রবিশেষ পুরস্কৃত করা হয়েছে। এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ
বঞ্চিত-উপেক্ষিত ও নির্যাতিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি
হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভিযোগে জোট আমলে যাঁরা চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা
পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন, বর্তমান প্রশাসন এখনও বঞ্চিতদের ব্যাপারে নীরব
রয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বর্তমান প্রশাসন জোট আমলে অনিয়মের মাধ্যমে
নিয়োগপ্রাপ্তদের ব্যাপারে ক্ষেত্রবিশেষ উদার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিহ্নিত
বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের এখনও একক আধিপত্য চলছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ড. আফতাব আহমাদ উপাচার্য থাকাকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জনবল নিয়োগে করা হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। এই সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২২২ শিক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। যার মধ্যে ২৩০ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ভুয়া ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে জোট আমলে অযৌক্তিকভাবে পদ সৃষ্টি করে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ, কারিগরি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেয়া, ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীবিহীন বিশ্বাবিদ্যালয়ে পদ সৃষ্টি করে সহকারী প্রক্টর নিয়োগসহ সীমাহীন অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে এসেছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। অপ্রয়োজনীয় এই জনবল নিয়োগের ফলে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ৰতির সম্মুখীন হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
ভুয়া বিজ্ঞাপনে অবৈধভাবে জনবল নিয়োগসহ নানা অনিয়ম তদনন্তের জন্য গঠিত কমিটির রিপোর্ট ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির জিল্লুর রহমানের কাছে। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের কাছেও কমিটির সদস্যরা ৬৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর আগে গত বছরের ১৮ এপ্রিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম সিন্ডিকেটের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আবু সাঈদ খানকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, ট্রেজারার অধ্য কাজী ফারুক আহমেদ, স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন ড. এস. এম. আবু রায়হান এবং ইডেন মহিলা কলেজের অধ্য অধ্যাপক মাহফুজা চৌধুরী।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণী নোটিস দিয়েছিলেন। এর পরই গঠন করা হয় এই তদন্ত কমিটি। জানা গেছে, তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রায় ৫০টি সভায় মিলিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নথি, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনা করেছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত লিখিত তথ্য, সাক্ষাতকার ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দু'টি তদন্ত রিপোর্টও পর্যালোচনা করে। কমিটির তদন্তে চারদলীয় জোট আমলে বিভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্র নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় ১৫.৯.২০০৪ তারিখ এবং আজকালের খবর পত্রিকায় ১১.৯.২০০৪ তারিখে দেয়া বিজ্ঞাপন ভুয়া ছিল। যা সর্বসাধারণের জন্য ছিল না। ঘুপচি বিজ্ঞাপনের রেফারেন্স অনুযায়ী মোট ২৩০ জন নিয়োগ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে সত্যকে আড়াল করে আদালতে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের বিররুদ্ধে অবৈধ কার্যকলাপের দায়ে মামলার আদেশ দেয়। অবৈধ কার্যকলাপের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনকে আদালত ভৎর্সনা করে। উল্লেখ্য ড. আফতাব আহমাদের আমলে প্রথমে এডহক ভিত্তিতে ৫৭৩ জনসহ মোট ১ হাজার ২২২ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি যোগদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট জনবল ছিল ৬২৮ জন। আর অধিক্তুক্ত কলেজের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৬টি। তিনি যখন বিদায় নেন তখন জনবল ছিল ১ হাজার ৮২১ জন আর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৫৬৮টি। জনবল নিয়োগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না বলে উল্লখ করা হয়েছে রিপোর্টে। এদিকে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সরকারের কাছে চলে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে নোয়াখালীসহ বিশেষ অঞ্চলকে সুবিধা দিতে অনেক অপরাধীকে রক্ষা করে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০০৬ সালে ইউজিসির তদন্ত রিপোর্টে ভুয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগের সংখ্যা ৭৬৫ জন বলা হলেও এবারের রিপোর্টে ২৩০ জন কেন বলা হলো সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনেকে। জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৯ আগস্ট মঞ্জুরি কমিশন নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের জন্য উচ্চ ক্ষমা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ৩ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত অধ্যাপক ড. এম আসাদুজ্জামান। মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত রিপোর্টে অধ্যাপক আফতাব আহমাদের সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১১৮৯ জন নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৭২ শিক, ৩০৪ কর্মকর্তা ও ৮১৩ কর্মচারী। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় ৭৬৫ জনকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেছেন, কমিটি পরিকল্পিতভাবে জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ সংক্রান্ত অবৈধ কাগজপত্র তৈরি মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি মোঃ শহীদুর রহমানকে বাদ দিয়েছেন এবং জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগকৃত জনবলের সংখ্যা কম দেখিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ঘটা করে সরকারের কাছে দেয়া এই রিপোর্ট বিতর্কিত ও অসম্পূর্ণ। এমন একটি রিপোর্ট জাতীয় সংসদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির নিকট জমা দিয়ে কমিটির অকল্পনীয় অপরাধ করেছে বলেও অভিযোগ এনেছেন কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ।
বর্তমান তদন্ত কমিটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট যাতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে না যায়, সেজন্য তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য বিতর্কিত ধরনের লোক খুঁজে বের করা হয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে দেয়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষে পরিকল্পিতভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এ বিতর্কিত রিপোর্ট দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তৎকালে বহুল আলোচিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ নিয়োগ দুর্নীতি তদনন্তের জন্য একটি উচ্চ মতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত রিপোর্টে জানা যায় প্রফেসর আফতাব আহমাদের সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১১৮৯ জন লোক নিয়োগ দেয়া হয়, এর মধ্যে ৭২ জন শিক্ষক, ৩০৪ জন কর্মকর্তা ও ৮১৩ জন কর্মচারী। গত ১৫.০৯.২০০৪ তারিখের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট ও ১১.০৯.২০০৪ তারিখের দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় মোট ৭৬৫ জন। মঞ্জুরি কমিশনের ঐ তদনত্ম রিপোর্টে আরও জানা যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৬৩তম থেকে ৮১তম সভায় মোট ১১৭১টি পদ সৃষ্টি করে। সৃষ্ট এ পদের মধ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সর্বমোট ৫৮৮টি পদের নিয়োগ অনুমোদন করেছে এর মধ্যে শিক ১৪১ জন, কর্মকর্তা ১৫৮ জন ও কর্মচারী ২৮৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তূপক্ষ বিভিন্ন তারিখে দৈনিক পত্রিকায় প্রকৃতপক্ষে ১৭৬ জন শিক্ষক এবং ১২ জন কর্মকর্তা অর্থাৎ মোট (১৭৬+১২) ১৮৮ জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় জনবল নিয়োগের নিয়ম হলো শূন্য পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ করা এবং অবশ্যই দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া। বিজ্ঞাপনে পদের নাম, পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা, বয়স এবং পদের সংখ্যা ইত্যাদি অবশ্যই উল্লেখ থাকবে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি পাওয়া গেছে তাতে প্রার্থীদের বয়স, পদের সংখ্যা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, জেলা কোটা কোন কিছুরই উল্লেখ নেই। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপ নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইচ্ছামাফিক অপ্রয়োজনীয় শত শত জনবল নিয়োগ দিয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে গঠিত কমিটির রিপোর্টে এ সবের কোন উল্লেখ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শমশের-উজ-জামান ও মোঃ শহীদুর রহমান উপ-রেজিস্ট্রার (পরিষদ) যথাক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নির্বাচনী বোর্ড ও ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নির্বাচনী বোর্ডের সচিবের দায়িত্ব পালন করার বিধান রয়েছে। কিন্তু দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট ও দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি যেহেতু তাদের দ্বারাই সৃজনকৃত সেহেতু শমশের-উজ-জামান উক্ত ভুয়া নির্বাচনী বোর্ডের কাগজপত্রে তার নাম সচিব হিসেবে না লিখে সদস্য হিসেবে লিখে রাখেন এবং মোঃ শহীদুর রহমান সচিব হিসেবে নির্বাচনী বোর্ডের কাজ করলেও তার নাম উক্ত অবৈধ নির্বাচনী বোর্ডের কাগজপত্রে লেখেনি। এ ছাড়াও শমশের-উজ-জামান ও মোঃ শহীদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ ও ৭১তম সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচী ও সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণী জাল করে চাকরিপ্রাপ্তদের নামের তালিকা পরবর্তীতে অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে বলে জানা যায়। শমশের-উজ-জামান ও মোঃ শহীদুর রহমান চাকরিপ্রাপ্তদের নিয়োগপত্র তৈরি করে স্বার, বিতরণ ও যোগদানপত্র গ্রহণ করে নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু তদন্ত রিপোর্টে উল্লিখিত ঐ মতাধর প্রো ভাইস চ্যান্সেলরের জোর চাপাচাপির কারণে জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ সংক্রান্ত অবৈধ কাগজপত্র তৈরি মামলার অন্যতম প্রধান চার্জশীটভুক্ত আসামি মোঃ শহীদুর রহমানের নাম বাদ দিয়েছে বলে জানা যায়।
শুধু তাই নয় বহুল আলোচিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজ ও চার্জশীটভুক্ত আসামি (১) বর্তমান মানব সম্পদ দফতরের- পরিচালক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার শমশের-উজ-জামান, (২) উপ-রেজিস্ট্রার (পরিষদ) মোঃ শহীদুর রহমান, (৩) জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান হেলালকে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটি দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাদেরকে বেতন-ভাতাদি প্রদানসহ সকল সুযোগ- সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট হতে গণনিয়োগ সম্পর্কে কোন তথ্য চাওয়া হলে- অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বর্তমান প্রশাসনও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানে ইচ্ছাকৃতভাবে মাসের পর মাস বিলম্ব করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রো ভাইস চ্যান্সেলরদ্বয় ঘটা করে এমন একটি বিতর্কিত, অসত্য ও অসম্পূর্ণ তদন্ত রিপোর্ট জাতীয় সংসদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট জমা দিয়ে সরকারকে আক্ষরিক অর্থেই ধোঁকা দিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের এহেন ভূমিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সৎ, নীতি নৈতিকতায় বিশ্বাসী কর্মকর্তারা বলছেন আসলেই এই ঘটনা অকল্পনীয় অপরাধ এবং দুঃখজনক।
বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ড. আফতাব আহমাদ উপাচার্য থাকাকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জনবল নিয়োগে করা হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। এই সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২২২ শিক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। যার মধ্যে ২৩০ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ভুয়া ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে জোট আমলে অযৌক্তিকভাবে পদ সৃষ্টি করে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ, কারিগরি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেয়া, ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীবিহীন বিশ্বাবিদ্যালয়ে পদ সৃষ্টি করে সহকারী প্রক্টর নিয়োগসহ সীমাহীন অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে এসেছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। অপ্রয়োজনীয় এই জনবল নিয়োগের ফলে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ৰতির সম্মুখীন হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
ভুয়া বিজ্ঞাপনে অবৈধভাবে জনবল নিয়োগসহ নানা অনিয়ম তদনন্তের জন্য গঠিত কমিটির রিপোর্ট ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির জিল্লুর রহমানের কাছে। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের কাছেও কমিটির সদস্যরা ৬৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর আগে গত বছরের ১৮ এপ্রিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম সিন্ডিকেটের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আবু সাঈদ খানকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, ট্রেজারার অধ্য কাজী ফারুক আহমেদ, স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন ড. এস. এম. আবু রায়হান এবং ইডেন মহিলা কলেজের অধ্য অধ্যাপক মাহফুজা চৌধুরী।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণী নোটিস দিয়েছিলেন। এর পরই গঠন করা হয় এই তদন্ত কমিটি। জানা গেছে, তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রায় ৫০টি সভায় মিলিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নথি, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনা করেছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত লিখিত তথ্য, সাক্ষাতকার ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দু'টি তদন্ত রিপোর্টও পর্যালোচনা করে। কমিটির তদন্তে চারদলীয় জোট আমলে বিভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্র নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় ১৫.৯.২০০৪ তারিখ এবং আজকালের খবর পত্রিকায় ১১.৯.২০০৪ তারিখে দেয়া বিজ্ঞাপন ভুয়া ছিল। যা সর্বসাধারণের জন্য ছিল না। ঘুপচি বিজ্ঞাপনের রেফারেন্স অনুযায়ী মোট ২৩০ জন নিয়োগ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে সত্যকে আড়াল করে আদালতে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের বিররুদ্ধে অবৈধ কার্যকলাপের দায়ে মামলার আদেশ দেয়। অবৈধ কার্যকলাপের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনকে আদালত ভৎর্সনা করে। উল্লেখ্য ড. আফতাব আহমাদের আমলে প্রথমে এডহক ভিত্তিতে ৫৭৩ জনসহ মোট ১ হাজার ২২২ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি যোগদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট জনবল ছিল ৬২৮ জন। আর অধিক্তুক্ত কলেজের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৬টি। তিনি যখন বিদায় নেন তখন জনবল ছিল ১ হাজার ৮২১ জন আর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৫৬৮টি। জনবল নিয়োগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না বলে উল্লখ করা হয়েছে রিপোর্টে। এদিকে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সরকারের কাছে চলে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে নোয়াখালীসহ বিশেষ অঞ্চলকে সুবিধা দিতে অনেক অপরাধীকে রক্ষা করে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০০৬ সালে ইউজিসির তদন্ত রিপোর্টে ভুয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগের সংখ্যা ৭৬৫ জন বলা হলেও এবারের রিপোর্টে ২৩০ জন কেন বলা হলো সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনেকে। জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৯ আগস্ট মঞ্জুরি কমিশন নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের জন্য উচ্চ ক্ষমা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ৩ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত অধ্যাপক ড. এম আসাদুজ্জামান। মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত রিপোর্টে অধ্যাপক আফতাব আহমাদের সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১১৮৯ জন নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৭২ শিক, ৩০৪ কর্মকর্তা ও ৮১৩ কর্মচারী। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় ৭৬৫ জনকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেছেন, কমিটি পরিকল্পিতভাবে জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ সংক্রান্ত অবৈধ কাগজপত্র তৈরি মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি মোঃ শহীদুর রহমানকে বাদ দিয়েছেন এবং জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগকৃত জনবলের সংখ্যা কম দেখিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ঘটা করে সরকারের কাছে দেয়া এই রিপোর্ট বিতর্কিত ও অসম্পূর্ণ। এমন একটি রিপোর্ট জাতীয় সংসদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির নিকট জমা দিয়ে কমিটির অকল্পনীয় অপরাধ করেছে বলেও অভিযোগ এনেছেন কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ।
বর্তমান তদন্ত কমিটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট যাতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে না যায়, সেজন্য তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য বিতর্কিত ধরনের লোক খুঁজে বের করা হয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে দেয়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষে পরিকল্পিতভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এ বিতর্কিত রিপোর্ট দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তৎকালে বহুল আলোচিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ নিয়োগ দুর্নীতি তদনন্তের জন্য একটি উচ্চ মতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত রিপোর্টে জানা যায় প্রফেসর আফতাব আহমাদের সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১১৮৯ জন লোক নিয়োগ দেয়া হয়, এর মধ্যে ৭২ জন শিক্ষক, ৩০৪ জন কর্মকর্তা ও ৮১৩ জন কর্মচারী। গত ১৫.০৯.২০০৪ তারিখের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট ও ১১.০৯.২০০৪ তারিখের দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় মোট ৭৬৫ জন। মঞ্জুরি কমিশনের ঐ তদনত্ম রিপোর্টে আরও জানা যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৬৩তম থেকে ৮১তম সভায় মোট ১১৭১টি পদ সৃষ্টি করে। সৃষ্ট এ পদের মধ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সর্বমোট ৫৮৮টি পদের নিয়োগ অনুমোদন করেছে এর মধ্যে শিক ১৪১ জন, কর্মকর্তা ১৫৮ জন ও কর্মচারী ২৮৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তূপক্ষ বিভিন্ন তারিখে দৈনিক পত্রিকায় প্রকৃতপক্ষে ১৭৬ জন শিক্ষক এবং ১২ জন কর্মকর্তা অর্থাৎ মোট (১৭৬+১২) ১৮৮ জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় জনবল নিয়োগের নিয়ম হলো শূন্য পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ করা এবং অবশ্যই দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া। বিজ্ঞাপনে পদের নাম, পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা, বয়স এবং পদের সংখ্যা ইত্যাদি অবশ্যই উল্লেখ থাকবে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি পাওয়া গেছে তাতে প্রার্থীদের বয়স, পদের সংখ্যা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, জেলা কোটা কোন কিছুরই উল্লেখ নেই। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপ নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইচ্ছামাফিক অপ্রয়োজনীয় শত শত জনবল নিয়োগ দিয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে গঠিত কমিটির রিপোর্টে এ সবের কোন উল্লেখ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শমশের-উজ-জামান ও মোঃ শহীদুর রহমান উপ-রেজিস্ট্রার (পরিষদ) যথাক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নির্বাচনী বোর্ড ও ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নির্বাচনী বোর্ডের সচিবের দায়িত্ব পালন করার বিধান রয়েছে। কিন্তু দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট ও দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি যেহেতু তাদের দ্বারাই সৃজনকৃত সেহেতু শমশের-উজ-জামান উক্ত ভুয়া নির্বাচনী বোর্ডের কাগজপত্রে তার নাম সচিব হিসেবে না লিখে সদস্য হিসেবে লিখে রাখেন এবং মোঃ শহীদুর রহমান সচিব হিসেবে নির্বাচনী বোর্ডের কাজ করলেও তার নাম উক্ত অবৈধ নির্বাচনী বোর্ডের কাগজপত্রে লেখেনি। এ ছাড়াও শমশের-উজ-জামান ও মোঃ শহীদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ ও ৭১তম সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচী ও সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণী জাল করে চাকরিপ্রাপ্তদের নামের তালিকা পরবর্তীতে অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে বলে জানা যায়। শমশের-উজ-জামান ও মোঃ শহীদুর রহমান চাকরিপ্রাপ্তদের নিয়োগপত্র তৈরি করে স্বার, বিতরণ ও যোগদানপত্র গ্রহণ করে নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু তদন্ত রিপোর্টে উল্লিখিত ঐ মতাধর প্রো ভাইস চ্যান্সেলরের জোর চাপাচাপির কারণে জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ সংক্রান্ত অবৈধ কাগজপত্র তৈরি মামলার অন্যতম প্রধান চার্জশীটভুক্ত আসামি মোঃ শহীদুর রহমানের নাম বাদ দিয়েছে বলে জানা যায়।
শুধু তাই নয় বহুল আলোচিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজ ও চার্জশীটভুক্ত আসামি (১) বর্তমান মানব সম্পদ দফতরের- পরিচালক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার শমশের-উজ-জামান, (২) উপ-রেজিস্ট্রার (পরিষদ) মোঃ শহীদুর রহমান, (৩) জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান হেলালকে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটি দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাদেরকে বেতন-ভাতাদি প্রদানসহ সকল সুযোগ- সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট হতে গণনিয়োগ সম্পর্কে কোন তথ্য চাওয়া হলে- অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বর্তমান প্রশাসনও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানে ইচ্ছাকৃতভাবে মাসের পর মাস বিলম্ব করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রো ভাইস চ্যান্সেলরদ্বয় ঘটা করে এমন একটি বিতর্কিত, অসত্য ও অসম্পূর্ণ তদন্ত রিপোর্ট জাতীয় সংসদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট জমা দিয়ে সরকারকে আক্ষরিক অর্থেই ধোঁকা দিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের এহেন ভূমিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সৎ, নীতি নৈতিকতায় বিশ্বাসী কর্মকর্তারা বলছেন আসলেই এই ঘটনা অকল্পনীয় অপরাধ এবং দুঃখজনক।
No comments