চরাচর-একই দিনে গজারিয়ায় ৩৬০ খুন by মোস্তফা হোসেইন
একাত্তরের মে মাসের ৯ তারিখ, ফজরের আজান
হয়েছে মাত্র। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানাসংলগ্ন পাঁচটি গ্রামের মানুষ জেগে
ওঠে গুলির শব্দে। মুন্সীগঞ্জ থেকে গানবোট ও লঞ্চযোগে পাকিস্তানি বাহিনীর
সদস্যরা এসে আক্রমণ করে গ্রামগুলো।
নয়ানগর, গজারিয়া,
গোসাইরচর, সোনারকান্দি ও নাগেরচরের মানুষ ভাবতেও পারেনি এভাবে তাদের ওপর
হামলে পড়বে পাকিস্তানি বাহিনী। ঘণ্টাকয়েকের মধ্যে ৩৬০ জনকে খুন করে ওরা,
যার মধ্যে শুধু গোসাইরচরেরই শতাধিক মানুষ।
কী অপরাধ ছিল গ্রামের এই মানুষগুলোর? ওই দিন বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসীর কয়েকজন জানান সেই দুর্বিষহ দিনের কথা। শিক্ষাবিদ সাইদ আহমেদের স্মৃতিতে স্পষ্ট হয়ে আছে একাত্তর। আর আবদুল খালেক আলো নামে একজন অনর্গল বলে যান সেদিনের ঘটনা।
এলাকার কয়েক শ শিক্ষার্থী ও তরুণ সেই প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। বাঁশের লাঠি নিয়ে চলে তাদের প্রশিক্ষণ। এটাই হয়ে যায় এ ঘটনার মূল কারণ।
গজারিয়ার শান্তি কমিটির প্রধান ছিল খোকা চৌধুরী, যার দলীয় পরিচয় ছিল মুসলিম লীগ নেতা, তার সহযোগী ছিল গফুর চৌধুরী ও আলফু। খোকা চৌধুরী গ্রামে প্রশিক্ষণ চালাতে বাধা দেয় পরোক্ষভাবে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তাদের কথা শুনতে নারাজ। এক পর্যায়ে হুমকি দেয় শান্তি কমিটির নেতারা। গজারিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি তখন পরিণত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণেচ্ছুদের বাছাই কেন্দ্রে। এখান থেকে স্লিপ ইস্যু করে তরুণদের পাঠানো হতে থাকে ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য।
এটা সহ্য হয়নি খোকা চৌধুরীদের। তারা খবর দেয় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে। আলফু মিয়া পাকিস্তানিদের নিয়ে আসে এলাকায়। ঢোকে মেঘনার শাখা নদী ফুলদী দিয়ে। নামে বালুরচরে। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের অন্যতম পরিচালক মোয়াজ্জম হোসেন, প্রশিক্ষক অলিউল্লাহ ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসক ডাক্তার আবদুল ওহাবকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। প্রত্যেককে চিনিয়ে দেয় আলফু ও তার সহযোগী আরো কয়েকজন বাঙালি। এই সময় চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানিরা পাঁচটি গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঢুকে যেখানে যাকে পেয়েছে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, গজারিয়া থানার শান্তি কমিটির সেই নেতাদের কারো কোনো বিচার হয়নি, যদিও এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধকালে কয়েকজনকে চূড়ান্ত শাস্তি দিয়েছিল। কিন্তু এতগুলো মানুষ যে এলাকায় একই দিনে একই সময় প্রাণ হারাল, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। এই এলাকায় শহীদদের তালিকায় বর্তমান একজন সংসদ সদস্যের ভাই থাকার পরও কোনো উদ্যোগ নেই সামান্য অর্থ ব্যয় করে কোনো সৌধ নির্মাণ কিংবা তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো প্রকাশনার ব্যবস্থা করার। শুধু প্রতিবছর ৯ মে কিছু মানুষ একত্রিত হয় এলাকায়। দোয়া-দরুদ ও স্মৃতিচারণাতেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের উদ্যোগ। শহীদদের নাম সংরক্ষিত আছে এখনো গ্রামে। সেগুলোও একদিন হারিয়ে যাবে। কোনো উদ্যোগই কি নেওয়া যায় না সেই ত্যাগের ইতিহাসকে তুলে ধরার?
মোস্তফা হোসেইন
কী অপরাধ ছিল গ্রামের এই মানুষগুলোর? ওই দিন বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসীর কয়েকজন জানান সেই দুর্বিষহ দিনের কথা। শিক্ষাবিদ সাইদ আহমেদের স্মৃতিতে স্পষ্ট হয়ে আছে একাত্তর। আর আবদুল খালেক আলো নামে একজন অনর্গল বলে যান সেদিনের ঘটনা।
এলাকার কয়েক শ শিক্ষার্থী ও তরুণ সেই প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। বাঁশের লাঠি নিয়ে চলে তাদের প্রশিক্ষণ। এটাই হয়ে যায় এ ঘটনার মূল কারণ।
গজারিয়ার শান্তি কমিটির প্রধান ছিল খোকা চৌধুরী, যার দলীয় পরিচয় ছিল মুসলিম লীগ নেতা, তার সহযোগী ছিল গফুর চৌধুরী ও আলফু। খোকা চৌধুরী গ্রামে প্রশিক্ষণ চালাতে বাধা দেয় পরোক্ষভাবে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তাদের কথা শুনতে নারাজ। এক পর্যায়ে হুমকি দেয় শান্তি কমিটির নেতারা। গজারিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি তখন পরিণত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণেচ্ছুদের বাছাই কেন্দ্রে। এখান থেকে স্লিপ ইস্যু করে তরুণদের পাঠানো হতে থাকে ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য।
এটা সহ্য হয়নি খোকা চৌধুরীদের। তারা খবর দেয় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে। আলফু মিয়া পাকিস্তানিদের নিয়ে আসে এলাকায়। ঢোকে মেঘনার শাখা নদী ফুলদী দিয়ে। নামে বালুরচরে। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের অন্যতম পরিচালক মোয়াজ্জম হোসেন, প্রশিক্ষক অলিউল্লাহ ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসক ডাক্তার আবদুল ওহাবকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। প্রত্যেককে চিনিয়ে দেয় আলফু ও তার সহযোগী আরো কয়েকজন বাঙালি। এই সময় চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানিরা পাঁচটি গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঢুকে যেখানে যাকে পেয়েছে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, গজারিয়া থানার শান্তি কমিটির সেই নেতাদের কারো কোনো বিচার হয়নি, যদিও এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধকালে কয়েকজনকে চূড়ান্ত শাস্তি দিয়েছিল। কিন্তু এতগুলো মানুষ যে এলাকায় একই দিনে একই সময় প্রাণ হারাল, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। এই এলাকায় শহীদদের তালিকায় বর্তমান একজন সংসদ সদস্যের ভাই থাকার পরও কোনো উদ্যোগ নেই সামান্য অর্থ ব্যয় করে কোনো সৌধ নির্মাণ কিংবা তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো প্রকাশনার ব্যবস্থা করার। শুধু প্রতিবছর ৯ মে কিছু মানুষ একত্রিত হয় এলাকায়। দোয়া-দরুদ ও স্মৃতিচারণাতেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের উদ্যোগ। শহীদদের নাম সংরক্ষিত আছে এখনো গ্রামে। সেগুলোও একদিন হারিয়ে যাবে। কোনো উদ্যোগই কি নেওয়া যায় না সেই ত্যাগের ইতিহাসকে তুলে ধরার?
মোস্তফা হোসেইন
No comments