আল্লাহু আকবার বলেই গালি শুরু

রায় ঘোষণার আগে কাদের মোল্লার চেহারা ছিল ফ্যাকাসে। চোখে-মুখে ছিল স্পষ্ট নার্ভাসনেস। বিচারকরা যখন একে একে পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে রায় দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর চোখমুখ ধূসর থেকে ধূসরতর হচ্ছিল। কিন্তু দপুর ১২টায় চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হতেই অন্য রূপ তাঁর।
প্রাণদণ্ড হয়নি জেনেই 'আল্লাহু আকবার' বলে আবদুল কাদের মোল্লা দাঁড়িয়ে যান। শুরু করেন আস্ফালন।
বিচারকরা রায় ঘোষণা করে তখনো এজলাস থেকে নেমে যেতে পারেননি। আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গিয়ে কাদের মোল্লা চিৎকার করে বিচারকদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করেন। তিনি বলেন, 'আমি কিয়ামতের দিন বিচারকদের বিরুদ্ধে মামলা করব। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন কোরআনের আইন অনুযায়ী এই বিচারকদের বিচার হবে। তখন তাঁদের মুখে কথা বলার কোনো শক্তি থাকবে না।' এ সময় তিনি হাসছিলেন।
কাদের মোল্লা বলেন, 'আমি এ রায় মানি না। এ রায় অন্যায়। আমার বিরুদ্ধে যে সময়কার অভিযোগ আনা হয়েছে, সে সময় আমি ঢাকায় ছিলাম না। আমি গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে চলে যাই।' তিনি আরো বলেন, 'বিচারপতিরা জল্লাদের মতো আমার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। আমি বিশ্বমানবতার কাছে বিচার দিলাম।'
কাদের মোল্লার এই আস্ফালন দেখে প্রসিকিউটর আব্দুর রহমান হাওলাদার প্রতিবাদ করেন। তিনি কাদের মোল্লাকে দ্রুত এজলাসকক্ষ থেকে নিয়ে যেতে বলেন। রায়ের পর হাত উঁচিয়ে তিনি বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন দেখান। এরপর পুলিশ তাঁকে ট্রাইব্যুনালের নিচতলার হাজতখানায় নিয়ে রাখে। রায় ঘোষণার আগেও কাদের মোল্লা কথা বলার চেষ্টা করেন। তিনি বিচারকদের অনুমতি চান। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেননি। রায় ঘোষণার সময় কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল এবং মেয়ে আমাতুল্লাহ পারভীন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
আপিল বিভাগে এ রায় বাতিল হয়ে যাবে : ব্যারিস্টার রাজ্জাক
আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনের চেম্বারে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ার পরও ট্রাইব্যুনাল সন্দেহের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক ও কালো অধ্যায়ের সূচনা হলো। এ রায়ে আমরা বিস্মিত ও হতাশ।' তিনি আরো বলেন, 'এই রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আপিল করা হবে। আশা করি, আপিল বিভাগে এ রায় বাতিল হয়ে যাবে।'
রায়ের পর কাদের মোল্লার বড় মেয়ে আমাতুল্লাহ পারভীন কোনো বক্তব্য দিতে না চাইলেও বড় ছেলে হাসান জামিল বলেন, 'আমার বাবাকে ছোটবেলা থেকে যেভাবে দেখে আসছি, তাতে তিনি অন্যায় করতে পারেন না। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।' রায়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.