কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন by হাবিবুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল তার বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন।
আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে তাকে সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। দু’টি অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং অপর তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হলেও আদেশে মোট সাজা যাবজ্জীবন রাখা হয়েছে। একটি আভিযোগ থেকে আবদুল কাদের মোল্লাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

গতকাল হরতাল চলাকালে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-২-এ আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার এ রায় ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনালে এটি হচ্ছে দ্বিতীয় রায়। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে মামলায় তার অনুপস্থিতিতে বিচারে ফাঁসির রায় দেন একই ট্রাইব্যুনাল।

১৯৭১ সালের যে পাঁচটি অভিযোগে আবদুল কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়া হয়েছে সে গুলো হলোÑ ’৭১ সালের ২৬ মার্চ হযরত আলী ও তার পরিবার, ’৭১ সালের ২৭ মার্চ মেহেরুন্নেসা ও তার পরিবার, ’৭১ সালের ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব, ’৭১ সালের ৫ এপ্রিল কলেজ ছাত্র পল্লব এবং ’৭১ সালের ২৪ এপ্রিল মিরপুরে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন মানুষ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ঘোষণা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সদস্য বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক মো: শাহিনুর ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।

গতকাল হরতালের দিনে নিñিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। কাদের মোল্লা গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। সোমবার রাতে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। কারাগার থেকে গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

হরতালের কারণে কাদের মোল্লার পক্ষে সিনিয়র কোনো আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি। সাজ্জাদ আলী চৌধুরী একমাত্র আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আবদুল কাদের মোল্লার বড় ছেলে হাসান জামিল রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে ছিলেন।

রায় ঘোষণার সময় আবদুল কাদের মোল্লা ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় বসে ছিলেন। রায় প্রদানের শুরুতে কাদের মোল্লা হাত উঁচু করে ট্রাইব্যুনালে কিছু বলার অনুমতি চাইলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এখন আর কিছু বলার সুযোগ নেই। আপনি বসেন।

রায় ঘোষণা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবদুল কাদের মোল্লা দাঁড়িয়ে বলেন, এই বিচারকেরা জল্লাদের মতো রায় দিয়েছে। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এ রায় দেয়া হয়েছে। আমি বিশ্ব মানবতার বিবেকের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় আমি গ্রামের বাড়িতে ছিলাম, আমি ঢাকায় ছিলাম না। যেসব অপরাধের বর্ণনা দিয়ে সাজার রায় ঘোষণা করা হলো তার সাথে আমার দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সরকারের এজেন্ডার রায়। আজ এই আদালতে আমি বিচার পেলাম না, আল্লাহর কাছে আমি শেষ বিচারের দিন বিচার পাবো।

রায় ঘোষণার পর সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করে ছিলাম আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। আদালত যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। রায় পড়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। কোনো পয়েন্ট মিসিং হলে রিভিউ আবেদন করব।

আবদুল কাদের মোল্লার মামলার প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী বলেন, এই রায়ে আমরা খুশি নই। আমরা মৃত্যুদণ্ড আশা করেছিলাম। রায় দেখার পর আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করব।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত জুনিয়র ডিফেন্স আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন বলেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায়। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমরা অবশ্যই এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। হরতালের কারণে সিনিয়র ডিফেন্স কাউন্সেলরা আসতে পারেননি। রায় দেখে সিনিয়র আইনজীবীরাই প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

নিরাপত্তা : রায় ঘোষণা উপলক্ষে গত সোমবার থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশ এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াত, গোয়েন্দা সদস্য ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের ছাদে লাইট মেশিনগান স্থাপন করা হয়। আদালত কক্ষেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়।

ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ১০ প্লাটুন পুলিশ, র‌্যাব ও আর্মড ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়। ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে ৫০টির বেশি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়।

সোমবার থেকে ট্রাইব্যুনালের সব প্রবেশপথ ও আশপাশের পুরো এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চার পাশে র‌্যাব-পুলিশের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এলিট ফোর্স সোয়াত বাহিনীকেও মোতায়েন করা হয়েছে। হরতালের কারণে হাইকোর্ট এলাকার সড়কে খুব একটা যানবাহন ছিল না। তবে হাইকোর্ট মোড়, কদম ফোয়ারাসহ ট্রাইব্যুনালের আশপাশের সব এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়।

কাদের মোল্লার মামলার রায়ের সংবাদ সংগ্রহের জন্য দেশী ও বিদেশী বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক সকাল থেকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি আইনজীবী, সরকারি আইন কর্মকর্তা, মানবাধিকার কর্মী এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীসহ যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সোচ্চার কর্মী সমর্থকেরা হাজির হন। রায় উপলক্ষে বিপুল লোকসমাগমের কারণে এবং ট্রাইব্যুনাল-২-এর আদালত কক্ষ ছোট হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচার কক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়।

গতকাল সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল রায় ঘোষণার শুরুতে বলেন, চিফ প্রসিকিউটর বনাম আবদুল কাদের মোল্লা মামলার মূল রায়ে ১৩২ পৃষ্ঠা এবং ৪২৯টি প্যারাগ্রাফ আছে। রায়ের মূল অংশ ৩৫ পৃষ্ঠা (সামারি) পড়ে শোনানো হবে। এরপর রায়ের প্রথম অংশ বিচারক শাহিনুর ইসলাম পাঠ করেন। বাকি অংশ বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া পাঠ করেন এবং সব শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মূল রায় ঘোষণা করেন।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ছয় অভিযোগ : আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। দু’টি অভিযোগে যাবজ্জীবন ও তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে তিনটি অভিযোগে প্রত্যেকটিতে আলাদা করে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হলেও আদেশে মোট সাজা যাবজ্জীবন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া একটি আভিযোগ থেকে আবদুল কাদের মোল্লাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

পল্লব হত্যা : মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে ’৭১ সালের ৫ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় কাদের মোল্লাকে অভিযুক্ত ঘোষণা করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আইন ৩(২)(এ)(এইচ) ধারায় অভিযুক্ত করে আইনের ২০(২) ধারায় সাজা প্রদান করেন।

কবি মেহেরুন্নেসা হত্যা : ’৭১ সালের ২৭ মার্চ কবির্  মেহেরুন্নেসা, তার মা ও দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও কাদের মোল্লাকে অভিযুক্ত ঘোষণা করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আইনে সাজা প্রদান করা হয়।

সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব হত্যা : ’৭১ সালের ২৯ মার্চ বিকেলে আরামবাগ থেকে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসস্ট্যান্ডে গেলে তাকে ধরে জল্লাদখানা পাম্পহাউজে নিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় কাদের মোল্লাকে অভিযুক্ত ঘোষণা করে সাজা প্রদান করা হয়।

ঘাটার চরে শতাধিক মানুষ হত্যা : ’৭১ সালের ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ থেকে কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

মিরপুরে ৩৪৪ জনের বেশি মানুষ হত্যা : ’৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি হেলিকপ্টার মিরপুরের আলুপদি গ্রামের পূর্ব দিকে নামে। সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ৩৪৪ জনের বেশি মানুষ হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় কাদের মোল্লাকে অভিযুক্ত ঘোষণা করে সাজা প্রদান করা হয়।



হযরত আলী হত্যা : ’৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুরের ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর কালাপানি লেনের হযরত আলীকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। একই সাথে তার স্ত্রী আমিনা এবং দুই মেয়ে খাদিজা ও তাহমিনা, দুই বছরের ছেলে বাবুকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও কাদের মোল্লাকে অভিযুক্ত ঘোষণা করে সাজা দেয়া হয়।

মামলার বিবরণ : গত ১৭ জানুয়ারি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার শেষ ধাপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন (আর্গুমেন্ট) শেষ হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য রাখেন। গত বছরের ২৮ মে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগের ঘটনায় চার্জ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। গত ৩ জুলাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনে লিস্টের মোট ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে এ মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১২ জন ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

অন্য দিকে গত ১৫ নভেম্বর আবদুল কাদের মোল্লার পক্ষে তার নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার মধ্য দিয়ে ছয়জন ডিফেন্স সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। কাদের মোল্লার পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লা হলের ৪০ বছরের ইমাম হাফেজ এ আই এম লোকমান ও ৮২ বছরের বৃদ্ধ সুশীল চন্দ্র মণ্ডল সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা গ্রামের বাড়িতে ছিলেন।

গত ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। এরপর প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ১৬ এপ্রিল মামলা ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।

২০১০ সালের ১৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট থেকে কাদের মোল্লাকে একটি মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে। ট্রাইব্যুনালে তদন্তকারী সংস্থার এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়।

মামলার আইনজীবী : কাদের মোল্লার পক্ষে ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করেন ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, সিনিয়র ডিফেন্স কাউন্সেল অ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফরিদউদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী, রানা দাসগুপ্ত, এ কে এম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

আবদুল কাদের মোল্লার পরিচিতি : নাম আবদুল কাদের মোল্লা। পিতার নাম মো: সানাউল্লাহ মোল্লা। জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর ১৯৪৮। জন্মস্থান জরিপের ডাংগি, ইউনিয়ন চর বিষ্ণুপুর, থানা ও উপজেলা সদরপুর, জেলা ফরিদপুর। বর্তমান স্থায়ী ঠিকানাÑ গ্রাম আমিরাবাদ, ইউপি ভাষানচর, থানা ও উপজেলা সদরপুর, জেলা ফরিদপুর। কাদের মোল্লা ১৯৬৪ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনস্টিটিউশন থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। একই কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে বিএসসি পাস করেন। তিনি এ কলেজের ছাত্র থাকাকালে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এমএসসি কাসে ভর্তি হন এবং ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।

১৯৭৪ সালে কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর (ইনস্টিটিট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ) এ ডিপ্লোমা ইন এডুকেশনে (সোস্যাল সায়েন্স) ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন পাস করেন। তিনি বিডিআর সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উদয়ন বিদ্যালয়ে ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে শিক্ষকতা করেন।

কাদের মোল্লা জাতীয় প্রেস কাবের সদস্য। তিনি ১৯৮২-৮৪ পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই বার নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক নিয়োজিত হন। ১৯৮৭ সালে ঢাকা মহানগর জামায়াতে আমির নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।

রায়ে জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গ : আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার রায়েও জামায়াতে ইসলামীকে পাকিস্তান আর্মির সহায়ক বাহিনী বলা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশ কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল যথাÑ জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (আইসিএস), মুসলিম লীগ, পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি), কাউন্সিল মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম পার্টি পাকিস্তান দখলদার বাহিনীকে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করে। তখন ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের আল-বদর, জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দলকে বলা হতো আল-শামস এবং উর্দু ভাষাভাষি বিহারিদের বলা হতো আল মুজাহিদ। জামায়াতে ইসলামী এবং কিছু পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন পাকিস্তান রক্ষার নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের প্রতিহত করতে প্যারা মিলিটারি বাহিনী (অক্সিলিয়ারি ফোর্স) গঠন করে। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি ঘোষিত মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মামলার রায়েও বলা হয়েছে, নিরস্ত্র বাঙালিদের প্রতিহত করার জন্য জামায়াতে ইসলামী প্যারা মিলিটারি বাহিনী গঠনে কার্যকরভাবে ভূমিকা পালন করে।

No comments

Powered by Blogger.