কিডনিতে পাথর হলে করণীয়

কিডনিতে পাথর কী  কিডনির পাথর সাধারণত আকারে ছোট হয়ে থাকে। কিডনির ভিতরে কঠিন পদার্থ জমা হয়ে কিডনিতে পাথর হয়। সাধারণত খনিজ এবং অম্ল লবণ দিয়ে কিডনির পাথর তৈরি হয়। কিডনিতে বিভিন্ন কারণে পাথর হয়ে থাকে। তবে প্রস্রাব গাঢ় হলে তা খনিজগুলোকে দানা বাঁধতে সহায়তা করে এবং তা পাথরে রূপ নেয়। মোটকথা,প্রস্রাবে বিভিন্ন উপাদান যেমন-তরল, খনিজ এবং অম্লের ভারসাম্যহীনতার কারণে কিডনিতে পাথর হয়।
কি করে বুঝবেন
মূত্রনালীতে পাথর না যাওয়া পর্যন্ত কিডনিতে পাথর হওয়ার কোন লক্ষণ ও উপসর্গ সাধারণত বুঝা যায় না। তবে কিডনিতে পাথর হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো দেখা দেয় তা হলে-
— পিঠে, দুই পাশে এবং পাঁজরের নিচে ব্যথা হওয়া ও তলপেট এবং কুঁচকিতে ব্যথা ছড়িয়ে যাওয়া।
— প্রস্রাব ত্যাগের সময় ব্যথা হওয়া।
— প্রস্রাবের রঙ গোলাপী, লাল অথবা বাদামী হওয়া
— বারবার প্রস্রাবের বেগ পাওয়া
— যদি কোন সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে জ্বর এবং কাঁপুনী হওয়া
— বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
— এক্স-রে, কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি (ঈঞ)
— প্রস্রাবের পরীক্ষা
— রক্তের পরীক্ষা
— আগে পাথর হয়ে থাকলে সেই পাথরের বিশ্লেষণ।

চিকিত্সা
কিডনির পাথরের ধরণ এবং কারণের উপর ভিত্তি করে কিডনির পাথরের চিকিত্সা ভিন্ন হয়ে থাকে ।
আকারে ছোট এবং সামান্য উপসর্গ যুক্ত পাথরের বেশিরভাগ ক্ষত্রে তেমন কোন চিকিত্সার প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ১.৯ থেকে ২.৮ লিটার পানি পানসহ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করলে ভাল হয়।
আবার আকার বড় পাথর হলে-শক তরঙ্গ ব্যবহার করে পাথর ভাঙ্গা/ধ্বংস করা
অনেক বড় পাথর অপসারণের জন্য অপারেশন করার প্রয়োজন পরে। ইউরেটেরোস্কোপ ব্যবহার করে পাথর অপসারন করা যায়।

কিডনির পাথর প্রতিরোধে
— সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।
— বেশী অক্সালেটযুক্ত খাবার যেমন-পালংশাক, বীট, মিষ্টি আলু, চা, চকোলেট এবং সয়াজাতীয় খাদ্য পরিহার করা।
— খাবারে লবণ কম ব্যবহার করা এবং পরিমাণে অল্প প্রাণীজ আমিষ গ্রহণ করা
ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া তবে ক্যালসিয়াম সম্পুরকের ক্ষেত্রে সতর্কতা মেনে চলা।
পাথরের প্রকারভেদ
কিডনির পাথর কয়েক ধরণের হয়। যেমন :
ক্যালসিয়াম পাথর : বেশিরভাগ কিডনির পাথর ক্যালসিয়াম পাথর। সাধারণত খাদ্য ব্যবস্থা (কিছু কিছু শাক-সবজি, ফলমূল, বাদাম এবং চকলেট উচ্চ মাত্রায় অক্সলেট আছে), উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ডি, অন্ত্রের বাইপাস সার্জারি এবং বিভিন্ন ধরণের গ্রহণ বিপাকীয় সমস্যার কারণে প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম ঘণীভূত হয়। ক্যালসিয়াম পাথর অনেক সময় ক্যালসিয়াম ফসফেট আকারেও হয়।
স্ট্রুভাইট পাথর : সাধারণত মূত্রাধারে সংক্রমণের কারণে ঝঃত্াঁরঃব ংঃড়হব হয়। এগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বেশ বড় হয়।
ইউরিক এসিড পাথর (টত্রহব অপরফ ঝঃড়হবং) : যাদের পানিশূন্যতা আছে, উচ্চ আমিষযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে এবং গেঁটে বাত আছে তাদের এই পাথর হয়। এছাড়া জীনগত কিছু কারণে এবং রক্তের কলায় সমস্যা থাকলেও এই পাথর হয়।
সিস্টিন পাথর : সাধারণত বংশগত কোন সমস্যার কারণে এই পাথর হয়। এর ফলে কিডনি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ এমিনো এডিস বের হয়ে যায়।
এছাড়া কিডনিতে অন্যান্য ধরণের পাথরও হয়ে থাকে।

যাদের পাথর হতে পারে
যাদের কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন :
— পরিবারের কারো কিডনিতে পাথর হলে অথবা যাদের একবার কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের।
— চল্লিশ এবং চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের।
— বিশেষ করে পুরুষদের।
— যাদের পানি কম পান করার কারণে শরীরে পানিশূণ্যতা দেখা দিয়েছে
যারা উচ্চ আমিষ, উচ্চ সোডিয়াম এবং উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার খান তাদের।
—স্থূলকায়দের
যাদের খাদ্যনালীর রোগ/শল্য চিকিত্সার কারণে হজম প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয়ে পাথর তৈরীর উপাদানগুলো শরীরে শোষিত হয় তাদের।
— যাদের আগে থেকে কিডনির সমস্যা, যেমন: মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ, সিস্টিন ইউরিয়া ছাড়াও প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অতিক্রিয়া আছে তাদের।

গ্রন্থনা : আমার স্বাস্থ্য ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.