সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে ব্যাপক হারে

গত কয়েক সপ্তাহে সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নাটকীয় মাত্রায় বেড়ে গেছে। এ ধরনের ঘটনা এত বেশি মাত্রায় ও গভীরতায় ঘটছে যে সব ঘটনা তদন্ত করাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের সিরিয়াবিষয়ক তদন্ত কমিশন গতকাল সোমবার এ তথ্য জানায়।


সিরিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের একটি গোপন তালিকা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মানবাধিকারবিষয়ক তদন্ত কর্মকর্তারা।
সিরিয়াবিষয়ক জাতিসংঘের শীর্ষ তদন্ত কর্মকর্তা পাউলো সেরহিয়ো পিনেইরো গতকাল সিরিয়াবিষয়ক তদন্তের হালনাগাদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ২১তম অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী কূটনীতিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন তিনি। পিনেইরো বলেন, 'সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংখ্যায়, মাত্রায় ও গভীরতায় মারাত্মকভাবে বেড়েছে। বেসামরিক লোকজন, বিশেষ করে শিশুরাও এ সহিংসতার আঘাত বহন করছে। আবাসিক এলাকাগুলোয় প্রতিদিনই বিমান ও কামান থেকে হামলা চালানো হচ্ছে। সিরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি এতই খারাপ হয়ে উঠেছে যে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এ প্রতিবেদন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানোর সুপারিশ করছি। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থিত গুণ্ডা ও সরকারবিরোধী দলগুলো যে হারে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতন ও অপরাধের ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেগুলো বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাব।'
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর হিসাবে, গত বছরের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ২৭ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছে সিরিয়ায়। তবে জাতিসংঘ এ সংখ্যা ২০ হাজার বলে উল্লেখ করেছে।
জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা সিরিয়ায় নাশকতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের একটি গোপন তালিকা তৈরি করছে বলেও জানান পিনেইরো। তবে তিনি জানান, সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি থাকায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের নাম এখনই প্রকাশ করা হবে না। তালিকায় সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর সদস্য ও বিদেশি জিহাদিদের নামও আছে। পিনেইরোর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ডসহ আরো কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর দাবি তোলেন। তবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর সমঝোতা ছাড়া তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইসিসিতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। সিরিয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলনের দেড় বছর পার হয়ে গেলেও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এখনো দেশটির ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। পশ্চিমা ও আরব দেশগুলো প্রেসিডেন্ট আসাদকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিলেও রাশিয়া ও চীন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সিরিয়াবিরোধী কঠোর কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে তারা।
এদিকে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) গতকাল সিরিয়ার বিষয়টি আইসিসিতে তোলার আহবান জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি।
মিসরের রাজধানী কায়রোতে গতকাল সিরিয়ার সহিংসতাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় বসেন ইরান, সৌদি আরব, মিসর ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সিরিয়ার সংকট সমাধানে মিসর প্রস্তাবিত কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। চারটি দেশের মধ্যে শুধু ইরানই প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষ সমর্থন করে আসছে। সূত্র : এএফপি, টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.