পাঁচ বছর সাজার বিধান রেখে এমএলএম আইন অনুমোদন

সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ডাইরেক্ট সেল আইন, ২০১২-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি মূলত বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত আইন। চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এ আইনের নামে পরিবর্তন এনে ‘মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রণ আইন’ করা হবে।


গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বৈঠকে সাতটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৫ বছর ধরে এমএলএম ব্যবসা চলছে, আইন নেই: দেশে এত দিন ধরে এমএলএম ব্যবসা থাকলেও এটি নিয়ন্ত্রণে কোনো আইন ছিল না। তাই একটি আইনি কাঠামো তৈরি করে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনে বলা হয়ছে, এমএলএম পদ্ধতিতে গৃহস্থালি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, প্রসাধন ও টয়লেট্রিজ, হারবাল, টেলিমার্কেটিং, কৃষিজ ও কৃষিজাত, টেলিকমিউনিকেশন সেবা বা ব্যবহার-উপযোগী পণ্য এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত সেবা ও পণ্য বিক্রি করা যাবে। এ তালিকা পরিবর্তনের এখতিয়ার সরকারের হাতে থাকবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আইনটি প্রয়োগের জন্য সরকার প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে পারবে এবং বিদ্যমান কোনো প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে পারবে।
এমএলএম লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে বা ব্যবসার নামে প্রতারণা করলে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। যদি কেউ মিথ্যা বিজ্ঞাপন বা তথ্য দিয়ে ক্রেতাকে প্রতারিত করে, তা হলে এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রতারিত ব্যক্তির যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, তার দ্বিগুণ আদায় করা হবে। এ ছাড়া এই ব্যবসার কোনো কোম্পানি বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে ছয় মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মন্ত্রিসভা আশা করেছে, এ আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণকে প্রতারণা থেকে বাঁচানো যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ আইনের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে জনগণ এ বিষয়ে তাদের মতামত দিতে পারে। আইনের ভাষাকে জনসাধারণের কাছে সহজ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার ৭২ শতাংশ: জনসংখ্যাকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ‘জনসংখ্যা নীতি, ২০১২’-এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭২ শতাংশে উন্নীত করা হবে। বর্তমানে এটির ব্যবহার ৬১ দশমিক ২ শতাংশ।
এই নীতিমালার আলোকে প্রত্যেক নারীর প্রজনন হার ২ দশমিক ১-এ নামিয়ে আনা হবে, বর্তমানে এটি ২ দশমিক ৩। নীতির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে: প্রজনন-স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমানো, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, বর্তমানে নগর-স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সরকারি সেবা সীমিত। আইনের মাধ্যমে এ সেবা সম্প্রসারিত করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেসরকারি সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো হবে। কয়েকটি কমিটি করে এ নীতির বাস্তবায়ন করা হবে।
মুনাফার পাঁচ ভাগ যাবে শ্রমিকের কল্যাণ তহবিলে: বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের করা মুনাফার শতকরা পাঁচ ভাগ শ্রমিককল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। এর ৮০ ভাগ টাকা অংশগ্রহণমূলক তহবিলে, বাকি ২০ ভাগ যাবে কল্যাণ তহবিলে। এ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে ‘শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া, ২০১২’ সংশোধন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি এ নিয়মের ব্যত্যয় করে, তা হলে তাদের সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। শ্রম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ তহবিলে ইতিমধ্যে এক কোটি ৬৩ লাখ জমা পড়েছে।
নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদ থাকছে না: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বর্তমানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ও চট্টগ্রাম শাহি জামে মসজিদ পরিচালনা করছে। চট্টগ্রামের জমিআতুল ফালাহ মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বও ফাউন্ডেশনকে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য গতকাল ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া, ২০১২’ সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ফাউন্ডেশনে পরিচালনা পর্যদের নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। ধর্মমন্ত্রী এই পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং ধর্মসচিব নির্বাহী চেয়ারম্যান। কোনো কারণে চেয়ারম্যান পর্ষদের সভায় না থাকলে একজন পরিচালক সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ছাড়া বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ বিধান (সংশোধন)’ আইনের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। ১২ অক্টোবর এ আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

No comments

Powered by Blogger.