ডিম আমদানি-পরনির্ভরশীলতায় সমাধান!

দেশের বাজারে ডিমের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ে ক্রেতাসাধারণের মধ্যে যে অসন্তোষ চলছে, দৃশ্যত তা নিরসনেই নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যটির আমদানি উন্মুক্ত করা হলো। ডিম ও একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আগাম অনুমোদন ছাড়াই আনতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।


এর আগেও সরকারের এ ধরনের ঘোষণায় বাজার নিম্নমুখী হতে দেখেছি আমরা। এবারও 'সুফল' মিলবে আশা করা যায়। পাশাপাশি আশঙ্কাও থেকে যায়_ এতে সমস্যার স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাবে তো? খামার ব্যবসায়ীরা সমকালের কাছে 'বার্ড ফ্লু' আতঙ্কের যে কথা জানিয়েছেন, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে ডিম ও মুরগির বাচ্চা আমদানির সম্ভাব্য দেশ যখন ভারত। আমরা জানি, আমাদের প্রতিবেশী দেশটি এখনও বার্ড ফ্লুমুক্ত নয়। ডিমের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম এবং পোলট্রি ফিড আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি। আর চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ব্যবধান বেড়ে যাওয়ার কারণও কিন্তু বার্ড ফ্লু। রোগটির কয়েক দফা আক্রমণ ও আতঙ্কে ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আমদানি অবাধ করে দিয়ে কি বাকিগুলোকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে না? হতে পারে, সীমান্তে সুষ্ঠু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খামারের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব; কিন্তু বাজারে অসম প্রতিযোগিতার বিপদ থেকে দেশীয় পোলট্রি শিল্পকে বাঁচাব কীভাবে? নাগরিকের পুষ্টি সামান্য সুলভ করতে গিয়ে বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও কর্মসংস্থান বিপন্ন করা কি উচিত হবে? পেঁয়াজসহ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা বাজার কীভাবে অস্থিতিশীল রাখে, সে অভিজ্ঞতা আমাদের কম নয়। আমদানি অবাধ করার আগে বরং ডিমের দাম বাড়ার কারণগুলো ঘনিষ্ঠ নজরদারিতে আনা উচিত ছিল। সময় অবশ্য এখনও ফুরিয়ে যায়নি। পোলট্রি ফিডের শুল্ক পুনর্নির্ধারণ নিয়ে সরকার ভাবতেই পারে। বন্ধ হয়ে যাওয়া খামারগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে উৎপাদনে আনা যায় কি-না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাও ভেবে দেখতে পারেন। ডিমের মতো পুষ্টি উপাদানে পরনির্ভরশীলতার চেয়ে এমন পদক্ষেপ ভালো বৈ মন্দ হবে না।

No comments

Powered by Blogger.