ছাত্রসংঘের মৌলভীবাজার সভাপতির চিঠিতে আলবদর গঠনের কথা জানতে পারি -নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষী মিছবাহুরকে আসামি পক্ষের জেরা

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তৃতীয় সাক্ষী ইসলামী ঐক্যজেটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীকে জেরা করেছে আসামিপক্ষের আইনজীবী। পরবর্তী জেরা ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।


চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁকে জেরা করা হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে জেরা করেন। জেরায় প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘একাত্তরে ইসলামী ছাত্রসংঘের মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি সিরাজুল ইসলামের চিঠির মাধ্যমে আলবদর বাহিনী গঠন সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্মের আগে ১৯৬২ সালে একবার জামায়াত নিষিদ্ধ হয়েছিল। তবে পাকিস্তানী সেনাশাসকদের তোষামোদের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করানো হয়।’
জামায়াত একবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক হয়ে আন্দোলন করেছিল, জানেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘‘জামায়াত-আওয়ামীগকে একসঙ্গে নয়, এক ইস্যুতে আন্দোলন করতে দেখেছি। ২৬ আগস্ট মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করেন। জেরায় তিনি বলেছেন, ইসলামী ছাত্রসংঘের ক্যাম্পগুলোতে আমি যাই এবং মৌলভীবাজার জামায়াতের সভাপতির সঙ্গে দুইদিন বসে আলাপ করি। এ মুহূর্তে ঘটনার দিন, তারিখ ও মাস মনে নেই। প্রথম দিন গিয়েছিলাম মতলিব সাহেবের চিঠি পাওয়ার আগে ও দ্বিতীয় দিন গিয়েছিলাম তার চিঠি পাওয়ার পরদিন। মতলিব সাহেব মাঝে মাঝে আমার বাড়িতে আসতেন। তিনি ছাত্রসংঘ করার সময় আমাকে একটি চিঠি দেন। আমার বাড়ি থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ৭ থেকে ৮ মাইল হবে। জামায়াত অফিসটি ছিল চৌমুহনী চত্বরে। জামায়াত অফিস সার্কিট হাউস থেকে আধা মাইল দূরত্বে। তবে রাজাকার অফিস কোথায় ছিল তা আমার জানা নেই।
আমি মৌলভীবাজার অবস্থানকালীন আগস্ট মাসে আলবদর বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে তখন আলবদর বাহিনী গঠন হয় নাই। শাহীন ফোর্সের কোন অফিস ছিল না। ইসলামী ছাত্রসংঘের অফিসে এর কার্যক্রম চলত। মেজর ফখরুলের সঙ্গে আমার কোনদিন দেখা হয় নাই।
বঙ্গবন্ধুর আমলে যে ১৯৫ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয় তাদের নাম আমি জানি না। তবে আমি পত্রিকায় দেখেছিলাম। সর্বপ্রথম কার নাম ছিল তা আমার মনে নেই। মেজর ফখরুলের নাম দেখেছিলাম কিনা মনে নেই। ওই তালিকায় কোন বাঙালীর নাম ছিল না।
দেশ স্বাধীনের পরে মৌলভীবাজার সরকারী হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প স্থাপন করেন। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ওই ক্যাম্পের সার্বিক দায়িত্বে কে ছিল তা মনে নেই। ১৬ ডিসেম্বরের দুই দিন আগে মৌলভীবাজার মুক্ত হয়েছিল। ওই সময় এমএনএ ছিলেন ইলিয়াস সাহেব। ওই সময় স্বাধীনতা বিরোধীদের ধরে এনে কোথায় আটকে রাখা হতো তা আমি জানি না। ওই সময়, এমনকি আজ পর্যন্ত মেজর ফখরুলের বিরুদ্ধে কারও কাছে কোন অভিযোগ করি নাই।
আমার নানার নাম অন্যদা ঠাকুর। তারা বর্তমানে কলকাতা থাকেন। আমার চাচাত ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলাম তা সত্য নয়। জামায়াত যদি তাদের রুকনের তালিকা প্রকাশ করে তাহলে আমি সব রাজাকারের নাম বলতে পারব।

No comments

Powered by Blogger.