অবশেষে এক মাসের ছুটিতে মসিউর

পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে শেষ পর্যন্ত ছুটিতে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। গত রোববার রাতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক মাসের ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছুটি মঞ্জুর করেছেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।


পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার যে চারটি শর্ত দিয়েছিল, মসিউর রহমান ছুটিতে যাওয়ায় তার সবগুলোই পূরণ হলো। এখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ফিরে আসবে বলে সরকার আশা করছে।
প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বিশ্বব্যাংকের জন্য অর্থমন্ত্রীর চিঠি নিয়ে গত রোববার রাতেই ওয়াশিংটনে রওনা হয়েছেন। চিঠিতে বিশ্বব্যাংকের চারটি শর্ত পূরণ করার কথা উল্লেখ করে অর্থায়নের অনুরোধ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মসিউর রহমান ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজ মঙ্গলবার থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত এক মাসের ছুটি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। প্রয়োজনে সরকার ছুটি বাড়াতে পারে।
তবে গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় বিবিসি বাংলায় প্রচারিত সাক্ষাৎকারে ছুটির আবেদন করেননি বলে দাবি করেন মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘না, এটা ঠিক নয়। আমি ছুটিতে যাইনি বা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও এ রকম কিছু বলা হয়নি। তবে বিশ্বব্যাংক বা উন্নয়ন-সহযোগীরা যখন আমার সঙ্গে আলাপ করেছে, তখন আমি তাদের বলেছি ...। তারা বলেছে, “না, তোমার বিরুদ্ধে কিছু নাই। কিন্তু তুমি থাকলে ইনকয়ারিটা (তদন্ত) প্রভাবমুক্ত হবে না। সে জন্য তোমার থাকাটা বাঞ্ছনীয় নয়।” তো আমি তাদের বলেছি, তোমরা তো যথেষ্ট পরিমাণে বলছ না। কারণ, আমি যদি দেশের মধ্যে ঘোরাঘুরি করি, তারও তো প্রভাব আছে। তোমাদের অ্যাকচুয়ালি গভর্নমেন্টকে বলা উচিত, তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করো, না হলে আমরা কোনো রকম তদন্ত করতে পারব না। এরপর তারা আর কিছু বলে নাই। আমি পদত্যাগও করিনি বা ছুটির দরখাস্তও করা হয়নি আমার পক্ষ থেকে।’
তবে বিবিসি জানায়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ তাদের মসিউর রহমানের ছুটির দরখাস্ত পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
সরকারি সূত্র জানায়, মসিউর রহমান গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাননি। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও তিনি অংশ নেননি। তবে গতকাল বেলা তিনটায় তিনি সচিবালয়ে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সূত্র জানায়, গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী জানান, মসিউর রহমান বৈঠকে অংশ নেবেন না।
সরকারি সূত্র জানায়, মসিউর রহমানের ছুটি মঞ্জুর হলেও কৌশলগত কারণে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার পর ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে তখন সরকারিভাবে জানানো হবে।
এর আগে গত ২৩ জুলাই বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। ছুটিতে পাঠানো হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। একইভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি নতুন তদন্ত দল তৈরি করে। গত ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ সময় পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে মসিউর রহমানকে ছুটিতে পাঠাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করা হয়।
এই প্রকল্পে দাতাদের অর্থায়নের জন্য সময় আছে আর মাত্র চার দিন। প্রকল্পের অপর দুই দাতা হচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ২১ সেপ্টেম্বর জাইকার ঋণচুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.