পাসপোর্ট-ভোগান্তি-প্রযুক্তি ব্যবহারে কেন অবহেলা?

মহাজোট সরকারের যেসব কর্মসূচি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও প্রেরণাদায়ী হয়ে উঠতে পেরেছে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রযুক্তি বিপ্লবের সুফল সমাজের সর্বত্র পেঁৗছে দিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের


অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করে। দ্রুত তা জনপ্রিয় স্লোগানে পরিণত হয়। কারও কারও কাছে বিষয়টি নিছক স্বপ্ন মনে হয়েছে। যারা সঠিক মনে করেছেন তাদের কারও কারও সংশয় ছিল_ বাস্তবে রূপ দেওয়া যাবে তো? কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে মহাজোট সরকারের সাফল্যের তালিকায় ডিজিটাল বাংলাদেশকে ওপরের দিকে স্থান দিতে বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষ কেউই তেমন দ্বিধা করবে বলে মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগী ভূমিকাও সর্বমহলে প্রশংসিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে, গ্রামে-গঞ্জেও পেঁৗছেছে ইন্টারনেট সেবা। চাকরির আবেদন কিংবা পাসপোর্টের দরখাস্ত পেঁৗছে দিতে এখন আর সশরীরে শহরে গিয়ে হাজিরার দরকার নেই। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন_ সব সুযোগ কি কাজে লাগাতে পারছি? সোমবার সমকালে 'পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তি' শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট যে, হাতের কাছে থাকা সুযোগ কাজে লাগাতেও ব্যর্থ হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ_ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি প্রকল্প এবং তদন্ত সংস্থা পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি কর্তৃপক্ষ। তাদের টানাপড়েনে ৯ মাস আগে আবেদন করেও পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি সাড়ে তিন হাজার প্রবাসী। আর দেশে বসে করা ৯০ হাজারের বেশি আবেদন ঝুলে আছে পুলিশি তদন্তের অপেক্ষায়। এ জন্য পারস্পরিক দোষারোপের ঘটনা আছে, যে কোনো সরকারি দফতরেই তা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু একটি অগ্রাধিকার প্রকল্পে কেন সেটা ঘটবে, বিশেষ করে যেখানে সংশ্লিষ্ট রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ? এমআরপি কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। অনলাইন সংযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশের বিশেষ শাখা অনলাইন ব্যবহারে এখন পর্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে এসবি থেকে বলা হচ্ছে, তারা জরুরি ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টায় তদন্ত সম্পন্ন করছে। প্রযুক্তিগত সমস্যার বিষয়টি তারা উল্লেখ করছে এভাবে_ নিজস্ব সার্ভার নেই এবং বেশিরভাগ ইউনিটে অনলাইন যোগাযোগ অচল থাকায় তথ্য পেতে ও পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে। ওপরের দুই ভাষ্যে গরমিল স্পষ্ট এবং তার একটি কারণ প্রযুক্তি সুবিধা নাগালে থাকলেও তা ব্যবহারে অদক্ষতা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে অনাগ্রহ। আরেকটি কারণ হয়তো রয়েছে_ প্রযুক্তি ব্যবহারে উপরি আয়ের সুযোগ নেই, যা সম্ভব গ্রহীতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে। এমআরপি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা মাত্র দেড় বছর আগে পুলিশের বিশেষ শাখাকে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েছে এবং বিশেষ শাখার বিবেচনায় তা মানসম্পন্ন নয়। কোন ভাষ্য যথার্থ, সেটা নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর তদন্ত করে দেখবেন নিশ্চয়ই। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সুবিধার কারণে এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে কয়েক কোটি নাগরিকের বিস্তারিত প্রোফাইল রয়েছে। জন্মনিবন্ধন এবং এ ধরনের আরও কিছু সুবিধার কারণেও পুলিশের হাতে নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্যের অভাব হওয়ার কথা নয়। তাহলে নতুুন পাসপোর্ট করা কিংবা পুরনো পাসপোর্ট এমআরপি করায় কেন ভোগান্তি হবে?
 

No comments

Powered by Blogger.