শেখ মুজিবুর রহমান নতুন করে জানা by প্রফেসর এম শাহ আলম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে আমাদের এই প্রিয় মানুষটিকে নতুন করে জানা যায়। এটি শুধু নিছক নিজের কথা বা ঐ সময়ের উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক খুঁটিনাটি অজানা ঘটনার সহজ-সরল বর্ণনাই নয়; সবচেয়ে বড় কথা, বইটিতে শেখ মুজিবের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিক
অনুভূতি, সত্যপ্রিয়তা ও মানুষের জন্য তাঁর ভালবাসার একটি সত্যিকার চিত্র পাওয়া যায়, যা আমরা অনেকেই জানতাম না।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আমার ছেলেবেলা, স্কুল ও কলেজ জীবন যে পরিবেশে কেটেছে তাতে শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে সঠিক ধারণা সৃষ্টি হওয়া সম্ভব ছিল না। তাঁর সম্পর্কে একটি নেতিবাচক মনোভাবই আমার গড়ে উঠেছিল। কারণ আমাদের ধারণা দেয়া হয়েছিল তিনি নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখ-তার বিরোধী এবং সব সময় গ-গোল সৃষ্টি করে পাকিস্তানের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত করেছেন। এমন প্রচার ঐ সময়ে আমাদের অনেকের ওপরই প্রভাব ফেলেছে।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি ছয় দফার আন্দোলন আরম্ভ হবার পরে আমরা শেখ মুজিবকে বেশি করে জানতে থাকি। পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার বিষয় জানা, আমাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি এবং বাঙালী হিসেবে আমাদের আত্মসচেতনতা বৃদ্ধিই তাঁর প্রতি আমাদের বেশি করে আকৃষ্ট করে। কারণ তিনি ছিলেন বাঙালীর অধিকার আদায়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার।
আগরতলা মামলা, ’৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, শেখ মুজিবের মুক্তি, লাহোরের গোলটেবিল বৈঠক ও সত্তরের নির্বাচনের পর আমাদের অধিকার আদায়ের যে সুযোগ সৃষ্টি হয় তার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল শেখ মুজিবের। বাঙালীর অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের সংগ্রাম এবং সর্বস্তরের মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে শেখ মুজিবের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও সমর্থন বেড়ে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালীর মুক্তির প্রতীক। তখন দেখলাম তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা, বাগ্মিতা এবং জনগণকে কাছে টানার মোহনীয় শক্তি। তখনও শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা, মনন, বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থায় তাঁর বেড়ে ওঠা, মানবিক গুণাবলী, দেশপ্রেম, মানুষের জন্য অকৃত্রিম ভালবাসা, পাকিস্তান আন্দোলনে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা ইত্যাদি কতটুকুই আমরা জানতাম? বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে সে কথাই সহজ-সরল ভাষায় ফুটে উঠেছে। যে কোন পাঠকই এটি পড়ে শেখ মুজিবকে নতুন করে আবিষ্কার করবেন। আমাদের বাঙালী মুসলমানদের সব সময় একটা বদনামই ছিল। আমাদের নামী-দামী রাজনীতিবিদগণ কখনই তেমন কোন রচনা রেখে যাননি। এখনও একথা মিথ্যা নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে থেকে নিশ্চয়ই কেউ কোন বড় মাপের লেখা বা রচনা বা জীবনকাহিনী আশা করেননি। ছাত্রজীবন থেকে একনিষ্ঠ রাজনৈতিক সংগ্রামে, নানামুখী কর্মব্যস্ততায়, জেল-জুলুমে তিনি ভালভাবে লেখাপড়ার সুযোগও পাননি; যদিও কৃতিত্বের সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছেন। সেই মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে যে রচনা আমরা পেলাম তা এক কথায় অসাধারণ। আত্মজীবনীর এই গ্রন্থটি বর্তমান প্রজন্মের জন্য মানুষকে ভালবাসার, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করার, সৎ রাজনীতি করার একটি বড় অনুপ্রেরণা।
আত্মজীবনীটির মূল বৈশিষ্ট্য ও গুণ হচ্ছে এর স্বাভাবিক, সরল-সহজ প্রকাশভঙ্গি। এটি সহজেই পাঠকের মনে রেখাপাত করে, ঘটনা বর্ণনার সততা ও বস্তুনিষ্ঠতায় পাঠকের আস্থা অর্জন করে। কোন রকম কৃত্রিমতা, বাড়িয়ে বলা বা রংচং লাগানো যে নেই তা সহজেই বোঝা যায়। এজন্যই পাঠক আকৃষ্ট ও প্রভাবান্বিত হয়। আমার মনে হয়েছে শেখ তাঁর বক্তৃতায় মানুষকে যেমন আকৃষ্ট, মুগ্ধ করেছেন, তাঁর লেখনীর দ্বারাও তাঁদেরকে আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করেছেন। কেউ বইটি পড়তে আরম্ভ করলে তিনি তা শেষ অবধি পড়বেনই বলে আমার বিশ্বাস। কি পাই আমরা অসামাপ্ত আত্মজীবনীতে? এখানে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় যেখানে তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা এই সংগ্রাম ও ঘটনাবলীতে তাঁর যে ব্যক্তি চরিত্রের সাক্ষাত পাওয়া যায় তা অতুলনীয়। ১৯৬৬-৬৯ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে শেখ সাহেব ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তাঁর আত্মজীবনী লিখেছেন, যখন তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৫ বছর। এ সময়ের মধ্যেই তাঁর মধ্যে যে চারিত্র্যিক গুণাবলী-উদ্দেশ্য সাধনের সততা, মানুষের জন্য ভালবাসা, নির্মোহ কর্মসাধনা, নীতি-আদর্শে অটল থাকা, কথা ও কাজে মিল থাকা, স্পষ্টবাদিতা এবং সর্বোপরি সব কিছুতে স্বচ্ছতা বজায় রাখার সাক্ষাত পাওয়া যায় যা আজকের বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল হয়ে পড়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শক্তির মূল উৎস ছিল মানুষের জন্য তাঁর গভীর ভালবাসা ও মানুষের সেবা করার অদম্য স্পৃহা এবং তা করতে পেরে অপার আনন্দ লাভ। এই অনুভূতিই তাঁকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিল বলে আমার বিশ্বাস। আমার আরো বিশ্বাস, যাঁরা রাজনীতি করেন দলমত নির্বিশেষে সকলেই বইটি পড়লে প্রভাবান্বিত হবেন। কারণ আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ কথাগুলো প্রকাশের সততা, বস্তুনিষ্ঠতা এবং সহজ-সরল ভঙ্গির কারণে অসাধারণ হয়ে উঠেছে, যা সহজেই মনকে নাড়া দেয়। স্থানীয় একটি দৈনিকে প্রবীণ সাংবাদিক শাহজাহান মিয়া বইটি সম্পর্কে তাঁর একটি নিবন্ধের যথার্থই শিরোনাম করেছেন
“বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী বিরল এক পরশমণি।”
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আমার ছেলেবেলা, স্কুল ও কলেজ জীবন যে পরিবেশে কেটেছে তাতে শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে সঠিক ধারণা সৃষ্টি হওয়া সম্ভব ছিল না। তাঁর সম্পর্কে একটি নেতিবাচক মনোভাবই আমার গড়ে উঠেছিল। কারণ আমাদের ধারণা দেয়া হয়েছিল তিনি নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখ-তার বিরোধী এবং সব সময় গ-গোল সৃষ্টি করে পাকিস্তানের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত করেছেন। এমন প্রচার ঐ সময়ে আমাদের অনেকের ওপরই প্রভাব ফেলেছে।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি ছয় দফার আন্দোলন আরম্ভ হবার পরে আমরা শেখ মুজিবকে বেশি করে জানতে থাকি। পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার বিষয় জানা, আমাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি এবং বাঙালী হিসেবে আমাদের আত্মসচেতনতা বৃদ্ধিই তাঁর প্রতি আমাদের বেশি করে আকৃষ্ট করে। কারণ তিনি ছিলেন বাঙালীর অধিকার আদায়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার।
আগরতলা মামলা, ’৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, শেখ মুজিবের মুক্তি, লাহোরের গোলটেবিল বৈঠক ও সত্তরের নির্বাচনের পর আমাদের অধিকার আদায়ের যে সুযোগ সৃষ্টি হয় তার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল শেখ মুজিবের। বাঙালীর অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের সংগ্রাম এবং সর্বস্তরের মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে শেখ মুজিবের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও সমর্থন বেড়ে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালীর মুক্তির প্রতীক। তখন দেখলাম তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা, বাগ্মিতা এবং জনগণকে কাছে টানার মোহনীয় শক্তি। তখনও শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা, মনন, বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থায় তাঁর বেড়ে ওঠা, মানবিক গুণাবলী, দেশপ্রেম, মানুষের জন্য অকৃত্রিম ভালবাসা, পাকিস্তান আন্দোলনে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা ইত্যাদি কতটুকুই আমরা জানতাম? বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে সে কথাই সহজ-সরল ভাষায় ফুটে উঠেছে। যে কোন পাঠকই এটি পড়ে শেখ মুজিবকে নতুন করে আবিষ্কার করবেন। আমাদের বাঙালী মুসলমানদের সব সময় একটা বদনামই ছিল। আমাদের নামী-দামী রাজনীতিবিদগণ কখনই তেমন কোন রচনা রেখে যাননি। এখনও একথা মিথ্যা নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে থেকে নিশ্চয়ই কেউ কোন বড় মাপের লেখা বা রচনা বা জীবনকাহিনী আশা করেননি। ছাত্রজীবন থেকে একনিষ্ঠ রাজনৈতিক সংগ্রামে, নানামুখী কর্মব্যস্ততায়, জেল-জুলুমে তিনি ভালভাবে লেখাপড়ার সুযোগও পাননি; যদিও কৃতিত্বের সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছেন। সেই মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে যে রচনা আমরা পেলাম তা এক কথায় অসাধারণ। আত্মজীবনীর এই গ্রন্থটি বর্তমান প্রজন্মের জন্য মানুষকে ভালবাসার, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করার, সৎ রাজনীতি করার একটি বড় অনুপ্রেরণা।
আত্মজীবনীটির মূল বৈশিষ্ট্য ও গুণ হচ্ছে এর স্বাভাবিক, সরল-সহজ প্রকাশভঙ্গি। এটি সহজেই পাঠকের মনে রেখাপাত করে, ঘটনা বর্ণনার সততা ও বস্তুনিষ্ঠতায় পাঠকের আস্থা অর্জন করে। কোন রকম কৃত্রিমতা, বাড়িয়ে বলা বা রংচং লাগানো যে নেই তা সহজেই বোঝা যায়। এজন্যই পাঠক আকৃষ্ট ও প্রভাবান্বিত হয়। আমার মনে হয়েছে শেখ তাঁর বক্তৃতায় মানুষকে যেমন আকৃষ্ট, মুগ্ধ করেছেন, তাঁর লেখনীর দ্বারাও তাঁদেরকে আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করেছেন। কেউ বইটি পড়তে আরম্ভ করলে তিনি তা শেষ অবধি পড়বেনই বলে আমার বিশ্বাস। কি পাই আমরা অসামাপ্ত আত্মজীবনীতে? এখানে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রামের পাশাপাশি ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় যেখানে তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা এই সংগ্রাম ও ঘটনাবলীতে তাঁর যে ব্যক্তি চরিত্রের সাক্ষাত পাওয়া যায় তা অতুলনীয়। ১৯৬৬-৬৯ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে শেখ সাহেব ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তাঁর আত্মজীবনী লিখেছেন, যখন তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৫ বছর। এ সময়ের মধ্যেই তাঁর মধ্যে যে চারিত্র্যিক গুণাবলী-উদ্দেশ্য সাধনের সততা, মানুষের জন্য ভালবাসা, নির্মোহ কর্মসাধনা, নীতি-আদর্শে অটল থাকা, কথা ও কাজে মিল থাকা, স্পষ্টবাদিতা এবং সর্বোপরি সব কিছুতে স্বচ্ছতা বজায় রাখার সাক্ষাত পাওয়া যায় যা আজকের বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল হয়ে পড়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শক্তির মূল উৎস ছিল মানুষের জন্য তাঁর গভীর ভালবাসা ও মানুষের সেবা করার অদম্য স্পৃহা এবং তা করতে পেরে অপার আনন্দ লাভ। এই অনুভূতিই তাঁকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিল বলে আমার বিশ্বাস। আমার আরো বিশ্বাস, যাঁরা রাজনীতি করেন দলমত নির্বিশেষে সকলেই বইটি পড়লে প্রভাবান্বিত হবেন। কারণ আত্মজীবনীতে শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ কথাগুলো প্রকাশের সততা, বস্তুনিষ্ঠতা এবং সহজ-সরল ভঙ্গির কারণে অসাধারণ হয়ে উঠেছে, যা সহজেই মনকে নাড়া দেয়। স্থানীয় একটি দৈনিকে প্রবীণ সাংবাদিক শাহজাহান মিয়া বইটি সম্পর্কে তাঁর একটি নিবন্ধের যথার্থই শিরোনাম করেছেন
“বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী বিরল এক পরশমণি।”
No comments