পোলট্রিশিল্পের স্বার্থে বিকল্প সন্ধান করুন- ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত

ডিমের দাম বাড়তির মুখে আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ডিমের দাম কমবে কি না, তা নিশ্চিত করা না গেলেও দেশীয় পোলট্রিশিল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে। ডিমের উৎপাদন খরচ কম রেখে বেশি ডিম উৎপাদন করার পরিবেশ সৃষ্টি করাই ছিল সরকারের কাছে প্রত্যাশিত।


কিন্তু তা না করে বরাবরের মতো মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলাই তারা সাব্যস্ত করেছে।
বাংলাদেশে পোলট্রিশিল্পের বয়স দুই দশক ছাড়ালেও এখনো এ খাতে স্থিতিশীলতা আসেনি। একদিকে বৃহৎ খামারি ও বাজার সিন্ডিকেটের যোগসাজশে ছোট খামারিরা পেরেশানিতে থাকেন, অন্যদিকে ডিম উৎপাদনের কাঁচামাল তথা মুরগি উৎপাদন, তাদের খাদ্য ও ভ্যাকসিনের জোগানে সমস্যা প্রকট। এই সিন্ডিকেট অনেক সময় কৃত্রিমভাবে ডিমের দাম চড়িয়ে থাকে। কিছু কোম্পানির হাতে পোলট্রি ফিড বা হাঁস-মুরগির খাদ্য ও ওষুধের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তা ছাড়া বিগত কয়েক বছরে দুই দফা বার্ড ফ্লু ও এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য প্রায় ৬০ হাজার খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ধাক্কা এখনো সামলে ওঠা যায়নি। এই সার্বিক নৈরাজ্যের মধ্যেই দেশের ডিম উৎপাদন হুমকির মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় সমস্যার গোড়ায় হাত না দিয়ে হুট করে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত কতটা সুবিবেচনাপ্রসূত হয়েছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। দেশে খামারের হাঁস-মুরগির খাদ্য ও ওষুধ সাধারণত ভারত থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি সেখানে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে, ক্ষেত্রবিশেষে হাঁস-মুরগির খাদ্য রপ্তানিও তারা বন্ধ করে দিয়েছে।
উপরন্তু বার্ড ফ্লু-আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান শীর্ষ দশের মধ্যে। এ রকম একটি দেশ থেকে ডিম আমদানি জনস্বাস্থ্যের দিক থেকেও বিপজ্জনক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই ডিম আমদানির সুযোগ দিতে গিয়ে সরকারের দীর্ঘদিনের নিয়মকানুন ও প্রতিষ্ঠিত বিধিবিধানও মানেনি। আমদানি পারমিট দেওয়ার সময় এবং আমদানির আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র এবং কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট গ্রহণের বাধ্যবাধকতাও শিথিল করা হয়েছে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সনদ অনুযায়ী, ভারতের দিক থেকে যেমন অন্য কোনো দেশে ডিম বা পশু-পাখি রপ্তানি করা নিষিদ্ধ, তেমনি বাংলাদেশও তা আমদানি করতে পারে না।
সরকারের উচিত ডিমের খামারিদের ঋণসহ সহযোগিতা করা, দেশেই ভুট্টা, সয়ামিলসহ কাঁচামাল উৎপাদন বাড়ানো এবং বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙা। ডিম আমদানি স্থায়ীকরণকে সাময়িক সমাধান হিসেবে দেখা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা খাদ্যনিরাপত্তায় আরেকটি বাধা হিসেবেই কাজ করবে।

No comments

Powered by Blogger.