নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি-বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ জরুরি

গরিবের পুষ্টি চাহিদা পূরণের উপাদানগুলোর বেশির ভাগই একে একে ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য লাগামহীন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সুস্থ জীবনযাপনের চিন্তাকে তাই কঠিন করে তুলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দেখার কেউ নেই।


মাঝেমধ্যে সরকারি বক্তৃতা-বিবৃতি চোখে পড়লেও ফলাফল বিপরীতমুখী। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আগের মতোই। চালের উৎপাদন সন্তোষজনক হওয়ায় বাজারে এর সুপ্রভাব পড়েছে। এর পরও খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি চালু রাখা হয়েছে এবং এর মান একেবারে নিকৃষ্ট। ডিম, তেল, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও সরকার নির্বিকার।
কর্মজীবী এবং নিম্ন আয়ের মানুষের খাবার তালিকায় ডিম অপরিহার্য। কিন্তু সেই ডিম বাজারের থলিতে ভরা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাত্র এক বছর আগেও যেখানে ২২-২৪ টাকা দিয়ে এক হালি ডিম কেনা যেত, সেই ডিম এখন ৪২-৪৪ টাকা হালিতে কিনতে হচ্ছে। সরকারি হিসাবেই গত এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ। গরিব মানুষের খাদ্য তালিকা থেকে তাই ডিমও বাদ পড়ে যাচ্ছে। তাহলে প্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহণের ক্ষমতা কি থাকছে তার জন্য? অথচ সরকারি সঠিক পরিকল্পনা ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত থাকলে অস্বাভাবিক মূল্য রোধ করা সম্ভব হতো। এখানে চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদিত হচ্ছে না। বরং বছর কয়েকের মধ্যে উৎপাদন কমে কমে আমদানির প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে দেশে ডিম উৎপাদিত হতো সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি, সেখানে গত অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার কোটিতে। পোলট্রি শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে সরকারি ভুল সিদ্ধান্ত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসহযোগিতার কারণে। এ পরিস্থিতিতে ডিম আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সেখানেও অস্থির সিদ্ধান্ত আমদানিকে বাধাগ্রস্ত করছে। ডিম আমদানি বারবার নিষিদ্ধ তালিকায় ঢুকছে। বাজারে হৈচৈ পড়লে সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও করছে। অথচ আমদানি নিষিদ্ধ করার আগে বাজার পরিস্থিতি ও উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে তাকানো হয় না।
বাজার ব্যবস্থায় সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্য হয়তো ঠিক নয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন বাজার থাকাটা মুক্তবাজার অর্থনীতিও সমর্থন করে না। অথচ সরকার কখনো মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে, কখনো সিন্ডিকেটের কথা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যার যৌক্তিকতা নেই। বাজারের লাগাম যদি সিন্ডিকেটের হাতেই থাকে, তাহলে সরকার সেই সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে ভেঙে দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? চাল, ডাল, তেল, চিনির মূল্য বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেটের দোহাই দেওয়া হয়, তাহলে কাঁচাবাজারেও আগুন থাকে কেন? বেগুন, শসাতেও কি সিন্ডিকেটের হাত পড়েছে? আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণেই সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকারকেই ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। আবারও বলা প্রয়োজন, বেসরকারি উদ্যোগকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থায়ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.