সাংবাদিক পীড়নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন- আবারও ছাত্রলীগ

সাংবাদিক সমাজ যখন সাগর-রুনি হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে, তখন এই রাজধানীতেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অঘটন ঘটিয়ে চলেছে সরকার-সমর্থক ছাত্র সংগঠনটি। তাদের হাত থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতেই ছাত্রলীগের কর্মীরা আবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক পিটিয়ে। গতকাল প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, তুচ্ছ ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সাংবাদিককে পিটিয়েছেন ও লাঞ্ছিত করেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। দৈনিক দিনের শেষে পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক গোলাম মোস্তফা ও দৈনিক দেশজনতা পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক এস এম আল-আমিন একটি ফটোকপির দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে এই দুই সাংবাদিকের সামান্য বাগিবতণ্ডা হয় এবং একপর্যায়ে তাঁরা বিজনেস স্টাডিজ ভবনের সামনে নিয়ে মোস্তফাকে মারধর করেন এবং আল-আমিনকে লাঞ্ছিত করেন। পরে ঘটনার প্রতিকার চাইতে সাংবাদিকদ্বয় প্রক্টর অফিসে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা দ্বিতীয়বার গোলাম মোস্তফাকে মারধর করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইয়াসিন স্বীকার করেছেন, নিষ্পত্তির জন্য তাঁরা প্রক্টর অফিসে গেলে হামলাকারীরা দ্বিতীয়বার তাঁদের মারধর করেন। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতারা কী বলবেন? একটি ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা কীভাবে সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলেন? দেশে কি আইনকানুন বলতে কিছু নেই? এর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা প্রহূত হয়েছেন, শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। প্রকৃতপক্ষে বিচার বা প্রতিকারহীনতার কারণেই সরকার-সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সাংবাদিকের ওপর যাঁরা নির্যাতন চালিয়েছেন, আমরা তাঁদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। তাঁরা কেবল সাংবাদিক নন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও। অতএব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে নির্বিকার থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুই ছাত্র প্রক্টর অফিসে অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে এসে আবার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার বিচার না হলে বুঝতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্ধ ও কালার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। অতীতে তাদের উদাসীনতা ও নীরবতাই ছাত্রলীগ নামধারীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই প্রতিটি অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.