রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি কি আসন্ন? by আবু এন এম ওয়াহিদ
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি মোটামুটি একটি গণতান্ত্রিক ধারায় এসে পড়ে ১৯৯০-এর পটপরিবর্তনের পর। দুর্বল গণতন্ত্রের এ পথচলা এখনো নিষ্কণ্টক ও নিরাপদ হয়নি। তবু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন তো হচ্ছে, এটা নিশ্চয়ই একটি ভালো দিক, যদিও এটাই গণতন্ত্রের শেষ কথা নয়।
গণতন্ত্রে নিছক নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারের চেয়ে সুশাসন এবং সব সরকারি সিদ্ধান্তে জনমতের প্রতিফলনই বড় কথা, যা এখনো বাংলাদেশে সোনার পাথর বাটি হয়ে রয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল বা জোট যখনই ক্ষমতায় যায়, তখন তারা এটাকে জনসেবা ও সুশাসনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি দুর্লভ সুযোগ মনে করে না। তারা ভাবে, পাঁচ বছরের জন্য জনগণ বুঝি তাঁদের কাছে দেশটিকে ইজারা দিয়ে দিয়েছে এবং এই ভেবে যাচ্ছেতাই করতে থাকে। সময় শেষ হলে জনগণ ঠিকই তাদের ছুড়ে ফেলে দিয়ে আরেক দলকে ক্ষমতায় বসায়; কিন্তু তাতে কোনো ফল হয় না। 'থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়'_এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দলগুলোও পেয়ে বসেছে, দেশবাসীর যেন যাওয়ার মতো তৃতীয় কোনো জায়গা নেই। ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা জনগণের এজেন্ডা বাদ দিয়ে দলীয় এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং তার চেয়ে খারাপ যে কাজটি করে সেটা হচ্ছে, প্রতিপক্ষের ওপর হামলে পড়ে। তাদের ধারণা, 'ঘুরেফিরে সেই তো আওয়ামী লীগ, নয়তো বিএনপি_ভাবনা কিসের?' নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, জনগণের প্রতি দায়িত্ব, ডেলিভারি অব গুড গভর্ন্যান্স ইত্যাদি নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায় না। আস্তে আস্তে জনসমর্থন হারাতে থাকে। সময় অর্ধেক পার হওয়ার পর যখন বুঝতে পারে, পরবর্তী নির্বাচনে ভরাডুবি হবে নিশ্চিত, তখন তাদের খাই খাই বেড়ে যায়। ভাবতে থাকে, ক্ষমতা যখন ছাড়তেই হবে, তাহলে আখেরটা একটু ভালো করে গুছিয়ে নিই। এই প্রক্রিয়া একইভাবে চক্রাকারে ঘুরছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। এমন গ্যাঁড়াকলে পড়ে অনেকে ভাবতে শুরু করেছেন, এ দুই দলের কাউকে দিয়ে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা যাবে না, রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান চাই।
সেদিন খবরে দেখলাম, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ঘোষণা দিয়েছেন, 'আগামী নির্বাচনে তাঁরা তৃতীয় শক্তির পক্ষ থেকে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেবেন।' এটা অত্যন্ত ভালো কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমিও সেটা চাই। কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়ালেই তো আর হলো না, ভোটও তো পেতে হবে। সাংবাদিক আবু সাঈদ খান দৈনিক সমকালে কলাম লিখেছেন রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে। তিনি বলতে চেয়েছেন, 'এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানো মানে ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেওয়ারই নামান্তর।' সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম একই কথা বলছেন অনেক দিন ধরে। অন্যান্য কলাম লেখকও এ ব্যাপারে তাঁদের বিজ্ঞ মতামত দিয়ে যাচ্ছেন, কারো কারো মতের সঙ্গে পুরোপুরি না হলেও আংশিকভাবে আমি সহমত পোষণ করি। ছোট দলের রাজনীতিবিদরাও বসে নেই। একই ধারায় নিকট অতীতে কাজ করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বি. চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব, মনজুরুল আহসান খান এবং আরো অনেকে।
তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের সময় সরকারিভাবে কিছু চেষ্টা, কিছু এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে; কিন্তু সফল হয়নি। সে কোশিশ এখনো কেউ কেউ অব্যাহত রেখেছেন। আমার দৃঢ়বিশ্বাস_এটাও ফেল মারবে, কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের সময় এখনো হয়নি। কেন হয়নি আমি সংক্ষেপে তার একটি ব্যাখ্যা এ নিবন্ধের মাধ্যমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই। আমার বক্তব্য শুরু করছি জাসদের সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন খান বাদলের একটি উক্তি দিয়ে। তিনি জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এক টিভি টক শোতে বলেছিলেন, 'এ মুহূর্তে দেশে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব সম্ভব নয়, কারণ রাজনীতির ময়দানে স্পেস খালি নেই।' অর্থাৎ জনগণের মধ্যে তৃতীয় শক্তির চাহিদা নেই। আমার মতে কথাটা তখন ঠিক ছিল, এখনো ঠিক এবং সহসা এর ব্যত্যয় হওয়ার নয়, তবে দূর ভবিষ্যতে তৃতীয় শক্তির উত্থান অবশ্যম্ভাবী।
বিবদমান দুই দল বা জোট বারবার একই ভুল করছে, ব্যর্থ হচ্ছে, বেপরোয়া দেশ চালাচ্ছে, একটু শক্ত ভাষায় বলতে গেলে জনগণের সঙ্গে কথা দিয়ে কথা রাখছে না, তবু তারা রাজনীতির ময়দানে বিশাল বিশাল স্পেস দখল করে বসে আছে। এখন প্রশ্ন হলো, কেন? কিভাবে? এবং কোন প্রক্রিয়ায়? প্রশ্নগুলোর উত্তর একসঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করছি। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই রাজনৈতিক ও মানসিকভাবে দুই ধরনের লোক বাস করে_লিবারেল ও কনজারভেটিভ। বাংলাদেশও এর কোনো ব্যতিক্রম নয়। তবে জাতীয় জীবনের এক বিশেষ সময়ে, স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাক্কালে এবং যুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল ও এক হয়েই বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়েছে এবং অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বাম জোট শুধু লিবারেলদের প্রতিনিধিত্ব করত। দেশে বিশাল কনজারভেটিভ জনগোষ্ঠীর মনের কথা বলার মতো তখন কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মর্ ছিল না। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি সৃষ্টির মাধ্যমে সেই শূন্যস্থানটি পূরণ করে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ওই সময় বিএনপির জন্য রাজনীতির ময়দানে একটি বিশাল স্পেস খালি ছিল।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন, 'তা-ই যদি হবে, তাহলে দুই দলই পালাক্রমে নির্বাচনে হারে কেন?' উত্তরটি খুব সহজ এবং সরল। উভয় দলই নির্বাচনে হারে সুইং ভোট সুইং করে বলে। তাদের কোর সাপোর্ট যেমন ছিল, তেমনি আছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে বলেই আমার ধারণা। এবার আমার কথার সপক্ষে কিছু পরিসংখ্যান দিচ্ছি। সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার গঠন করে তারা, যারা সংসদে অধিকাংশ সিট পায়। আর বিরোধী দলে যায় তারা, যারা সংসদে কম সিট পায়। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদীয় সিটের হিসাব এবং ভোটের হিসাবের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আওয়ামী লীগ ও তার জোট যখন নির্বাচনে হারে, তখনো তারা এক-তৃতীয়াংশের অধিক ভোট পায়। বিএনপির ব্যাপারেও কথাটি সমানভাবে প্রযোজ্য। অর্থাৎ দুই দলেরই বাঁধা ভোট প্রায় সমান সমান। সুইং ভোট মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আর এ ভোটের ব্যবধানেই প্রতিটি নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হচ্ছে।
তাই বলে কি এ দুই দলীয় দৌরাত্ম্য চলতে থাকবে চিরকাল? বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনা বাস্তব আকার ধারণ করবে। কারণ সুইং ভোট যতটা বাড়বে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাঁধা ভোট প্রায় ততটাই কমবে। নতুন যোগ হওয়া ভোটারদের জন্য হিসাবে অবশ্য একটু হেরফের হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির ব্যাপারে যাঁরা খুব উৎসাহী, তাঁদের প্রতি আমার একটি বিনীত সাবধানবাণী বা নোট অব কশন আছে_যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় আড়াই শ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটেনি, ইংল্যান্ডে সাড়ে তিন শ বছরেও তা হয়নি। বাংলাদেশে ৪০-৫০ বা ১০০ বছরে কি তা সম্ভব হবে? সম্ভব হলেও রাজনীতিতে তার টিকে থাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তিকে টিকে থাকতে হলে সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে থাকতে হবে তার শক্তিশালী ছাত্রসংগঠন। বর্তমান মডেলটিতে ব্যাপকভিত্তিক ছাত্রসংগঠন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারবে না। কেন, সেটা নিয়ে আরেকটি পৃথক নিবন্ধ পরবর্তী সময়ে লেখার ইচ্ছা রইল।
লেখক : অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি; এডিটর_জার্নাল অব
ডেভেলপিং এরিয়াজ Awahid2569@gmail.com
সেদিন খবরে দেখলাম, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ঘোষণা দিয়েছেন, 'আগামী নির্বাচনে তাঁরা তৃতীয় শক্তির পক্ষ থেকে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেবেন।' এটা অত্যন্ত ভালো কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমিও সেটা চাই। কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়ালেই তো আর হলো না, ভোটও তো পেতে হবে। সাংবাদিক আবু সাঈদ খান দৈনিক সমকালে কলাম লিখেছেন রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে। তিনি বলতে চেয়েছেন, 'এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানো মানে ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেওয়ারই নামান্তর।' সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম একই কথা বলছেন অনেক দিন ধরে। অন্যান্য কলাম লেখকও এ ব্যাপারে তাঁদের বিজ্ঞ মতামত দিয়ে যাচ্ছেন, কারো কারো মতের সঙ্গে পুরোপুরি না হলেও আংশিকভাবে আমি সহমত পোষণ করি। ছোট দলের রাজনীতিবিদরাও বসে নেই। একই ধারায় নিকট অতীতে কাজ করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বি. চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব, মনজুরুল আহসান খান এবং আরো অনেকে।
তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের সময় সরকারিভাবে কিছু চেষ্টা, কিছু এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে; কিন্তু সফল হয়নি। সে কোশিশ এখনো কেউ কেউ অব্যাহত রেখেছেন। আমার দৃঢ়বিশ্বাস_এটাও ফেল মারবে, কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের সময় এখনো হয়নি। কেন হয়নি আমি সংক্ষেপে তার একটি ব্যাখ্যা এ নিবন্ধের মাধ্যমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই। আমার বক্তব্য শুরু করছি জাসদের সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন খান বাদলের একটি উক্তি দিয়ে। তিনি জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এক টিভি টক শোতে বলেছিলেন, 'এ মুহূর্তে দেশে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব সম্ভব নয়, কারণ রাজনীতির ময়দানে স্পেস খালি নেই।' অর্থাৎ জনগণের মধ্যে তৃতীয় শক্তির চাহিদা নেই। আমার মতে কথাটা তখন ঠিক ছিল, এখনো ঠিক এবং সহসা এর ব্যত্যয় হওয়ার নয়, তবে দূর ভবিষ্যতে তৃতীয় শক্তির উত্থান অবশ্যম্ভাবী।
বিবদমান দুই দল বা জোট বারবার একই ভুল করছে, ব্যর্থ হচ্ছে, বেপরোয়া দেশ চালাচ্ছে, একটু শক্ত ভাষায় বলতে গেলে জনগণের সঙ্গে কথা দিয়ে কথা রাখছে না, তবু তারা রাজনীতির ময়দানে বিশাল বিশাল স্পেস দখল করে বসে আছে। এখন প্রশ্ন হলো, কেন? কিভাবে? এবং কোন প্রক্রিয়ায়? প্রশ্নগুলোর উত্তর একসঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করছি। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই রাজনৈতিক ও মানসিকভাবে দুই ধরনের লোক বাস করে_লিবারেল ও কনজারভেটিভ। বাংলাদেশও এর কোনো ব্যতিক্রম নয়। তবে জাতীয় জীবনের এক বিশেষ সময়ে, স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাক্কালে এবং যুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল ও এক হয়েই বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়েছে এবং অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বাম জোট শুধু লিবারেলদের প্রতিনিধিত্ব করত। দেশে বিশাল কনজারভেটিভ জনগোষ্ঠীর মনের কথা বলার মতো তখন কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মর্ ছিল না। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি সৃষ্টির মাধ্যমে সেই শূন্যস্থানটি পূরণ করে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ওই সময় বিএনপির জন্য রাজনীতির ময়দানে একটি বিশাল স্পেস খালি ছিল।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন, 'তা-ই যদি হবে, তাহলে দুই দলই পালাক্রমে নির্বাচনে হারে কেন?' উত্তরটি খুব সহজ এবং সরল। উভয় দলই নির্বাচনে হারে সুইং ভোট সুইং করে বলে। তাদের কোর সাপোর্ট যেমন ছিল, তেমনি আছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে বলেই আমার ধারণা। এবার আমার কথার সপক্ষে কিছু পরিসংখ্যান দিচ্ছি। সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার গঠন করে তারা, যারা সংসদে অধিকাংশ সিট পায়। আর বিরোধী দলে যায় তারা, যারা সংসদে কম সিট পায়। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদীয় সিটের হিসাব এবং ভোটের হিসাবের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আওয়ামী লীগ ও তার জোট যখন নির্বাচনে হারে, তখনো তারা এক-তৃতীয়াংশের অধিক ভোট পায়। বিএনপির ব্যাপারেও কথাটি সমানভাবে প্রযোজ্য। অর্থাৎ দুই দলেরই বাঁধা ভোট প্রায় সমান সমান। সুইং ভোট মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আর এ ভোটের ব্যবধানেই প্রতিটি নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হচ্ছে।
তাই বলে কি এ দুই দলীয় দৌরাত্ম্য চলতে থাকবে চিরকাল? বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনা বাস্তব আকার ধারণ করবে। কারণ সুইং ভোট যতটা বাড়বে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাঁধা ভোট প্রায় ততটাই কমবে। নতুন যোগ হওয়া ভোটারদের জন্য হিসাবে অবশ্য একটু হেরফের হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির ব্যাপারে যাঁরা খুব উৎসাহী, তাঁদের প্রতি আমার একটি বিনীত সাবধানবাণী বা নোট অব কশন আছে_যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় আড়াই শ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটেনি, ইংল্যান্ডে সাড়ে তিন শ বছরেও তা হয়নি। বাংলাদেশে ৪০-৫০ বা ১০০ বছরে কি তা সম্ভব হবে? সম্ভব হলেও রাজনীতিতে তার টিকে থাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তিকে টিকে থাকতে হলে সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে থাকতে হবে তার শক্তিশালী ছাত্রসংগঠন। বর্তমান মডেলটিতে ব্যাপকভিত্তিক ছাত্রসংগঠন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারবে না। কেন, সেটা নিয়ে আরেকটি পৃথক নিবন্ধ পরবর্তী সময়ে লেখার ইচ্ছা রইল।
লেখক : অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি; এডিটর_জার্নাল অব
ডেভেলপিং এরিয়াজ Awahid2569@gmail.com
No comments