গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব- ‘নতুন পৃথিবীতে ঢুকলাম’

‘এত আনন্দ পেয়েছি যে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। মনে হচ্ছে, আজ নতুন পৃথিবীতে ঢুকলাম। ছোট্ট একটি মুঠোফোনের ভেতরে যে এত বড় পৃথিবী লুকানো ছিল, আগে জানতাম না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা এই পৃথিবীকে জয় করব।’

গতকাল সোমবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসবে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম এ কথা বলে। সে উপজেলার মনিগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র।
‘এসো পৃথিবীর পাঠশালায়...’ স্লোগান নিয়ে উৎসবটি হয় বাঘা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে। সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। এ কারণে নির্ধারিত কেন্দ্র বাঘা উচ্চবিদ্যালয় মাঠ বাতিল করা হয়। গতকাল সিলেটের বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ইন্টারনেট উৎসব হয়।
প্রতিটি কেন্দ্রে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জনকে আই-জিনিয়াস প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়। ওই ১০ জনকে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। ১০ জনের মধ্যে সেরা আই-জিনিয়াস পায় মেডেল। উৎসবের কেন্দ্রপ্রধানকে দেওয়া হয় একটি ঘড়ি ও প্রথম আলোর মগ।
ইন্টারনেট উৎসবের খবর জানাচ্ছেন ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা—
বাঘা (রাজশাহী): সকাল ১০টার দিকে বাঘা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি ইন্টারনেটের ব্যবহার নিয়ে শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান।
উৎসবে বাঘা উচ্চবিদ্যালয়, মনিগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়, চণ্ডীপুর উচ্চবিদ্যালয়, আড়ানী মনমোহিনী উচ্চবিদ্যালয়, বাউসা কারিগরি উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, দিঘা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, মোজাহার হোসেন মহিলা কলেজ, শাহদৌলা ডিগ্রি কলেজ, বাঘা মহিলা বাণিজ্যিক কলেজ অ্যান্ড ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ও রাধাকান্তপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের রাজশাহীর ব্যবস্থাপক (আঞ্চলিক অপারেশন) সারোয়ার পারভেজ, রাজশাহীতে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ ও রাধাকান্তপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান।
বিয়ানীবাজার (সিলেট): বিয়ানীবাজারের উৎসবে অংশ নেয় বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ, বৈরাগীবাজার কলেজ, সৈয়দ নবিব আলী কলেজ, পিএইচজি হাইস্কুল, বিয়ানীবাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতন, কসবা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, দাসউরা হাইস্কুল, দক্ষিণ মুড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়, জলঢুপ উচ্চবিদ্যালয়, দেউলগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় ও মুল্লাপুর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়। ২২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতনের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মোয়াজ্জিম হোসেন।
উৎসবের উদ্বোধন করেন বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল ইসলাম। বক্তব্য দেন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ, প্রবীণ শিক্ষাবিদ আলী আহমদ, আকমল আলী, গ্রামীণফোনের সরবরাহ ব্যবস্থাপক সৌগত বিশ্বাস, বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও মহিলা কলেজের প্রভাষক প্রিয়তোষ চক্রবর্ত্তী, সভাপতি আতিকুল ইসলাম ও প্রথম আলোর বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি আবদুল ওয়াদুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার মুন্সী আবদুল কাদির ও গ্রামীণফোনের মশিউল আলম।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী): ‘প্রযুক্তির ধারণা থেকে আমরা গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছি। প্রযুক্তির জ্ঞান না থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার, এই উৎসবে অংশ না নিলে বুঝতে পারতাম না।’ ইন্টারনেট উৎসবে যোগ দিয়ে গতকাল কথাটি বলে খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সামিয়া পারভেজ।
এর আগে উৎসবের উদ্বোধন করেন খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাদাৎ হোসেন বিশ্বাস। উৎসবে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ, কলাপাড়া মহিলা কলেজ, ইসমাইল তালুকদার টেকনিক্যাল বিএম অ্যান্ড কৃষিপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাখিমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হাজীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
গতকাল সকালে বৃষ্টির মধ্যেও শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে উৎসব প্রাঙ্গণ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের বরিশাল অঞ্চলের ব্যবস্থাপক সুভাষ চন্দ্র লোধ, কলাপাড়া বন্ধুসভার সভাপতি শাহিনা নাসরিন, চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সদস্য নুরুল আবরার, প্রথম আলোর কলাপাড়া প্রতিনিধি নেছারউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মুখস্থ পড়া, মাদক ও মিথ্যাকে না বলার শপথ নেয়। নিবন্ধন করা ২২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র অভিষেক মুখার্জি।
এ বছর সারা দেশে ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে এই উৎসবের সহযোগী হিসেবে রয়েছে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি। সহায়তা দিচ্ছে গুগল, অপেরা, নকিয়া, ফেসবুক, চ্যানেল আই ও রেডিও ফুর্তি। উৎসবের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করছে এশিয়াটিক ইভেন্ট মার্কেটিং লিমিটেড। সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
আজ উৎসব হবে নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চবিদ্যালয়, কক্সবাজারে টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, বগুড়ার সান্তাহার সরকারি কলেজ ও পটুয়াখালীর গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।