আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করুন

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেছেন, ‘আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করুন। যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমার তো ব্রেন স্ট্রোকও হতে পারে। আমি হার্টফেলও করতে পারি।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একপর্যায়ে মসিউর রহমান এ মন্তব্য করেন।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে মসিউর রহমান গত রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক মাসের ছুটি চেয়ে আবেদন করলে প্রধানমন্ত্রী তা মঞ্জুর করেন।
এ সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাংবাদিকেরা তাঁর ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মসিউর রহমান বলেন, ‘আমার বিবেচনায় ছুটিতে যাওয়া অত্যন্ত গৌণ। একসময় রাশিয়ায় যারা অবাঞ্ছিত ছিল, তাদের গুলাগে (সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার নির্যাতন শিবির) নিয়ে যাওয়া হতো। আমার জীবনটা গুলাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
ছুটিতে গেছেন কি যাননি—সাংবাদিকেরা এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর জানতে চাইলে মসিউর বলেন, ‘আমারটা তো খুব স্পষ্ট। যে দরখাস্ত (ছুটির) করবে, আর যিনি গ্রহণ করবেন, তাঁরা তো কিছু বলেননি। বলেছেন অন্যরা।’
আজ (মঙ্গলবার) অফিসে যাবেন কি না, জানতে চাইলে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি তো অফিস করি। আমার যেটা কাজ, সেটা করি।’ আজ অফিসে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকেরা আবারও তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি তো কাজ করছি।’
এ সময় সাংবাদিকেরা মসিউর রহমানকে বলেন, তাহলে আমরা কি ধরে নেব, আপনি ছুটি নিয়েছেন? তখন মসিউর রহমান বলেন, ‘আপনাদের ধরে নেওয়া না-নেওয়ার কোনো দরকার নেই।’
গতকালের (সোমবার) মন্ত্রিসভার বৈঠকে কেন যাননি—সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘এক-দুই দিন আগে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় আমার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই অবস্থায় যদি মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাই, তাহলে আমার উপস্থিতি উত্তেজনাকর হবে।’
মসিউর বলেন, ‘এই সরকারের মেয়াদে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। এটা করার মতো সংগতি আমাদের আছে। চার-পাঁচ বছরে করলে গায়ে লাগবে না।’
বিশ্বব্যাংক প্রসঙ্গে মসিউর বলেন, ‘এরা আমাদের দেশের কিছু লোককে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।’ তাঁরা বিশ্বব্যাংকের হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষেত্রে চারটি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়ার শর্তটি অন্যতম।
বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে গত ২৩ জুলাই সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। ছুটিতে পাঠানো হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। একইভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি নতুন তদন্ত দল গঠন করে। গত ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে।

No comments

Powered by Blogger.