চিন্তা-পরস্পরকে রক্ষা না ধ্বংস? by সেঁজুতি শুভ আহ্মেদ
যে জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে সভ্যতার যাত্রা সূচিত হয়েছিল সে জ্ঞানের চূড়ান্ত ব্যবহার সভ্য মানুষ আর তাদের সভ্যতাকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। মানুষের সূচনালগ্ন থেকে যে প্রবৃত্তিগুলো টিকে থাকার জন্য এক সময় ব্যবহৃত হতো হিংস্র জন্তু-জানোয়ার ও প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে আজ তা ব্যবহৃত হচ্ছে মানুষেরই বিরুদ্ধে।
আগে মানুষের যুদ্ধ প্রবৃত্তির যে ফলাফল তীর-ধনুক কিংবা কামানের গোলা আবিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভূত অগ্রগতি সে ফলাফলকে টেনে নিয়ে গেছে হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কার পর্যন্ত। তাই এ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যদি যথাশিগগির মানুষকে তার অশুভ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় তবে এগুলোই হয়ে উঠবে মানুষের অস্তিত্ব বিনাশের সমার্থক।
ইতিহাসের দিকে তাকলে দেখতে পাই, মানুষের একত্রীকরণ প্রবৃত্তি সভ্যতাকে ক্রমেই এগিয়ে নেয় এবং বিভাজননীতি সভ্যতাকে ক্ষয়িষ্ণু করে তোলে। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও রাষ্ট একত্র হয়েই আজকের সভ্যতার জয়যাত্রা সূচিত হয়েছিল। দুঃখজনকভাবে আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে যে, জাতীয়তাবাদ সার্বভৌমত্বের অন্তরালে মানুষের মধ্যে বিভাজন প্রবৃত্তি প্রকট করে তুলেছে এবং এ প্রবৃত্তি যে এসব জাতীয়তাবাদী ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অধিবাসীদের অস্তিত্বকে সংকটাপন্ন করে তুলছে, সেদিকে আমাদের নজর পড়ছে না। নজর পড়ছে না কারণ জাতিগুলোর মধ্যে আত্মগরিমাবোধ, ক্ষমতালিপ্সা ও হিংসাত্মক যুদ্ধংদেহী মনোভাব মানুষের মনে একটা ঘোর তৈরি করেছে।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরমাণু বোমা কিংবা হাইড্রোজেন বোমার মতো ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র বড় কোনো যুদ্ধে বিশেষ করে পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার যুদ্ধে ব্যবহৃত হবেই। এ ধরনের পরমাণু অস্ত্রের বিস্ফোরণ খুব সহজেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করতে পারে। যুদ্ধ প্রযুক্তি ও সামরিক সমৃদ্ধির এ বিভীষিকাময় যুগে তৃতীয় কোনো বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে আমরা কেবল মানবজাতির অনস্তিত্বকেই আশা করতে পারি, আশা করতে পারি জন-প্রাণ বৈচিত্র্যশূন্য এক বিরান পৃথিবী। আর তাই মানবজাতির অস্তিত্ব সংকট বা অস্তিত্বের অনিশ্চয়তাকে দূর করতে হলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যে কোনো মাত্রার যুদ্ধ সংঘটন অসম্ভব হয়ে পড়বে এমন পরিবেশের নিশ্চয়তা বিধান করা আবশ্যক। বিশ্ব সরকার ব্যবস্থা বিশ্বে এরকম একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেখানে ব্যাপক বিধ্বংসী যাবতীয় অস্ত্রের নিয়ন্তা হবে বিশ্ব সরকার অধীন বিশ্ব সৈন্যবাহিনী, কোনো জাতীয় সৈন্যবাহিনী নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে সময়টাকে শান্তিবাদী মহল থেকে বিশ্ব সরকার গঠনের দাবি উঠেছিল, সেই সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিশ্ব সরকার গঠন অনেক বেশি কঠিন ও জটিল। এ কাঠিন্য ও জটিলতার মধ্য দিয়েই বিশ্ব সরকারের ধারণাকে বাস্তব রূপদানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময় বলে মনে করি। জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতৃত্ব এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমান যুদ্ধানুকূল বিশ্ব ব্যবস্থায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন। বিশ্ব সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যে নানা বাধা রয়েছে এর মধ্যে মানুষের প্রবৃত্তিগত বাধাই সর্বাগ্রে প্রতীয়মান হয়।
মানবজাতির অস্তিত্ব এখন নিজেদের ওপরই নির্ভর করছে। মানুষই নির্ধারণ করবে সভ্যতা ও বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষকে তারা কিসে ব্যবহার করবে_ পরস্পরকে রক্ষায় না পরস্পরকে ধ্বংসে। নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অবশ্যম্ভাবীভাবে ভূমিকা রাখবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মানব প্রবৃত্তির সংশ্লেষণ। সংশ্লেষণে মানুষের ইতিবাচক প্রবৃত্তিগুলোরই জয় হোক।
সেঁজুতি শুভ আহ্মেদ :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
theclayman.man@gmail.com
ইতিহাসের দিকে তাকলে দেখতে পাই, মানুষের একত্রীকরণ প্রবৃত্তি সভ্যতাকে ক্রমেই এগিয়ে নেয় এবং বিভাজননীতি সভ্যতাকে ক্ষয়িষ্ণু করে তোলে। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও রাষ্ট একত্র হয়েই আজকের সভ্যতার জয়যাত্রা সূচিত হয়েছিল। দুঃখজনকভাবে আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে যে, জাতীয়তাবাদ সার্বভৌমত্বের অন্তরালে মানুষের মধ্যে বিভাজন প্রবৃত্তি প্রকট করে তুলেছে এবং এ প্রবৃত্তি যে এসব জাতীয়তাবাদী ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অধিবাসীদের অস্তিত্বকে সংকটাপন্ন করে তুলছে, সেদিকে আমাদের নজর পড়ছে না। নজর পড়ছে না কারণ জাতিগুলোর মধ্যে আত্মগরিমাবোধ, ক্ষমতালিপ্সা ও হিংসাত্মক যুদ্ধংদেহী মনোভাব মানুষের মনে একটা ঘোর তৈরি করেছে।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরমাণু বোমা কিংবা হাইড্রোজেন বোমার মতো ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র বড় কোনো যুদ্ধে বিশেষ করে পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার যুদ্ধে ব্যবহৃত হবেই। এ ধরনের পরমাণু অস্ত্রের বিস্ফোরণ খুব সহজেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করতে পারে। যুদ্ধ প্রযুক্তি ও সামরিক সমৃদ্ধির এ বিভীষিকাময় যুগে তৃতীয় কোনো বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে আমরা কেবল মানবজাতির অনস্তিত্বকেই আশা করতে পারি, আশা করতে পারি জন-প্রাণ বৈচিত্র্যশূন্য এক বিরান পৃথিবী। আর তাই মানবজাতির অস্তিত্ব সংকট বা অস্তিত্বের অনিশ্চয়তাকে দূর করতে হলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যে কোনো মাত্রার যুদ্ধ সংঘটন অসম্ভব হয়ে পড়বে এমন পরিবেশের নিশ্চয়তা বিধান করা আবশ্যক। বিশ্ব সরকার ব্যবস্থা বিশ্বে এরকম একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেখানে ব্যাপক বিধ্বংসী যাবতীয় অস্ত্রের নিয়ন্তা হবে বিশ্ব সরকার অধীন বিশ্ব সৈন্যবাহিনী, কোনো জাতীয় সৈন্যবাহিনী নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে সময়টাকে শান্তিবাদী মহল থেকে বিশ্ব সরকার গঠনের দাবি উঠেছিল, সেই সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিশ্ব সরকার গঠন অনেক বেশি কঠিন ও জটিল। এ কাঠিন্য ও জটিলতার মধ্য দিয়েই বিশ্ব সরকারের ধারণাকে বাস্তব রূপদানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময় বলে মনে করি। জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতৃত্ব এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমান যুদ্ধানুকূল বিশ্ব ব্যবস্থায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন। বিশ্ব সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যে নানা বাধা রয়েছে এর মধ্যে মানুষের প্রবৃত্তিগত বাধাই সর্বাগ্রে প্রতীয়মান হয়।
মানবজাতির অস্তিত্ব এখন নিজেদের ওপরই নির্ভর করছে। মানুষই নির্ধারণ করবে সভ্যতা ও বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষকে তারা কিসে ব্যবহার করবে_ পরস্পরকে রক্ষায় না পরস্পরকে ধ্বংসে। নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অবশ্যম্ভাবীভাবে ভূমিকা রাখবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মানব প্রবৃত্তির সংশ্লেষণ। সংশ্লেষণে মানুষের ইতিবাচক প্রবৃত্তিগুলোরই জয় হোক।
সেঁজুতি শুভ আহ্মেদ :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
theclayman.man@gmail.com
No comments