সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটেছে। রায়ের নানা দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের চার বিশিষ্ট আইনজ্ঞ -ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল: বিশেষজ্ঞ মত

দুই দল রাজি থাকলে সব কিছু সম্ভব: রফিক-উল হক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো রূপরেখা দেওয়া হয়নি। প্রস্তাব আসুক, তারপর এ নিয়ে কথা হবে।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারপ্রধান কে হবেন? আর ওই ব্যক্তি যদি নির্বাচিত না হন, তাহলে কী হবে? যাঁকে প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হবে, তাঁকে কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচিত করে নিলেই হয়। দুই দল রাজি থাকলে সবকিছু সম্ভব।
দুই দল রাজি থাকলে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আবার চালু করা যেতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া পরবর্তী নির্বাচন হওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখায় সমস্যার কিছু নেই। অতীতে এ রকম অনেকে লিখেছেন। ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথাটি হয়তো ভুলবশত বলা হয়েছে। এটা ৯০ দিন হওয়ার কথা।
রফিক-উল হক: প্রবীণ আইনজীবী

রায় মেনে নেওয়া হবে সঠিক পদক্ষেপ: আমীর-উল ইসলাম
আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে রয়েছে, এটা গণতান্ত্রিক দেশ। সেখান থেকে ব্যত্যয় ঘটতে পারবে না। এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একটা রায় এসে গেছে। জাতির জন্য এবং সবার জন্য তা মেনে নেওয়া হবে সঠিক পদক্ষেপ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার জন্য পদ্ধতিগত দিকটি ভেবে দেখা যেতে পারে।
সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ রেখেও নির্বাচন করা যায়। আপিল বিভাগের সুপারিশে ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা নির্দেশনামূলক, এটা বাধ্যতামূলক নয়। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার জন্য এখনো সুযোগ আছে। ওই রায়ে একটি দিকনির্দেশনা আছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে গঠিত সরকারও একটি প্রথাগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে পরিগণিত হয়। সে ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিরোধী দল ও অন্যান্য দলের সদস্য থাকতে পারেন। এটা এখনো সম্ভব। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের সমঝোতা ও সিদ্ধান্তের ওপর।
এম আমীর-উল ইসলাম: সংবিধান বিশেষজ্ঞ

অনির্বাচিত কারও কাছে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না: মাহবুবে আলম
রায়টি হয়েছে ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা সম্পর্কে। আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অবৈধ বলেছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী সাংঘর্ষিক বলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া রায় অকাট্য মনে হয়েছে। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘোষণা। এর ফলে কোনো অনির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে দায়িত্ব ন্যস্ত করা যাবে না। রায়ের মূল কথা হলো, দেশ শাসন করবেন কে—জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, না অন্য কেউ। আদালত কিছু আনুষঙ্গিক বিষয়েও মতামত দিয়েছেন। সে বিষয়গুলো চূড়ান্ত নয়। চূড়ান্ত কথা হলো, নির্বাচিত লোকেরাই দেশ শাসন করবেন। ইতিমধ্যে সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করেছে।
এই রায়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের, তা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে। আর সংসদ যেহেতু ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করেছিল, তাই সংসদের তা বাতিল করারও অধিকার আছে। আর দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকার প্রসঙ্গটি নির্দেশনামূলক।
মাহবুবে আলম: অ্যাটর্নি জেনারেল

তত্ত্বাবধায়ক আনতে হলে সংবিধান সংশোধন দরকার: এম জহির
আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে গত বছরের ৩০ জুন সংশোধনী করে ফেলেছে। তারা একটা স্ট্যান্ট নিয়েছে। ১৩তম সংশোধনী এমনিতে চলে গেছে। আর বিএনপি স্ট্যান্ট নিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া তারা নির্বাচন করবে না। এত দিন পরে এ বিষয়ে রায় এসেছে। এখন এ রায় কতটা কার্যকর হবে? রায় হয়েছে ৪:২:১। বিচারপতি মো. ইমান আলী বিষয়টি সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এখন দেখছি তা-ই হচ্ছে। সংসদ যা করার করে দিয়েছে। এখন এ রায় নিয়ে কি সংসদ আবার বসবে?
এখন দেখা যাক, এটা কার্যকর কতটা হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কীভাবে নেয়, তা দেখা যাক। আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কারণ, কে হবেন নির্দলীয়, সেটা তো ঠিক করতে হবে।
এম জহির: বিশিষ্ট আইনজ্ঞ

No comments

Powered by Blogger.