সিডিউল বিপর্যয়ে বিমান

আকাশ-পথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের একমাত্র সরকারী মাধ্যম হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমানগুলো বিভিন্ন রুটে বিশ্বের নানা দেশে চলাচল করে। বিমানে যেমন যাত্রীরা দেশ-বিদেশে যাতায়াত করে, তেমনি এতে প্রচুর মালামালও পরিবহন করা হয়।


বস্তুত বিমান যেমন আমাদের জাতীয় পরিচয় ও গর্বের প্রতীক, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিম-লের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ারও একটি বড় মাধ্যম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হাজারো সমস্যা ও অব্যবস্থার ভারে জর্জরিত। অভ্যন্তরীণ রুটের কথা বাদ দিলেও বিমানের আন্তর্জাতিক সেবার মান নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের সুপরিসর উড়োজাহাজের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি প্লেনের সিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটছে। আর সিডিউল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো পুরনো মডেলের কয়েকটি ডিসি-১০ বিমানের ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়া। পৃথিবীর বহু দেশ যেখানে পুরনো মডেলের এই প্লেন বাদ দিয়ে অত্যাধুনিক মডেলের বিমান তাদের বহরে যোগ করেছে, সেখানে বিমান এখনও ব্যয় ও ঝামেলাবহুল ডিসি-১০ উড়োজাহাজকে বিদায় করতে পারেনি। এ কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি যেমন হচ্ছে, তেমনি তাদের জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাছাড়া, এ ধরনের বিমান চালু রাখার জন্য আনুষঙ্গিক যে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে বিমান কর্তৃপক্ষকে, তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বিমানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে। ৭ মে, ২০১২ তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বিমান এখন নানাভাবে লোকসান দিচ্ছে। ক্রমেই ভেঙ্গে পড়ছে এর অবকাঠামো। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, চরম সিডিউল বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে বিমান। বস্তুত এই সিডিউল বিপর্যয় আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়; এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিমানের সামর্থ্য ও অব্যবস্থাপনা আর নানান আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মারপ্যাঁচ। বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং সমস্যা সমাধানে তৎপর না হওয়াও বিমানের নানাবিধ সঙ্কটের জন্য দায়ী। এমনি নানাবিধ অব্যবস্থার কবল থেকে এবারের হজ ফ্লাইটের সিডিউলও রেহাই পায়নি। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ফ্লাইটের সিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ হয়েছে।
সার্বিক জাতীয় স্বার্থে বিমান ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, সততা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা যেমন জরুরী, তেমনি বিমান বহরে যোগ করতে হবে অত্যাধুনিক মডেলের উড়োজাহাজ। এই দুয়ের পরিকল্পিত সমন্বয় সাধিত হলে বিমান যেমন আধুনিক বিশ্বের বিমান সেবার সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে, তেমনি অবসান হবে সিডিউল বিপর্যয়সহ অন্যান্য সমস্যার।

No comments

Powered by Blogger.