ধর্ম-হিজরি সালের ঐতিহ্য ও মহররমের তা ৎ পর্য by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য চান্দ্রমাসের হিজরি সাল গণনার সূচনা হয়। এর সঙ্গে পৃথিবীর ১৫০ কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আবেগ-অনুভূতি ও ইসলামি আচার-অনুষ্ঠান—সর্বোপরি ইবাদত-বন্দেগির বিষয় সরাসরি সম্পৃক্ত। হিজরি সাল ইসলামের ইতিহাসের একটি মৌলিক ও গৌরবোজ্জ্বল দিক এবং মুসলমানদের অশেষ ঐতিহ্যের অবদানে মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় পৃথিবীর সর্বত্র সমানভাবে সমাদৃত।
হিজরি সালের ক্যালেন্ডার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় থেকে প্রচলিত না হলেও দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৭ হিজরি বা রাসুলের ওফাতের সাত বছর পর থেকে প্রচলন করা হয়। যদিও মহানবী (সা.) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, কিন্তু এর প্রস্তুতি এবং আকাবার শেষ বায়আতের পর নবী করিম (সা.) হিজরতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথম যে চাঁদটি উদিত হয়েছিল, তা ছিল মহররম মাসের। অন্যান্য সাহাবায়ে কিরামের হিজরত মহররম থেকে শুরু হয়েছিল, তাই হিজরি সালের প্রথম মাস মহররম থেকে ধরা হলো।
হিজরি সালের সঙ্গে মুসলমানদের বিশেষ ঐতিহ্য নিহিত রয়েছে। যদিও হিজরতের সময়কাল থেকে হিজরি সাল বা চন্দ্রবর্ষ গণনা শুরু হয়, কিন্তু এ পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে চান্দ্রমাসের গণনা শুরু হয়েছে। আসমান ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই সৃষ্টিকর্তার বিধানে মাসের সংখ্যা বারো (১২)। আবার দিবা-রাত্রি মিলে ২৪ ঘণ্টার এক দিনে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করার হুকুম অনেক আয়াতের মাধ্যমেই বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে মাস গণনায় মাস বারোটি, তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সূরা আত-তাওবা, আয়াত-৩৬)
আরবি চান্দ্রবর্ষ তথা হিজরি সালের প্রথম মাস হলো মহররম। ‘মহররম’ শব্দের অর্থ অলঙ্ঘনীয় পবিত্র। ইসলামে মহররম মাসটি অত্যন্ত মর্যাদাবান ও ফজিলতময়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা যে চারটি মাস সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর মুখনিঃসৃত অমিয় বাণীর মাধ্যমে তা সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। বিদায় হজের ভাষণে সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে তিনি বলেছেন, ‘তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক—জিলকদ, জিলহজ ও মহররম, অপরটি হলো রজব।’ (বুখারি)
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই চান্দ্রমাসের হিসাব মহান আল্লাহর গণনায় রয়েছে। যুগ যুগ ধরে মানুষ চান্দ্রমাসের হিসাব করে চলেছে। প্রাচীনকাল থেকে পূর্ববর্তী সব নবীর শরিয়তে ১২ চান্দ্রমাসকে এক বছর গণনা করা হতো এবং তার মধ্যে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব—এই পবিত্র চারটি মাসকে বরকতময় ও সম্মানিত মনে করা হতো। এ মাসগুলোকে ‘আশ্-শাহরুল হারাম’ বা অলঙ্ঘনীয় পবিত্র মাস বলা হতো। এই চারটি মাসে যেকোনো ইবাদতের সওয়াব বৃদ্ধি পায়। তেমনি এ সময়ে পাপাচার করলে এর ভয়াবহ পরিণাম ও শাস্তি কঠোরভাবে ভোগ করতে হয়।
ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিভিন্ন কারণে অশেষ মর্যাদাপূর্ণ ও তা ৎ পর্যবহ। প্রাক্-ইসলামি যুগেও মহররমের ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। অফুরন্ত বরকত ও তা ৎ পর্যমণ্ডিত মহররম মাসে বহু নবী-রাসুল ঈমানের কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে মুক্তি ও নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন। কারবালাসহ অসংখ্য তথ্যবহুল ঐতিহাসিক ঘটনা এ মাসে সংঘটিত হয়েছিল। ১০ তারিখ আশুরার সঙ্গে পুরো মহররম মাসের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার তা ৎ পর্য ও ফজিলত বর্ণনাকালে সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন, ‘তবে কি আল্লাহ তাআলা ওই দিনটিকে সমস্ত দিনের চেয়ে অধিক মর্যাদা দিয়েছেন? নবী করিম (সা.) জবাব দিলেন, হ্যাঁ!’ এরপর তিনি ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমান, জমিন, লওহ কলম, সাগর, পর্বত এই দিনে সৃষ্টি করেছেন।’
রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে পবিত্র আশুরার দিনে রোজা রাখা ফরজ ছিল। পরে তা রহিত করে মাহে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আশুরার দিনে হজরত আদম (আ.)-এর ওপর ও অন্যান্য নবীর ওপর রোজা ফরজ ছিল। এদিন দুই হাজার পয়গম্বর ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন এবং দুই হাজার পয়গম্বরের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছিল।’ (রযিন) নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার রোজা রাখে, তার আমলনামায় সাত আসমান জমিনের সব অধিবাসীর সওয়াব লেখা হয় এবং যে ব্যক্তি নিজের জন্য দোজখের আগুন হারাম করতে চায়, সে যেন মহররম মাসের নফল রোজা রাখে।’ অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, ‘মহররম মাসে যদি কোনো ব্যক্তি রোজা রাখে, তবে প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে ত্রিশ রোজার পুণ্য লাভ করবে।’
ইসলাম-পূর্বকালে বিভিন্ন জাতি নানা কারণে আশুরার দিন রোজা রাখত। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে দেখতে পেলেন যে ইহুদিরা মহররমের ১০ তারিখ আশুরা দিবসে রোজা রাখছে। নবী করিম (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কোন দিন, যাতে তোমরা রোজা রেখেছ?’ তারা বলল, ‘এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন, ফিরআউনকে তার সম্প্রদায়সহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তাই হজরত মুসা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এদিন রোজা রেখেছেন, এ জন্য আমরাও রোজা রাখি।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমরা হজরত মুসা (আ.)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী।’ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা রাখলেন এবং অন্যদের রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুমিন মুসলমানেরা ১০ মহররম আশুরা দিবসের গুরুত্ব ও তা ৎ পর্য উপলব্ধি করে এদিন ঐচ্ছিক রোজাব্রত পালন করেন। আশুরার দিন নফল রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘এ রোজা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে থাকে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি) অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি আশুরার রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (আহমাদ) এ মাসের সম্মান প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহররম মাসের সম্মান করবে, আল্লাহ তাকে বেহেশতে সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্ত রাখবেন।’
তাই আসুন, আল্লাহর দরবারে আকুল প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের মহররম মাসের ইসলামি ঐতিহ্য, গুরুত্ব ও মর্যাদা অনুধাবন করে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অশেষ সওয়াব হাসিলের তাওফিক দান করেন এবং সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক কারবালার মর্মস্পর্শী ঘটনা স্মরণে প্রতিটি মুসলমানকে ঈমানি চেতনাশক্তিতে আরও বেশি বলীয়ান ও তেজোদীপ্ত হওয়ার মানসিকতা দান করেন। আমিন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
হিজরি সালের সঙ্গে মুসলমানদের বিশেষ ঐতিহ্য নিহিত রয়েছে। যদিও হিজরতের সময়কাল থেকে হিজরি সাল বা চন্দ্রবর্ষ গণনা শুরু হয়, কিন্তু এ পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে চান্দ্রমাসের গণনা শুরু হয়েছে। আসমান ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই সৃষ্টিকর্তার বিধানে মাসের সংখ্যা বারো (১২)। আবার দিবা-রাত্রি মিলে ২৪ ঘণ্টার এক দিনে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করার হুকুম অনেক আয়াতের মাধ্যমেই বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে মাস গণনায় মাস বারোটি, তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সূরা আত-তাওবা, আয়াত-৩৬)
আরবি চান্দ্রবর্ষ তথা হিজরি সালের প্রথম মাস হলো মহররম। ‘মহররম’ শব্দের অর্থ অলঙ্ঘনীয় পবিত্র। ইসলামে মহররম মাসটি অত্যন্ত মর্যাদাবান ও ফজিলতময়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা যে চারটি মাস সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর মুখনিঃসৃত অমিয় বাণীর মাধ্যমে তা সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। বিদায় হজের ভাষণে সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে তিনি বলেছেন, ‘তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক—জিলকদ, জিলহজ ও মহররম, অপরটি হলো রজব।’ (বুখারি)
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই চান্দ্রমাসের হিসাব মহান আল্লাহর গণনায় রয়েছে। যুগ যুগ ধরে মানুষ চান্দ্রমাসের হিসাব করে চলেছে। প্রাচীনকাল থেকে পূর্ববর্তী সব নবীর শরিয়তে ১২ চান্দ্রমাসকে এক বছর গণনা করা হতো এবং তার মধ্যে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব—এই পবিত্র চারটি মাসকে বরকতময় ও সম্মানিত মনে করা হতো। এ মাসগুলোকে ‘আশ্-শাহরুল হারাম’ বা অলঙ্ঘনীয় পবিত্র মাস বলা হতো। এই চারটি মাসে যেকোনো ইবাদতের সওয়াব বৃদ্ধি পায়। তেমনি এ সময়ে পাপাচার করলে এর ভয়াবহ পরিণাম ও শাস্তি কঠোরভাবে ভোগ করতে হয়।
ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিভিন্ন কারণে অশেষ মর্যাদাপূর্ণ ও তা ৎ পর্যবহ। প্রাক্-ইসলামি যুগেও মহররমের ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। অফুরন্ত বরকত ও তা ৎ পর্যমণ্ডিত মহররম মাসে বহু নবী-রাসুল ঈমানের কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে মুক্তি ও নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন। কারবালাসহ অসংখ্য তথ্যবহুল ঐতিহাসিক ঘটনা এ মাসে সংঘটিত হয়েছিল। ১০ তারিখ আশুরার সঙ্গে পুরো মহররম মাসের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার তা ৎ পর্য ও ফজিলত বর্ণনাকালে সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন, ‘তবে কি আল্লাহ তাআলা ওই দিনটিকে সমস্ত দিনের চেয়ে অধিক মর্যাদা দিয়েছেন? নবী করিম (সা.) জবাব দিলেন, হ্যাঁ!’ এরপর তিনি ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমান, জমিন, লওহ কলম, সাগর, পর্বত এই দিনে সৃষ্টি করেছেন।’
রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে পবিত্র আশুরার দিনে রোজা রাখা ফরজ ছিল। পরে তা রহিত করে মাহে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আশুরার দিনে হজরত আদম (আ.)-এর ওপর ও অন্যান্য নবীর ওপর রোজা ফরজ ছিল। এদিন দুই হাজার পয়গম্বর ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন এবং দুই হাজার পয়গম্বরের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছিল।’ (রযিন) নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার রোজা রাখে, তার আমলনামায় সাত আসমান জমিনের সব অধিবাসীর সওয়াব লেখা হয় এবং যে ব্যক্তি নিজের জন্য দোজখের আগুন হারাম করতে চায়, সে যেন মহররম মাসের নফল রোজা রাখে।’ অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, ‘মহররম মাসে যদি কোনো ব্যক্তি রোজা রাখে, তবে প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে ত্রিশ রোজার পুণ্য লাভ করবে।’
ইসলাম-পূর্বকালে বিভিন্ন জাতি নানা কারণে আশুরার দিন রোজা রাখত। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে দেখতে পেলেন যে ইহুদিরা মহররমের ১০ তারিখ আশুরা দিবসে রোজা রাখছে। নবী করিম (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কোন দিন, যাতে তোমরা রোজা রেখেছ?’ তারা বলল, ‘এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন, ফিরআউনকে তার সম্প্রদায়সহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তাই হজরত মুসা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এদিন রোজা রেখেছেন, এ জন্য আমরাও রোজা রাখি।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমরা হজরত মুসা (আ.)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী।’ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা রাখলেন এবং অন্যদের রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুমিন মুসলমানেরা ১০ মহররম আশুরা দিবসের গুরুত্ব ও তা ৎ পর্য উপলব্ধি করে এদিন ঐচ্ছিক রোজাব্রত পালন করেন। আশুরার দিন নফল রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘এ রোজা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে থাকে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি) অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি আশুরার রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (আহমাদ) এ মাসের সম্মান প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহররম মাসের সম্মান করবে, আল্লাহ তাকে বেহেশতে সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্ত রাখবেন।’
তাই আসুন, আল্লাহর দরবারে আকুল প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের মহররম মাসের ইসলামি ঐতিহ্য, গুরুত্ব ও মর্যাদা অনুধাবন করে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অশেষ সওয়াব হাসিলের তাওফিক দান করেন এবং সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক কারবালার মর্মস্পর্শী ঘটনা স্মরণে প্রতিটি মুসলমানকে ঈমানি চেতনাশক্তিতে আরও বেশি বলীয়ান ও তেজোদীপ্ত হওয়ার মানসিকতা দান করেন। আমিন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments