পাহাড়ি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হোক-পার্বত্য চুক্তির ১৪ বছর

পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ত ৎ কালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতি চুক্তি সই করেছিল। ১৪ বছর পরও সেই চুক্তির অধিকাংশ বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। এ জন্য কার দায় বেশি, সেই বিতর্কের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বুধবার জনসংহতি সমিতি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।


চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শোষণ ও বঞ্চনার অবসান।
জনসংহতি সমিতির নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা অভিযোগ করেছেন, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহী নয়, তারা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেছেন, চুক্তি বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতি সরকারকে সহযোগিতা করছে না। এই পারস্পরিক দোষারোপে তারাই লাভবান হচ্ছে, যারা চুক্তির বিরোধিতা করেছিল।
এ কথা ঠিক, পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন আর যুদ্ধাবস্থা নেই। এটি চুক্তির বড় সাফল্য। কিন্তু সেখানে বসবাসরত পাহাড়িদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে সেই সাফল্য কত দিন ধরে রাখা যাবে, তা বলা কঠিন। চারদলীয় জোট সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহ না দেখাতে পারে, চুক্তি সইয়ের সময় তারা এর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু যে সরকার চুক্তি সই করে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে, সেই সরকার কেন চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করবে? ১৪ বছর আগে সরকার ও পাহাড়ি নেতৃত্ব যে বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে চুক্তি করেছিল, বাস্তবায়নেও তা অটুট রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কী কী বাধা আছে, তা চিহ্নিত করে সমাধানে উভয় পক্ষকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
আবার পাহাড়ি নেতৃত্বকেও হাওয়ায় ছড়ি না ঘুরিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। পাহাড়ি সংগঠনগুলো একে অপরের ওপর আক্রমণ চালালে সরকার সেখানে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প রাখার অজুহাত খাড়া করবেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থেই জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের সংঘাত বন্ধ করতে হবে।
সর্বোপরি রাষ্ট্রের পক্ষে যেহেতু সরকার পার্বত্য চুক্তি করেছে, সেহেতু চুক্তি বাস্তবায়নে তাদেরই উদ্যোগী ও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী সেখানে পাহাড়িদের ভূমি ও সম্পত্তির ওপর সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধের পাশাপাশি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কাজটিও জরুরি ভিত্তিতে শেষ করতে হবে। চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নই পাহাড়ি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে। অন্যদিকে চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সরকার তার বিরুদ্ধে আপিল করেছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ দূর করতেই এই আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। চুক্তির সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করার মতো যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন সরকারের আছে, তখন চুক্তি নিয়ে এই অনিশ্চয়তা রাখার যুক্তি কী?

No comments

Powered by Blogger.