সংসদ অধিবেশন-বিরোধী দলের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হোক

জাতীয় সংসদ হচ্ছে জাতির আশা ও ভরসার জায়গা। দেশের মানুষ পাঁচ বছরের জন্য আইনপ্রণেতা ও নীতিনির্ধারক নির্বাচন করে এখানে পাঠান। নবম জাতীয় সংসদের তিন বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। আজই বসছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন।


বিগত কয়েকটি অধিবেশনের মতো এবারের শীতকালীন অধিবেশনেও বিরোধী দলহীন থাকবে জাতীয় সংসদ- এমন আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। যদিও কিছুদিন আগে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সংসদে যোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় সংসদ দেশের সর্বোচ্চ ফোরাম। সেখানে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সব বিষয় নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা করবেন, এটাই আমাদের সবার আশা। কিন্তু সংসদ বর্জন যেন এখন একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। শুরুতেই বর্তমান সংসদের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। চলতি সংসদের ২৫৪ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ১৮৯ দিন উপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত ৬৫ দিন। উপস্থিতির হার ৭৪ শতাংশের বেশি। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সংসদ অধিবেশনে উপস্থিতির হার ২.৩৬ শতাংশ। গত তিন বছরে সংসদের ২৫৪ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি উপস্থিত ছিলেন মাত্র ছয় দিন। সংসদ বর্জনের ক্ষেত্রে বিরোধী দলের একই যুক্তি, সংসদে কথা বলতে দেওয়া হয় না। যদিও একটি গণতান্ত্রিক দেশে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদে বিরোধী দলও সরকারের একটি অংশ। সব বিষয়ে প্রয়োজনে সরকারকে সতর্ক করার ও সরকারের ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব বিরোধী দলের। একই সঙ্গে বিরোধী দল সংসদে অনুপস্থিত থাকলে জনগণ সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অন্ধকারে থেকে যায়। কোন ব্যাপারে সরকার ভুল করছে, কোনটা সরকারের ভালো কাজ, তা তুলে ধরার মূল কর্তব্যটি বিরোধী দলকেই পালন করতে হয়। তাতে সংসদ ও সরকারের কাজ সম্পর্কে দেশের মানুষ আলোকিত হয়। হ্যাঁ, সংসদে যোগ দেওয়া বা সংসদে কথা বলার সুযোগ নিয়ে বিএনপির নিজস্ব একটি পর্যবেক্ষণ থাকতেই পারে। পর্যবেক্ষণ থাকতে পারে রাজনৈতিক গতিবিধি নিয়েও। এসব বিষয়ে তাদের যেকোনো বক্তব্য শুরুতে সংসদে গিয়ে উত্থাপন করাটাই সমীচীন। বিএনপি সংসদ বর্জন করে রাজপথের আন্দোলনেই এখন বেশি সক্রিয়। কিন্তু সবার আগে সংসদে গিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে পরে সেটা জনগণের কাছে তুলে ধরলে আরো বেশি কার্যকর হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বিরোধী দলের ভূমিকা ও অবদান সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত। অতীতের সংসদ অধিবেশনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে বিরোধী দল সংসদ অধিবেশন বর্জনের পথটাকেই আন্দোলনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি যুগপৎ সংসদেও নিজেদের অধিকার ও জনগণের অধিকার নিয়ে বিরোধী দলকে সোচ্চার হতে হবে- এটাই সঠিক সংসদীয় নীতি। আমরা আশা করব, বিএনপি এবারের শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে সংসদীয় রীতিনীতির প্রতি নিজেদের আস্থা জানাবে। শুধু ফিরে যাওয়াই নয়, বিএনপির এবার সংসদে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের দীর্ঘকালের সংস্কৃতিরও অবসান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। কারণ দেশে এখন অনেক সমস্যা। বর্তমান সরকার ও সংসদের তিন বছর সময় চলে গেছে, হাতে যে দুই বছর আছে, এই সময়ে সরকারকে অনেক কাজ করতে হবে। এই দুই বছরে বিরোধী দলকেও নিতে হবে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক ভূমিকা। এখন বিরোধী দলের সংসদে উপস্থিতি জনগণের স্বার্থে খুবই প্রয়োজন। এ প্রয়োজনটির দিকে বিরোধী দল গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই।
প্রধান দুই দলের সক্রিয় উপস্থিতিই মাত্র সংসদকে কার্যকর করতে ও সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে সহায়ক হতে পারে। অতীতের নেতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পাট চুকিয়ে দিয়ে ইতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতির দৃপ্ত নতুন অধ্যায় শুরু হোক আজ থেকে।

No comments

Powered by Blogger.