পবিত্র কোরআনের আলো-বিপদগ্রস্ত হলে মানুষ একমাত্র আল্লাহকেই ডাকে

০. ওয়া হুয়াল্লাযী ইয়াতাওয়াফ্ফা-কুম্ বিল লাইলি ওয়া ইয়া'লামু মা জারাহ্তুম বিন্নাহা-রি ছুম্মা ইয়াবআ'ছুকুম ফীহি লিইউক্বদ্বা আজালুম্ মুছাম্মা; ছুম্মা ইলাইহি মারজিউ'কুম ছুম্মা ইউনাবি্বউকুম বিমা কুনতুম তা'মালূন। ৬১. ওয়া হুওয়ালক্বা-হিরু ফাওক্বা ই'বা-দিহী ওয়া ইউরছিলু আ'লাইকুম হাফাযাহ্; হাত্তা ইযা জা-আ আহাদাকুমুল মাওতু তাওফ্ফাত্হু রুছুলুনা ওয়া হুম লা-ইউফাররিত্বূন।


৬২. ছুম্মা রুদ্দূ ইলাল্লাহি মাওলা-হুমুল হাকি্ব; আলা লাহুল হুকমু ওয়া হুওয়া আছরাউ'ল হা-ছিবীন।
৬৩. ক্বুল মান ইউনাজ্জীকুম্ মিন্ যুলুমাতিল বার্রি ওয়ালবাহ্রি তাদঊ'নাহূ তাদ্বার্রুআ'ওঁ ওয়াখুফইয়াহ; লায়িন আনজা-না মিন হাযিহী লানাকূনান্না মিনাশ্ শা-কিরীন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৬০-৬৩]
অনুবাদ : ৬০. তিনিই মহান আল্লাহ, যিনি রাতের বেলায় তোমাদের মৃত মানুষের মতো করে ফেলেন, আবার দিনের বেলায় জাগ্রত অবস্থায় তোমরা যা কিছু করে বেড়াও, তা-ও তিনি জানেন। এরপর আবার তিনি তোমাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন, যাতে করে তোমাদের জীবনকালটি এভাবে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়, আর তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এরপর তিনি তোমাদের বলে দেবেন, তোমরা জীবনে কী কী করেছিলে।
৬১. তিনি নিজ বান্দাদের ওপর পূর্ণমাত্রায় কর্তৃত্বশীল, তিনি তোমাদের ওপর রুহানি পাহারাদার নিযুক্ত করেন। অতঃপর তোমাদের কারো যখন মৃত্যু এসে হাজির হয়, তখন প্রেরিত ফেরেশতারা তার জীবনের সমাপ্তি ঘটায়। দায়িত্ব পালনে তারা কোনো ভুল
করে না।
৬২. অতঃপর তাদের সবাইকে বিচারের জন্য তাদের প্রকৃত মালিকের সামনে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। খবরদার! সমগ্র ক্ষমতা কিন্তু একা তাঁর হাতে। হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তৎপর।
৬৩. (হে নবী) আপনি তাদের বলুন, কে তোমাদের রক্ষা করে, যখন তোমরা স্থলভূমিতে বা সাগরের অন্ধকারে বিপদে পড়ে কাতর কণ্ঠে অথবা নীরবে শুধু তাঁর কাছেই মিনতি জানাতে থাকো? তোমরা তো তখন বলো, হে প্রভু! আমাদের যদি তুমি এ বিপদ থেকে বাঁচাও তাহলে আমরা কৃতজ্ঞ বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যাবো।
ব্যাখ্যা : ৬০ নম্বর আয়াতে একটি উপমার মাধ্যমে মানুষের জীবন-মৃত্যুর স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে এবং হাশরের ময়দানে যে সবাইকে বিচারের জন্য একত্রিত করা হবে_এর সহজবোধ্য প্রমাণ হাজির করা হয়েছে। সে প্রমাণটি হলো 'ঘুম'। মানুষ যখন ঘুমায় তখন সে হয়ে যায় মৃত মানুষের মতো, তার কোনো চৈতন্য থাকে না এবং জাগতিক কোনো ক্রিয়াকর্ম করার ক্ষমতা থাকে না। এই মৃতবৎ অবস্থা থেকে অচিরেই সে জেগে ওঠে এবং জাগতিক কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এটাই জীবন, আর এভাবেই জাগতিক জীবন ও মৃতবৎ অবস্থার চক্র চলতে থাকে। জীবনের এ অবস্থা দেখেও সহজেই অনুমান করা যায়, মৃত্যুর পর মানুষের আত্মার পুনরুজ্জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। জাগতিক জীবনের সমাপ্তির পর প্রত্যেক মানুষকে কালহাশরের ময়দানে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়ে জীবনের সব ক্রিয়াকর্মের হিসাব দিতে হবে। জবাবদিহি করতে হবে। ৬১ নম্বর আয়াতে মানুষের সব জীবনাচরণ ফেরেশতাদের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ করার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে দুইজন ফেরেশতাকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন, তারা সেই ব্যক্তির সৎ কাজ ও অসৎ কাজগুলো সারা জীবন ধরে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। সেই ফেরেশতা তার প্রাণের রক্ষণাবেক্ষণও করেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রুহ কবজ করার সময় কিছুসংখ্যক ফেরেশতা আজরাইল (আ.)-এর সাহায্যকারী থাকেন। তাঁদের সাতজন আজাবের ফেরেশতা এবং সাতজন রহমতের ফেরেশতা। আজরাইল (আ.) রুহ কবজ করে নেককার বান্দার রুহ রহমতের ফেরেশতার হাতে এবং পাপাচারি বান্দার রুহ আজাবের ফেরেশতার হাতে প্রদান করেন। ৬২ নম্বর আয়াতে হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের কথা বলা হয়েছে। সেদিন সর্বময় কর্তৃত্ব থাকবে একমাত্র আল্লাহর হাতে। অর্থাৎ সেদিন কারো কোনো স্বাধীনতা থাকবে না। কারো কোনো কিছু লুকানোর বা কায়দা-কৌশল অবলম্বন করার সুযোগ থাকবে না। আপন গতিতে আল্লাহর প্রকৃতি চলবে, একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর থাকবে, আর কারো কোনো ইচ্ছার ক্ষমতা থাকবে না। ৬৩ নম্বর আয়াতে মানুষের বাস্তব জীবন থেকে একটি উদাহরণ টানা হয়েছে। মানুষ তো চরম বিপদের মুহূর্তে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকে, সুতরাং জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা যে এক আল্লাহ এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। মুশরিকরাও চূড়ান্ত পর্যায়ে এক আল্লাহকেই স্বীকার করে।
-গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.